প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৫৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ইটভাটার দূষণে খুলনার পাইকগাছায় বোয়ালিয়া সরকারী বীজ উৎপাদন খামারের বোরো ধান মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামার কর্তৃপক্ষ। নিয়মিত ধানের পরিচর্যার পরও ভাটার দূষণের কারণে বোরো বীজ ধান উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এলাকার পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণ এ ইটভাটা। ভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।
খামার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে খামারের ৫৫ একর জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ একর জমিতে ব্রিধান-৭৪, ১৩ একর জমিতে ব্রিধান-৬৭, ৫ একর জমিতে বিনা-২৪ ও ২১ একর জমিতে বিনা-৫০। খামার সংলগ্ন ইটভাটা এফএফবি ও এমএমবি ব্রিকস অবস্থিত। ইটভাটা সংলগ্ন খামারের ২৯ একর জমির আবাদ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপকূলের লবণাক্ততা ভাটার কালো ধোয়া, ছাই, বালি ও তাপের কারণে খামারের ধান গাছ ঝলসে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ধান সব পেঁকে গেছে। তবে ক্ষেতে গিয়ে ধানের শীষ ধরলে দেখা যায় ধান সব চিটা হয়ে গেছে বা অপুষ্ট রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিধান-৬৭ জাতের বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্র ছিল ১৭ টন ৯৬০ কেজি। সেখানে বীজ উৎপাদন হতে পারে ৮-১০ টন আর ব্রিধান-৭৪ জাতের বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্র ছিল ২২ টন ৪৮০ কেজি। সেখানে বীজ উৎপাদন হতে পারে ১০-১২ টন। যা খামার কর্তৃপক্ষ ধারনা করছেন। ভাটার কালো ধোয়ায় ধান ও গাছের পাতায় কালো রঙের আবরণ পড়েছে, তাপে পাতা ও ধান ঝলসে গেছে।
এমনকি খামারে অবস্থিত নারকেল গাছের পাতাগুলি কালো আবরণে ঢাকা পড়ছে। উপকূলের লবণাক্ত এলাকায় বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামার অবস্থিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসকে প্রতিরোধ করে খামারের ফসল উৎপাদন করতে হয়। তার উপর ভাটা সংলগ্ন দুটি ইটভাটার দূষণের কারণে খামারের ফসল উৎপাদনে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এফএফবি ব্রিকস এর পরিচালক আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস বলেন, ফার্মের ম্যানেজারের সাথে আমার কথা হয়েছে। ধান কাটা পর্যন্ত ধুলো বালি উড়ে যাতে ক্ষেতে না পড়ে তার জন্য একটা ব্যবস্তা করার দাবী করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে ফার্মের পাশ দিয়ে উঁচু করে নেট টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ধুলোবালি যাতে উড়ে না যায় তার জন্য প্রতিদিন পানি স্প্রে করা হচ্ছে। তাছাড়া চলতি মৌসুমে ১৫ দিনের মধ্যে ভাটার ইট পোড়ানো শেষ হয়ে যাবে।
বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. হারুন জানান, বোরো মৌসুম শুরুতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা যায়। অতিরিক্ত পরিচর্যা করায় বোরোর আবাদে পরাগয়ন পর্যন্ত খুব ভালো ছিল। ধানে অর্ধেক দুধ আসার পর চাউল পুষ্ট হওয়ার আগেই ভাটায় নির্গত কালো ধোয়া, অতিরিক্ত তাপ ও বালিতে ধান কুকড়ে চিটায় পরিণত হয়। ধান পাকার আগেই দূষণে ধান পেকে গেছে। ক্ষেতে নেমে শীষ ধরে দেখলে বুঝা যায় অধিকাংশ ধান চিটা ও অপুষ্ট।
বিগত বোরো মৌসুমেও ইটভাটার দূষণের কারণে উৎপাদন শতভাগ সফল হয়নি। খামারে বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রার ৮৪ শতাংশ বীজ উৎপাদন হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ভাটার দূষণের কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম বীজ উৎপাদন হবে বলে তিনি ধারনা করছেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানব সৃষ্ট ইট ভাটার দূষণ থেকে খামারকে সুরক্ষা রাখতে ইতিমধ্যে খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন বলে তিনি জানান।