নওগাঁর পত্নীতলায় বোরো ধানের ক্ষতিকারক পোকা দমনে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব জৈব বালাই দমন পদ্ধতি বা পার্চিং পদ্ধতি। দিন দিন এ জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে চাষীরা এ পদ্ধতির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। একদিকে যেমন বিষমুক্ত পদ্ধতিতে পোকা দমন হচ্ছে অন্যদিকে, রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
এবার উপজেলায় রোপন হচ্ছে উন্নত ফলনশীল ব্রিধান ৫৮, ব্রিধান ৬৩ ব্রিধান ৮১,৮৪,৮৬,৮৯ জিরাশাইল, গোল্ডেন আতপ, কাঠারি, হাইব্রিড জাতের ধান রোপন হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পার্চিং মানে খেতে ডালপালা পুঁতে দেয়া। ফসলের জমিতে ডাল, কঞ্চি, বাঁশের খুঁটি এগুলো পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পাখি ক্ষতিকারক পোকার মথ, বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে।
মূলত ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা—এসব পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়। ফসলের পোকা দমনের এ পদ্ধতি বলতে গেলে ব্যয়বিহীন ও পরিবেশবান্ধব। ফসলের ক্ষেতে ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং দুটিই করা যায়। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং।
আর ধঞ্চে, অড়হর— এসব জীবন্ত গাছ জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগিয়ে দেয়া হলো লাইভ পার্চিং। প্রতি বিঘাতে অন্তত ৪/৫ টি বাঁশের আগা, কঞ্চি বা ডাল পুঁততে হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হয়।
ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত বলে তাঁরা জানান।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা চাষিদেরকে নিয়মিত পার্চিং ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি।
সরেজমিনে উপজেলার পুইয়া,কাঞ্চন, নাদৌড়,ফহিমপুর, পদ্মপুকুর মাঠ ঘুরে দেখা যায় পার্চিংয়ের দৃশ্য। এবিষয়ে কথা হয় নজিপুর ইউনিয়নের নাদৌড় গ্রামের কৃষক সুকুমলের সাথে তিনি জানান এবার ১৮ বিঘা জমিতে ইরি বোরো চাষ করেছেন, পার্চিং পদ্ধতি শুরু করেছেন প্রতিবছরই এ পদ্ধতি অবলম্বন করেন এতে কীটনাশক কম লাগে ফলে খরচ কম হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ক্ষতিকর পোকা বিশেষ করে মাজরা পোকা ধানের ক্ষতিকর আর পাখিদের প্রিয় খাবর এই মাজরা পোকা তাই পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর।
এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। উৎপাদন খরচ কমে। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। এ পদ্ধতি ক্রমেই বাড়ছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ জমি পার্চিংয়ের আওতায় এসেছে। কিছুদিনের মধ্যে সেটা শতভাগের কাছাকাছি যাবে।