ঐতিহাসিক ৭ মার্চে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আজ (সোমবার) বিকেলে ৫ দিনের সরকারি সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশটির উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মহামহিম মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে এই সফর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে দেশটির সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করতে চায় বাংলাদেশ। এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, সরাসরি শিপিং লাইন চালু, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তনে টেকসই উন্নয়ন, আইসিটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা।
রোববার বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে গত বছরের ৩ আগস্ট সে দেশে দ্বিপক্ষীয় সফরসহ দুবাই এক্সপো-২০২০-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন দুবাইয়ের শাসক। গত ১৬ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ ডে’ হিসেবে পালন করার একটি প্রস্তাব তাদের ছিল।
কিন্তু শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় সেই সফরটি সম্ভব হয়নি। এর পরও আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি পুনরায় আমন্ত্রণ জানান।
করোনার প্রাদুর্ভাবের পর শেখ হাসিনা গত বছর প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র ও পরে ইউরোপ সফরে যান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই এক্সপো ইভেন্ট সারা বিশ্বের দরবারে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরার একটি মোক্ষম প্ল্যাটফর্ম। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা ও বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনৈতিক খাতে আমাদের অর্জনগুলোকে তুলে ধরার মানসে এই সফর করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।’
বাড়বে শ্রমবাজার
মোমেন বলেন, আমাদের দেশের একটি বড় শ্রমবাজার হলো মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এই একটি দেশ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। দেশটির কর্মযজ্ঞে আমাদের দেশের শ্রমবাজারের জন্য অনন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত এই করোনার সময়ের মাঝে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরও আমাদের জন্য তাদের শ্রমবাজার আংশিক খুলে দিয়েছে; যা আমাদের একটি কূটনৈতিক সাফল্য।’
গত অর্থবছরে করোনার সময়েই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক দেশটিতে গেছেন জানিয়ে মন্ত্রী আশা করেন ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সরাসরি জাহাজ চলাচল
আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের। তবে বাণিজ্য ঘাটতি দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। এর মূল কারণ দেশটি থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি তেল আমদানি করে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির পরিমাণ সে দেশে আরও বাড়ানোর জন্য এই সফরে গুরুত্বারোপ করা হবে। সে জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল নিয়ে আলোচনা করা হবে।
‘আমি যখন ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়েছিলাম, সে সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এবার তা আরও জোরদারভাবে উপস্থাপন করা হবে।’
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক আরও জোরালো করতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে জয়েন্ট বিজনেস ফোরামের আয়োজন করা হবে। এটি আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই লাভজনক হবে বলে মনে করেন তিনি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি-প্রযুক্তি খাতে সহায়তা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই সফরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আরব আমিরাতের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর জন্য আলোচনায় বসবেন তারা।
তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদানের ইচ্ছার কথাও বলেন মন্ত্রী।
রাস আল খাইমায় ‘বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল’
মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই সফরকালে রাস আল খাইমায় বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুল ‘বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল’-এর নতুন ক্যাম্পাসে নির্মিতব্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
মন্ত্রী জানান, আরব আমিরাত চট্টগ্রাম বন্দরে একটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সাগরে তিনটি বে টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখান থেকে একটি তাদের দেয়া হবে। এখন এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।