বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলাম দাম সহনীয় পর্যায় রাখতে। কিন্তু ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আমার অনুরোধ রাখেননি। তাদের অনুরোধ করা আমার বড় ভুল হয়েছে।
সোমবার (৯ মে) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তেলের দাম বৃদ্ধি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের ব্যর্থতা ঠিক, কারণ বলেছিলাম রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়াবেন না। কিন্তু তারা ঈদের সাতদিন সেই কথা রাখেননি। আমাদের সব অর্গানাইজেশনকে বলেছি, যে দাম নির্ধারিত আছে সেটি যাতে ঠিক রাখা হয়।
তেল সিন্ডিকেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তেলের সিন্ডিকেটের কোনো নমুনা পাইনি। রিটেইলার, ডিলাররা সুযোগটা নিয়েছে। আমরা চেষ্টা করব রিটেইলার থেকে ডিলার পর্যায়ে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে। লাখ লাখ ডিলারের সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই।
ঈদের আগে বাজারে তেল না পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ দাম ঠিক করেছিলাম। চিটাগাং পোর্টে যে প্রাইসে মাল রিলিজ হয় সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়। ২০ মার্চ আমরা অনুরোধ করায় সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে। তখন ৮ টাকা দাম কমানো হয়। তখন আমরা রমজান মাসে তেলের দাম না বাড়াতে অনুরোধ করেছিলাম, তারা একমত হয়েছিলো। মানুষের কথা বিবেচনা করে দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম। তাদের বলা হয়েছিলো রমজানের পর বসব। যারা বড় প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক তথ্য নিয়েছি। কিন্তু পথে ঝামেলা হয়েছে। রিটেইলার ও ডিলার কিন্তু জানত রমজানের পর বেড়ে দাম ফিক্সআপ হবে।
তিনি বলেন, ঈদের কয়দিন আগে থেকে অনেকে তেল ধরে রাখল। কারচুপিটা এখানে হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যেন এগুলো না হয় সেটি দেখতে হবে। আমার মনে হচ্ছে তাদের অনুরোধ করা ঠিক হয়নি যে রমজানে তেলের দাম না বাড়ানোর কথাটি বলা, কারণ তাদের যদি একটি দাম বৃদ্ধি করে দিতাম তাহলে এটি হতো না।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গেলো কয়েকদিন ধরেই তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাগে আন্তর্জাতিকভাবেই যে তেলের দাম বেড়েছে, প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে তেলের দামের একটি তুলনামূলক চিত্র কেউ দেখাচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে তেলের দাম কী পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা কেউ বলছেন না। এমনকি আজকে বাজারে যে তেলটা বিক্রি করছে, সেই তেলটা দুই মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করানো হয়েছে। সেই তেলটা কী দামে আমদানি হয়েছে সেটাও কেউ জানাচ্ছেন না। এগুলো যদি জানানো যেতো... দাম বেড়েছে এটা সত্য, সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটাও সত্য। কিন্তু এর পেছনে আরেকটা সত্যও আছে। সেই সত্যটা যদি জানানো যেতো, তাহলে মানুষ বুঝতে পারতেন সমস্যাটা কোথায়।
মন্ত্রী বলেন, আমরা মনিটর করব। ব্যবসায়ীদের চাপ দিতে চাই না। মানুষের ক্রাইসিস হলে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। তবে মাঝে অনেকে সুযোগ নিয়েছে, কারণ তারা জানে ঈদের পর দাম বাড়বে। সেজন্য তারা মজুদ করে রেখেছিলো। রিটেইলার অপরাধ করলে সংগঠনেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ নিজে তেল উৎপাদন করে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চাহিদা মাত্র ১০ শতাংশ তেল দেশে উৎপাদন হয়, তাও বাদাম তেল, সরিষার তেলসহ সব মিলিয়ে। এই ৯০ শতাংশ নির্ভরযোগ্যতাই আমদানির উপরে।
তেলের দাম কবে সমন্বয় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আগে এক দেড় মাসের মধ্যে বসতাম। যখন তেলের দাম কমানোর সুযোগ থাকবে তখন আমরা আবার বসব।