সম্পদের ভাগাভাগির কারণে বাবার লাশ দাফন করতে দেয়নি সন্তানেরা। প্রায় ২দিন লাশ আটকে রাখার পরে স্থানীয়রা বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। অপরদিকে, মৃতের লাশ দাফন নিয়ে এলাকাবাসী বাধা প্রয়োগ করেন। তবে, এসব ঘটনার কারণে মৃতের লাশ নিয়ে উধাও হয়ে যান অপর এক সন্তান।
সোমবার (৯ মে) ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার সাভারের ছায়াবীথি এলাকার বিক্রমপুর গলিতে।
জানা গেছে, ওই এলাকার প্রায় ৯টি বাড়ির মালিক আবুল খায়ের গত ১মাস যাবৎ কিডনি জণিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৮ মে বিকেল প্রায় ৪টার দিকে হাসপাতালের আইসিওতে মৃত্যু হয় তার। এরপর হাসপাতাল থেকে লাশ আনা হয় সাভারের নিজ বাড়িতে। আবুল খায়েরের ২য় স্ত্রী ফাতেমার ৪ মেয়ে সন্তান শাহনাজ (৪০), কিরণ (৩৮), লাকী (৩৫) ও রিজনী (৩২) বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকার শ্যামলী থেকে সাভারে আসেন লাশ দেখতে। এ সময় মৃত আবুল খায়েরের ১ম স্ত্রী নুরুন্নাহার (৬০) ও তার সন্তান আব্দুস সালাম (৪২), নিলুফা (৪০), আবু কালাম (৩৬), স্বপন (৩০) ও ইমন (২৮) বাবার লাশ দেখতে বাধা দেন ২য় স্ত্রীর সন্তানদের। লাকী ও অন্যান্য বোনেরা ৯ মে সকালে স্থানীয় একটি স্কুলের মাঠে নামাজে জানাজায় গিয়ে সম্পত্তির ভাগ না দিলে লাশ কবর দিতে বাধা দেন। লাকী পুলিশের পরিসেবা ৯৯৯-এ কল করে বাবার লাশ দেখতে আকুতি জানায়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এলে লাকী ও তার বোনেরা জানায় যে, বাবার সম্পত্তির ভাগ না দিলে তারা লাশ দাফন করতে দেবে না। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে বসে সমাধানের আশ্বাস দেন স্থানীয়রা।
এরপর দুপুরের দিকে আবুল খায়েরের লাশ নিজ বাড়ির পাশে মসজিদের আঙ্গিনায় দাফনের প্রস্তুতি নেয় পরিবার। এ সময় বিভিন্ন অভিযোগ তুলে লাশ দাফনে বাধা দেন এলাকার লোকজন। এ সময় মৃতের জন্য খোঁড়া কবরটিও এলাকার লোকজন মাটি দিয়ে ভরাট করে দেন।
লাকী আক্তার জানান, বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে সাভারে আসি। সৎ ভাই-বোনেরা আমার বাবার লাশ দেখতে দেয়নি। সাভারে আমার বাবার ৯ টি বাড়ি রয়েছে। তিনি একটি মসজিদও নির্মান করেছেন। আমাদের সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বাবার লাশ দাফন করতে বাধা দেই। পরে স্থানীয়রা সু-বিচারের আশ্বাস দিলে আমি তা মেনে নিই।
মৃতের ছেলে আব্দুস সালাম জানান, আমার বাবা মৃত্যুর আগে সকল সম্পত্তি আমার মায়ের নামে লিখে দিয়ে গেছেন। তবুও আমি ও আমরা ওই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবোনা। এ কথা বলার পরও তারা বাবার লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে। যে কারণে ২ দিনেও লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে পারিনি।
আব্দুস সালামের ছোট ভাই ইমন জানান, সৎ বোনদের সম্পত্তির ভাগাভাগির ব্যাপারটি সমাধান না করা পর্যন্ত তারা লাশ দাফন করতে দেয়নি। তাই বাবার লাশ নিয়ে আমার আরেক ভাই স্বপন হিমায়িত এ্যাম্বুলেন্সে করে মিরপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সাভার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রমজান আহমেদ জানান, আবুল খায়ের প্রায় ১০-১২ বছর যাবৎ এলাকা মসজিদ দিয়ে মাদক ব্যবসাসহ অনেক অনৈতিক কাজ করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে। যে কারণে এলাকাবাসী তাঁর প্রতি ক্ষুদ্ধ। মসজিদটি তিনি ব্যক্তিগত মসজিদ হিসেবে গণ্য করতেন। মসজিদের পাশে মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়ার ব্যাপারে এলাকাবাসী বাধা প্রয়োগ করেছেন। এখানে মৃতকে দাফন করে মাঝার তৈরী করে আরো অনৈতিক কাজ হওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। তাই আবুল খায়েরকে অন্যত্র কবর দিতে পরিবারকে অনুরোধ করেছি।
সাভার মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর রুবেল আহমেদ বলেন, জনৈক লাকী আক্তার ৯৯৯-এ কল করেন। আমি ঘটনাস্থলে এসে দেখি বাবার লাশ দাফনে বাধা দিচ্ছেন এক পক্ষের সন্তানেরা। পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয়রা বিষয়টির মিমাংসা করে দেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আবুল খায়েরের লাশ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার সন্তান স্বপন। তবে, পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাশ অন্যত্র দাফনের ব্যবস্থা করছেন তারা। #