কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স ৪ মাস ৬ দিন পর ফের খোলা হয়েছে। এরপর গণনা করে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও স্বর্ণ ও রূপাসহ বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও পাওয়া গেছে।
দিনভর গণনা শেষে শনিবার (১২ মার্চ) রাত পৌনে ৯টার দিকে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।
এর আগে এদিন সকালে মসজিদের ৮টি দানবাক্স খোলা হয়। দানবাক্সগুলো খোলার পর টাকাগুলো প্রথমে ছোট-বড় ১৫টি বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনার কাজ।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল ইসলাম সরকারসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকা গণনা কাজ তদারকি করেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার জানান, দানবাক্সগুলো খোলার পর টাকাগুলো গুনে নগদ ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা পাওয়া যায়। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। আর যে স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে তা আগের স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে যোগ করে দানের বাক্সে রেখে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও দানে পাওয়া গবাদিপশু ছাগল, হাঁস-মুরগি প্রতি সপ্তাহেই নির্ধারিত দিনে নিলামে বিক্রি করা হয় বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর পাড়ে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে নতুন তিনটিসহ মোট ৮টি লোহার দানবাক্স রয়েছে। প্রতি ৩ মাস পরপর এসব বাক্সগুলো খোলার রেওয়াজ রয়েছে।
তবে করোনা মহামারিতে ৪ মাস ছয় দিন পর শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এসব দানবাক্স খোলা হয়। বরাবরের মতোই এসব বাক্সে টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্যালঙ্কার মেলে।
এর আগে গত বছরের ৬ নভেম্বর এসব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কারও পাওয়া যায়।
জনশ্রুতি আছে, কোন এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝামাঝি প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী জায়গায় জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।
মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব ধর্ম-বর্ণের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পিরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশ-বিদেশের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। এ মসজিদে মানত কিংবা দান-খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে।
নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন।বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে মসজিদটিতে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে।
এ এসব বিপুল অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি। এ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব অর্থ মসজিদ কমপ্লেক্স, মাদরাসা ও এতিম খানার উন্নয়নের পাশাপাশি অসহায়-দুস্থ, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের সেবা এমনকি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়ে থাকে।
মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম শওকত আলম বলেন, খরচ বাদে বাকি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়।
পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম বলেন, পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সকে ঘিরে এখানে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে মসজিদ কমপ্লেক্স আরও দৃষ্টিনন্দন হবে।