মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে মাসে চাঁদাবাজি আড়াই কোটি টাকা!
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২, ১১:১৯ পিএম আপডেট: ১৩.০৩.২০২২ ২:০৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিসি’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি না দিলে মেলে না ফেরির টিকিট। এ হিসেবে সেখানে মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। টার্মিনাল সুপারইনটেনডেন্ট ইজ্জত আলী, রবিউল হাসান তাহেরি ও মাজহারুল ইসলাম এ চক্রের মূল হোতা বলে জানা গেছে। তাদের নেতৃত্বে অধস্তন কর্মীরা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে থাকেন। এ টাকার ভাগ বিআইডব্লিউটিসির প্রধান কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা, সিবিএ নেতা, ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের কতিপয় নেতা এবং স্থানীয় প্রশাসন ভাগ পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে তিন টনের কম মালবাহী ট্রাকের ফেরি ভাড়া ৭৪০ টাকা; ৩ থেকে ৫ টনের গাড়ির জন্য ১০৬০ টাকা এবং ৫ টনের বেশি হলে ভাড়া ১৪৬০ টাকা। কিন্তু নির্ধারিত টাকায় কখনো পাটুরিয়া ঘাটে ফেরির টিকিট মেলে না। ৭৪০ টাকার টিকিটের জন্য চালকদের গুণতে হয় ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা; ১০৬০ টাকার জায়গায় ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং ১৪৬০ টাকার টিকিটের জন্য গুণতে হয় ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন তিন শিফটে এ ঘাট দিয়ে কম বেশি ২ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান পার হয়। প্রতিটি গাড়ি থেকে গড়ে ৪০০ টাকা বেশি নেওয়া। এ হিসেবে দিনে এখানে ৮ লাখ টাকা এবং মাসে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের ম্যানেজ করতে প্রতি শিফট থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নেন শিফট ইনচার্জসহ সিন্ডিকেট। অর্থাৎ ম্যানেজ ফান্ডে প্রতিদিন নেওয়া হয় ৯০ হাজার টাকা। বাকি টাকা কর্মরতদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়। তবে বড় ভাগ পান এই তিন কর্মকর্তা।

এছাড়া ম্যানেজার, এজিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও একটা হ্যান্ডসাম ভাগ পান বলে জানা গেছে। এ কারণে সবাই মুখে কুলুপ এটে থাকেন। এসব চাঁদাবাজির টাকায় নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রবিউল হাসান তাহেরি, ইজ্জত আলী ও মাজহারুল ইসলাম। ঢাকা শহর এবং এর আশপাশে বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়ায় বাড়ি ও পেট্রোল পাম্পসহ বিপুল সম্পদ করেছেন তারা। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। দুদক তদন্ত করলে সবই বের হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। টাকার জোরেই তারা এখানে ৫ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত চাকরি করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বদলির উদ্যোগ নিলেই টাকার ব্যাগ নিয়ে দৌড়ান এই তিন কর্মকর্তা। সাধারণত চাকরির বয়স ২ থেকে ৩ বছর হলেই কর্মরতদের বদলি করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এই তিন কর্মকর্তা।

যশোরের ট্রাক চালক আমিনুর রহমান ভোরের পাতাকে বলেন, ‘তার ট্রাকের সরকার নির্ধারিত ফেরি ভাড়া ১০৬০ টাকা। তিনি টিকিট কিনেছেন ১৫০০ টাকায়। অর্থাৎ তার কাছ থেকে ৪৪০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রথম দিকে তার মালিক বাড়তি টাকা দিতে চাইতেন না। পরে একদিন তিনি গাড়ির সাথে আসেন এবং তিনি নিজেই টিকিট কাটতে যান। পরে তিনি বাড়তি টাকার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।’

এই পরিবহন শ্রমিক বলেন, ‘তিনি মাসে ৬ থেকে ৭টা ট্রিপ দেন। প্রতি ট্রিপে ফেরি ভাড়া বাদদ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়তি গুণতে হয়। এটা মালিকের ব্যবসার জন্য একটা বড় ধাক্কা। আসলে তারা বিআইডব্লিউটিসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।’

আরেক ট্রাক চালক জিল্লু বলেন, ‘এখানে বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা সবাই জানে। অনেকবার পত্রিকায় এসেছে বিষয়টি। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এই এলাকার যাকে জিজ্ঞেস করবেন, সেই বলবে বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা। ওই যে পুলিশ দেখছেন, তারাও বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা জানেন। তাহেরি, মাজহার ও ইজ্জত আলীকে বদলি করলে বাড়তি টাকা নেওয়া বন্ধ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।’

কাভার্ড ভ্যান চালক হান্নান বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিসির সব ঘাটে বাড়তি টাকা দিয়ে ফেরির টিকিট কিনতে হয়। পাটুরিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। তিনি ১০ বছর গাড়ি চালানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, পাটুরিয়ায় একদিনও তিনি সরকার নির্ধারিত টাকায় ফেরির টিকিট পাননি। বিআইডব্লিউটিসির কর্মীদের চাহিদার চেয়ে ১০ টাকা কম হলেও ফেরির টিকিট পান না তারা।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাটুরিয়া ঘাট এলাকার একজন ট্রাক মালিক বলেন, ‘তাদের কাছ থেকেও বাড়তি টাকা নেওয়া হয়। অতিরিক্ত টাকা না দিলে টিকিট দেন না বিআইডব্লিউটিসির লোকজন।’

অভিযুক্ত রবিউল হাসান তাহেরি ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমার নামে যেসব অভিযোগ করা হয়ে তা সবকিছুই মিথ্যা। আমাদের কোন সিন্ডিকেট নেই। সরকার নির্ধারিত যে ভাড়া দেওয়ার কথা তাই দেন গাড়ির মালিকরা।’

ইজ্জত আলী বলেন, আমরা কোন ভাড়া বেশি নেওয়া হয়না। প্রতিটি গাড়ি যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাছাড়া প্রতিটি গাড়িতে যে মালামাল থাকে আমরা সেসব মালবাহী গাড়ি থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে (টন অনুসারে) মূল্য নেওয়া হয়।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গাড়ি দেখাশুনা করি। কয়টা গাড়ি ফেরী দিয়ে আসে আর যায় তাড়া আমার কোন কাজ নাই। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ হয়েছে তা মিথ্যা-বানোয়াট।’

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আপনার কাজ থেকে অভিযোগগুলো জানতে পারলাম। কোন অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার যা বেতন দেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]