সরকারী নিয়ম না থাকলেও নিজেদের করা নিয়মের মাধ্যমে জন্মনিবদ্ধন করাতে হলে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ বাধ্যতামূলক করেছেন বরিশাল জেলার কয়েকটি পৌরসভা ও উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা।
নতুন কিংবা পুরনো জন্মসনদের জন্য আবেদন করতে হলে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের টোকেন কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সিলসহ ট্যাক্স পরিশোধ লিখে স্বাক্ষর করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অসংখ্য ভূক্তভোগীরা এ অভিযোগ করেছেন। তবে একাধিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন, জন্মনিবন্ধনের সাথে হোল্ডিং ট্যাক্সের কোন সম্পর্ক নেই। জন্মনিবন্ধনে কোন সচিব কিংবা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এরমধ্যে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গৌতম চন্দ্র পাল আগে ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করার পর জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করেছেন। ঘটনার সত্যতাও স্বীকার করেছেন সচিব গৌতম চন্দ্র পাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশে শিশুর জন্ম থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সরকারী নিয়মানুযায়ী জন্মনিবন্ধনের কোন ফি গ্রহণ করা হয়না। তবে শিশুর পাঁচ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও পাঁচ বছরের উপরে সব বয়সের জন্য ৫০ টাকা ফি নেয়ার নিয়ম করে দিয়েছে সরকার।
রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদে জন্মসনদ নিতে আসা একাধিক ব্যক্তিরা জানান, বাৎসরিক হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়ে রশিদ কাটার পর ওই ট্যাক্স টোকেট জন্মনিবন্ধনের আবেদনের সাথে গেঁথে দিতে হয়। তা না হলে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গৌতম চন্দ্র পাল জন্মনিবন্ধন করেন না। এমনকি প্রতিটি ট্যাক্স, রেট ও বিবিধপ্রাপ্তি রশিদ বইতে বসত বাড়ির বাৎসরিক মূল্যের হোল্ডিং ট্যাক্সের ওপর দুইশ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। একাধিক দিনমজুর অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানদের স্কুলে জন্মসনদ জমা দেয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় সচিবের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেই তাদের জন্মসনদ নিতে হয়েছে।
রাজিহার ইউনিয়ন ছাড়াও জন্মনিবন্ধন পেতে হলে হোল্ডিং ট্যাক্স বাধ্যতামূলক করেছে বাকাল ও গৈলা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। এ ব্যাপারে রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গৌতম চন্দ্র পাল অকপটে বলেন, জন্মনিবন্ধনের আবেদনের সাথে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ দিতে হয়, তা না হলে আমরা হোল্ডিং নাম্বার কিভাবে দিবো, সেজন্যই হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলার বাগধা ইউনিয়নে হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা না নিয়ে কিভাবে জন্মনিবন্ধন করা হয়, সে বিষয়ে বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, জন্মনিবন্ধনের সাথে হোল্ডিং ট্যাক্সের কোন সম্পর্ক নেই। এটা (জন্মনিবন্ধন) সম্পূর্ণ একটা ভিন্ন জিনিস। হোল্ডিং ট্যাক্স আলাদা বিষয়। তিনি আরও বলেন, জন্মনিবন্ধনের জন্য আলাদা কোন হোল্ডিং ট্যাক্সের কাগজ দরকার হয়না। শুধুমাত্র ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নেয়ার সময় হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স বাধ্যতামূলক।
সূত্রমতে, পূর্বে হোল্ডিং ট্যাক্স সর্বনিন্ম ৩৩ টাকা থেকে ৫০০টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো। এ বছর সর্বোচ্চ ১০০ টাকা নির্ধারন করে দিয়েছে সরকার। ওই হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা জনগুরুত্বপূর্ণ অথবা বাঁধ নির্মান কিংবা গ্রাম পুলিশের ভাতার কাজে ব্যবহার করা হয়।
জন্মনিবন্ধনের আবেদন করতে বাধ্যতামূলক হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের বিষয়ে উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও দেখেছি রাজিহার ইউনিয়ন থেকে জন্মনিবন্ধনের আবেদনের সাথে হোল্ডিং ট্যাক্সের একটা রশিদ যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাসেম বলেন, জন্মনিবন্ধনের সাথে হোল্ডিং ট্যাক্সের কোন সম্পর্ক নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে সংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সুপারিশ করা হবে।