প্রকাশ: শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২, ৮:২৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পৌর শহরের গোবিন্দনগর মহল্লার কুলসুম বেগম। বিয়ের পর অভাব ছিলো সংসারের নিত্য দিনেরসঙ্গী। দীর্ঘদিন ধরে সংসারে অভাব অনটন এর সাথে যুদ্ধ করেছে সে। ১ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে সংসার বাড়তে থাকে। দিন দিন যখন তার পরিবারের অভাব বেড়েই চলেছিল, সমাজে ওই সময় তাদের ভালো কোন অবস্থান ছিল না। ছেলে মেয়েদের বেড়ে উঠার জন্য শিশু অধিকার, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে গুরুত্ব বুঝলেও ভালমত খাবার দিতে পারতেন না। তার স্বামী নুর নবী ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যিনি ছিলেন দিনমজুর। কাজ যেদিন পাওয়া যেত না সেদিন অর্ধাহারে অনাহারে দিন কেটেছে তাদের। ওই সময় ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝলেও সেটা করানো ছিল বিলাসিতার মতো।
২০১৬ তে কুলসুমের ৬ বছরের কন্যা শিশু উন্নয়ন সংস্থা “ওয়ার্ল্ড ভিশনের” শিশু হিসেবে নির্বাচিত হয়। সেই সুবাধে কুলসুম ওয়ার্ল্ড ভিশন থেকে আয় বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও গাভী পালনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পান। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের জীবনমান উন্নয়নে সংস্থার পক্ষ থেকে বিনামূল্যে একটি বকনা জাতের বাছুর প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় পতিত জমিতে কিভাবে সবজি চাষ করা যায় সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সেখানে উৎপাদিত পন্য পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে নিয়মিত বাজারে বিক্রি বিক্রি করতে শুরু করেন কুলসুম। বিনামূল্যে পাওয়া বকনা জাতের গরুর ২টি বাছুর জন্ম নেয়। শুরু হয় গরুর দুধ পাওয়া। পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মিটিয়ে দুধ বাজারে বিক্রি করে শুরু হয় নতুন আয়ের পথ।
কুলসুম বলেন, কষ্টের পর ওয়ার্ল্ড ভিশনের বদৌলতে আয়বর্ধক কর্মকান্ড পরিচালনার পর থেকেই আমার ছেলে মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি এখন সঞ্চয়ের গুরত্ব ভালভাবে জানি এবং নিয়মিতভাবে সঞ্চয় জমাই। আমাদের সঞ্চয়ের ৪০ হাজার টাকা এবং ৪৫ হাজার টাকা লোন ও দুধ বিক্রির আয় দিয়ে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ২৫ শতক জমি ইজারা নিয়ে আমন ধান চাষ করেছি। আমার স্বামী এখন আর অন্যের জমিতে কাজ করে না। প্রতি বছর ২৫ মন ধান পাই এবং এই ধান দিয়ে আমাদের ভাতের চাহিদা পূরণ হয়। করোনাকালীন সময়ে আমাদের নিজেদের করা আয় না থাকলে অন্যান্য মানুষের মত। আমাদের বাঁশের বেড়ার ঘর ভেঙ্গে নতুন টিনের ঘর তুলেছি। বর্ষায় আর আমাদের ঘরে পানি গড়িয়ে পরে না। বর্তমানে একটি থেকে আমাদের ৬টি গরু ও ২টি ছাগল রয়েছে। এখন আমাদের ভালো অবস্থান তৈরি হয়েছে। বিশ্বাস করি চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে মানুষের জীবনের শত বাধা অতিক্রম করা যায়। এভাবেই ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এলাকার হৃত-দরিদ্র পরিবারের শিক্ষা, শিশু অধিকার, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি, শিশু ও যুব ফোরাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সরকারের ঐকান্তিক সহযোগিতায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ঠাকুরগাঁও এপি ম্যানেজার লিওবার্ট চিসিম জানান, আত্ব-স্বাবলম্বী কুলসুমের পাশাপাশি প্রায় ১ হাজার ৫৪৬ হতদরিদ্র পরিবারকে সংস্থাটি সহায়তা করেছে এবং তারাও এখন স্বাবলম্বী । দারিদ্র বিমোচনে এরকম কার্যক্রম ভবিষতেও অব্যাহত থাকবে। সকল শিশুদের স্বপ্ন বির্নিমান ও মানসম্মত জীবন গঠনে সংস্থটি আরো জোড়ালো ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।
আতœবিশ্বাস এমনই একটি শক্তি যা দুর্বলকে সাহস যোগায়। শত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষকে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখায়। মানুষ যত খারাপ অবস্থাতেই পড়ুক না কেন সে যদি তার আতœবিশ্বাস ধরে রাখতে পারে এবং তার স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রম করে, তবে সে এই পরিস্থিতি থেকে এক সময়ে নিশ্চই বেরিয়ে আসবে। সাফল্য জন্মায় পরিশ্রমে এবং সেই সব ব্যক্তিদের আতœবিশ্বাসে যারা দূর্বলতাকে সফলতায় পরিণত করার সাহস রাখেন”। যেখানে ৩ বেলা ভরপেটে খেতে পাওয়া ছিল কুলসুমের কাছে স্বপ্নের মতো। প্রতিদিন বেঁচে থাকা ছিলো একটা যুদ্ধ। আজ সমাজে কুলসুমদের ভালো অবস্থান হয়েছে। অবশেষে দারিদ্রতা নামক দানবকে পরাজিত করেছে কুলসুম বেগম।