#মার্চ মাস বাঙালি জাতিকে সঠিক পথ দেখায়: মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার। #বঙ্গবন্ধুকে মানুষ অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন: ড. মো. আফজাল হোসেন। #বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আজীবন হৃদয়ে ধারণ করব: আফছার খান সাদেক।
বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবোজ্জ্বল মাস হচ্ছে মার্চ মাস। এই মাসকে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত গর্বের সাথে বলে এটা আমাদের স্বাধীনতার মাস। কারণ এই মার্চ মাসের ২৬ তারিখে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৬৪২তম পর্বে রোববার (১৩ মার্চ) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আফজাল হোসেন, লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, বহির্বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠাতা আফছার খান সাদেক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবোজ্জ্বল মাস হচ্ছে মার্চ মাস। এই মাসকে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত গর্বের সাথে বলে এটা আমাদের স্বাধীনতার মাস। কারণ এই মার্চ মাসের ২৬ তারিখে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। একটা জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় যে প্রাপ্তিটা হচ্ছে তার স্বাধীনতা। সুতরাং এই স্বাধীনতার ঘোষণাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সেজন্যই আমাদের অনেক কবি, সাহিত্যিক বলেছেন যে, সেই থেকে স্বাধীনতা কথাটি আমাদের হয়ে গেলো এবং আমরা সেই থেকে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সাড়া বিশ্বে পরিচিত লাভ করলাম। ইতিহাসের একটা কথা আছে যে, একটি জাতি রাষ্ট্রকে যখন সামনে দিকে যেতে হয়, যদি উন্নত সমৃদ্ধির পথে এগুতে হয় তাহলে তার যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে সেই ইতিহাসটি তার বাতিঘর হিসেবে কাজ করে, তার লাইট হিসেবে কাজ করে। এই বাতিটার আলো যত শক্তিশালী হয় এবং এই বাতিটার আলো যতদূর প্রসারিত হয় ততই কিন্তু সেই রাষ্ট্র এবং জাতির পথচলা সহজ হয়। সেই জায়গা থেকে আমরা বলতে পারি মার্চ মাস আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বাতিঘর। এই বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিন এই বাঙালি রাষ্ট্রকে এই মার্চ মাস পথ দেখাবে সামনে এগুবার জন্য। বাংলাদেশের জন্য সঠিক পথ কোনটি সেটি দেখাবে এই মার্চ মাস।
ড. মো. আফজাল হোসেন বলেন, মার্চ মাসের প্রত্যেকটি দিনই আমাদের প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটির প্রত্যেকটি বাক্য একেকটি বাণীর মতো। এই ভাষণটি বিশ্লেষণ করলে হাজারো নির্দেশনা পাওয়া যাবে। এতো সংক্ষেপে সেই ১৮ মিনিটের বক্তব্যের মধ্যে পুরো মুক্তিযুদ্ধে নির্দেশিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা আসলেই অবাক করা বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে মানুষ অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। কারণ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা প্রত্যেকটি মানুষ অন্তর দিয়ে মানতেন। বঙ্গবন্ধু সমগ্র জীবন ধরেই প্রতিটি কর্মকান্ডের নেপথ্যে ছিল শিক্ষা ও মানব সেবা এবং মানুষের কল্যাণ। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের সোনার মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা শেষ করা যায় না। কারণ, বঙ্গবন্ধু একটি পংক্তি বা একটি অধ্যায় নন, তিনি একটি সমগ্র ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, আদর্শ ও নীতির প্রতি প্রতি জনগণের আস্থা ছিল শতভাগ। যে কারণে প্রতিটি মানুষ নিজেকে একজন বিপ্লবী হিসেবে তৈরি করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই জনগণ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে। শুধু রাজনৈতিক সংগ্রামে নয়, মাত্র সাড়ে তিন বছরে রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি এমন কিছু পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন, যা তার দূরদর্শী চিন্তা থেকে উৎসারিত। তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা বিনির্মাণের। সেই লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক কাযক্রমের বাস্তবায়নও করছিলেন।
আফছার খান সাদেক বলেন, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসটি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে নানাভাবেই স্মরণীয়। এই মাসেরই ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই স্বাধীনতার সংগ্রামে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ তাঁর সেই অসাধারণ ভাষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, একটি অলৌকিক বাক্য। তিনি তর্জনী তুলে পরিষ্কার বলেছিলেন, ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ একটা আঙ্গুলের ইসারায় ৭ কোটি মানুষকে একত্রিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী) ময়দানে ১০ লাখ লোকের বিশাল জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তা সার্বজনীন ও সর্বজন স্বীকৃত। এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমগ্র পূর্ব-বাংলার অধিকার বঞ্চিত জনগণকে পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার, বৈষম্য, নিপীড়ন, শাসন-শোষণের যাতাকল থেকে বের হয়ে স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানান। এ ভাষণটি ছিল জাতির পিতার এক অলৌকিক ভাষণ। যে ভাষণে পূর্ব-বাংলার সাত কোটি জনগণ ঐক্যবদ্ধ ছিল। তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা, বিশ্বনেতা, রাজনীতির কবি, রাজনীতির বরপুত্র, যার ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ, বিরল ও অদ্বিতীয়। তাই সব দলের উচিত জাতির পিতাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া। সবার ঊর্ধ্বে রাখা। যিনি না হলে বাংলাদেশ নামে ভূখণ্ডের জন্ম হতো না। আজ আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না।