#পৃথিবীতে যত ভাষণ আছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষণ ৭ই মার্চের ভাষণ: হাফিজুর রহমান আলম। #৭ মার্চের ভাষণ নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছিল: ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়।
প্রকাশ: রোববার, ৬ মার্চ, ২০২২, ১১:৪৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
৭, ১৭, ২৬; মার্চ মাসের এই তিনটি তারিখ আমাদের জীবনের জন্য অনেক গুরুত্ববহ। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দেওয়ার দিন, যে ভাষণে বাঙলার আপামর জনগণ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার প্রেরণা পান এবং চূড়ান্ত মুক্তির স্বপ্ন দেখেন। ১৭ মার্চ সেই ভাষণ দেওয়ার স্রষ্টা অর্থাৎ আমাদের জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী এবং ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৬৩৫তম পর্বে রোববার (৬ মার্চ) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা হাফিজুর রহমান আলম, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
হাফিজুর রহমান আলম বলেন, ৭, ১৭, ২৬; মার্চ মাসের এই তিনটি তারিখ আমাদের জীবনের জন্য অনেক গুরুত্ববহ। ৭ তারিখ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দেওয়ার দিন, যে ভাষণে বাঙলার অপমার জনগণ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার প্রেরণা পান এবং চূড়ান্ত মুক্তির স্বপ্ন দেখেন। ১৭ তারিখ সেই ভাষণ দেওয়ার স্রষ্টা অর্থাৎ আমাদের জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী এবং ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছিল এই ভাষণ। এই দেশের মাটি মানুষ নিঃস্বর্গ প্রকৃতি এবং জীবনধারায় বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই ভাষণটি মনে হয় যেন বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী সাধনায় ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে ভাষণটি প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন। এমনও মনে হয়, বাঙালির হাজার বছরের দুঃখ-বেদনা, বঞ্চনা এবং ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে দূরে থাকার ইতিহাস, কৃষক, কৈবর্ত, উপজাতিদের বিদ্রোহ প্রভৃতির বারুদ ঠাঁসা উপাদানে তাঁর সচেতন এবং অবচেতন মনে এই ভাষণটি তৈরি হয়ে প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মতো এমন আবেদনময় ও সুনিপুণ দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সব বয়সী মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।
ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, মার্চ বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়। এই মার্চেই পাকিস্তানকে বাঙালি বিদায় সম্ভাষণ জানায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে কামান, মর্টার, রাইফেল নিয়ে অতর্কিত ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তখন গ্রেফতার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তার সর্বশেষ বাণী বাংলার মানুষের কাছে পাঠান এই বলে, ‘এই হয়তো তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাক, যে অবস্থায়ই থাক, হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তোল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের গাঁথা লুকিয়ে ছিল। এ ভাষণ একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করে। এটা স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতির পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেব আত্মপ্রকাশের প্রেক্ষাপট এতে আছে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যেটা এ ভাষণেরই ফল।