রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর চর কর্ণেশন মৌজার ৫ একর জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছে স্হানীয় ভূমি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলো উজানচর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তৎকালীন তহশিলদার ইলিয়াস হোসেন ও তার পিয়ন আব্দুর রব এবং দৌলতদিয়ার সোরাপ মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা প্রভাবশালী মোসা মন্ডল (৬০) ও তার সহযোগি আ. ছালাম শেখ। তবে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভুক্তভোগী ব্যাক্তি উপজেলার চর দৌলতদিয়ার বাসিন্দা মো. হিলাল শেখ (৭০)। তিনি এ বিষয়ে রাজবাড়ীর দেওয়ানী আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের ও গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল ইসলামের নিকট গত ৬-১২-২০২১ তারিখে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তফসিলি জমিটি উপজেলার চর কর্ণেশনা মৌজার এস. এ ২০৯ নং খতিয়ানভূক্ত আর এস ৪৭৫ যাহা বি এস ১নং খতিয়ানভূক্ত এবং ২১৩ নং খতিয়ানভূক্ত আর এস ৪৩৮ ও ৪৪৮ নং দাগভূক্ত। এর মালিক যৌথভাবে ফরিদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা মোছা. বুরকি খাতুন, মানিকগঞ্জের সামসুদ্দিন মল্লিক ও মনো মল্লিক। তাদের নামে রেকর্ডভূক্ত থাকা অবস্থায় জমিটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বি.এস রেকর্ডে ১ নং খতিয়ান ভূক্ত হয়। মৌজাটি ৭০, ৮০ ও ৯০ এর দশকে তিনদফা নদীতে ভাঙ্গে ও পুনরায় জেগে ওঠে। পরবর্তীতে ওই মৌজাটি চাষাবাদের উপযোগী হলে এস. এ রেকর্ডভূক্ত স্ব স্ব জমির মালিকরা ভোগ-দখল করতে থাকেন।
এদিকে উপজেলার উজানচর ভূমি অফিসের তৎকালীন তহশিলদার ইলিয়াস হোসেন ও তার পিয়ন আব্দুর রব উভয়ের যোগসাজশে ১নং খতিয়ান ভূক্ত উক্ত নালিশী জমির মধ্যে হতে তাদের ৪ জন স্বচ্ছল নিকট আত্মীয়ের নামে ২ একর জমি অবৈধ পন্থায় বন্দোবস্ত নেন। বন্দোবস্ত প্রাপ্তরা হলো তহশিলদার ইলিয়াস হোসেনের শশুড় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুর রহমান শেখ, শ্বাশুড়ি জাহানারা বেগম এবং পিওন আব্দুর রবের ছেলে লিটন সেখ ও পুত্রবধূ লিমা বেগম।
তবে এ বন্দোবস্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে রাজবাড়ীর যুগ্ম জজ আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। যাহার নং (x।। D.c-২১/২০০৭-০৮) ও (x।। D.c-২৪/২০০৭-০৮)।
সূত্র মতে, চর কর্ণেশন মৌজার এস.এ রেকর্ডভূক্ত ৫ একর জমির মালিকগন জমির প্রতিবেশী চর দৌলতদিয়ার মো. হেলাল উদ্দিন শেখকে প্রথমে বর্গা চাষী এবং পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তাকে ওই জমি নিয়ে চলমান মামলা পরিচালনা ও জমির ভোগ-দখলের জন্য আমমুক্তার নিয়োগ করেন।
এদিকে স্থানীয় প্রভাবশালী মো. মোসা মন্ডল ও তার সহযোগি ছালাম শেখ সম্প্রতি হেলাল শেখকে মারধর ও প্রাননাশের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ৫ একরের ওই জমিটি বেদখল করে নেয়।
সরেজমিন আলাপকালে ভুক্তভোগী হেলাল শেখ বলেন, তহশিলদার ইলিয়াস হোসেন ও তার পিয়ন আব্দুর রব ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ভাবে তাদের নিকট আত্মীয়দের নামে নালিশী চরকর্ণেশন মৌজার ৫ একর জমির মধ্য হতে ২ একর জমি বন্দোবস্ত নেয়। পরবর্তীতে অন্যের নিকট সে জমি বিক্রি করে তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর তারা জমির দখল নিতে আসে। কিন্তু আমাদের বাঁধায় দখল নিতে পারেনি।
কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মোসা মন্ডলের নজর পড়ে ওই জমির উপর। তিনি ও তার সহযোগীরা আমাকে মারধোর করে এবং চরমপন্থীদের দ্বারা প্রাননাশের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ওইজমি দখল করে নেয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোসা মন্ডল বলেন, কর্ণেশনা মৌজায় আমার নামে ৮ একর ১৬ শতাংশ জমি সরকারীভাবে পত্তন নেয়া আছে। এসিল্যান্ড স্যারের নিকট আগামী শুনানিতে আমার সকল কাগজপত্র দেখাব।আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়।
অভিযোগের বিষয়ে উজানচর ইউনিয়নের সাবেক তহশিলদার ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমি ও আমার পিয়ন ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি।ভূমি বন্দোবস্তের জেলা ও উপজেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে আমার শ্বশুর - শ্বাশুড়ির যৌথনামে ১ একর এবং পিয়ন আঃ রবের ছেলে ও ছেলের বৌয়ের যৌথনামে ১ একর ভুমি বন্দোবস্ত দেয়। সে জমি বিক্রি করা হয়নি,অন্যের নিকট বর্গা দেয়া রয়েছে। হেলাল শেখের অভিযোগ মিথ্যা।
গোয়ালন্দ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অন্যের জমি জবরদখলের অভিযোগ প্রমানিত হলে অপদখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে।ভূমিহীন ছাড়া অন্য কারো মধ্যে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার কোন বিধান নেই। হেলাল শেখের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুতই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।