পাতায় পাতায় টাকা! বেশুমার পাতা;কাড়ি কাড়ি টাকা। বলছিলাম, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ইউনিয়নের বোধখানা গ্রামের বারইপাড়ার পানচাষীদের কথা। তাদের গাছে নাকি টাকা ধরে! যত পাতা, তত টাকা। আর তাই, গাছেধরা টাকায় ভাগ্য ফিরেছে অনেক পানচাষীদের।
কথা হয়, জাত পানচাষী অশীতিপর অশিত ভৌমিকের সাথে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বংশপরম্পরায় পানচাষ করে আসছি। আমরা জাত পানচাষী। ‘বারই’ নামে পরিচিত। পানচাষীদের কারণে এলাকাটি ‘বারইপাড়া’ নামে পরিচিত। তবে, আমাদের কাছ থেকে স্থানীয় সাধারণ চাষীরা পানচাষের কৌশলরপ্ত করেছেন। পানচাষ করে আজ তারাও লাভবান। তাদের গাছেও এখন টাকাধরে! কিছুটা রসিকতার সুরে হাস্যজ্জল অশিত ভৌমিক বলছিলেন এমন কথা।
জানাগেল, বারইপাড়ার পানচাষী সলেমান বিশ^াস সাড়ে তিনবিঘা, সঞ্জিব ঢালী একবিঘা, প্রনাব ভৌমিক দুইবিঘা, মনিরুল ইসলাম দেড়বিঘা, সিরাজুল ইসলাম এক বিঘা, সাহেব আলী দেড়বিঘা, রফিকুল ইসলাম দেড়বিঘা পানচাষ করেছেন। এখানকার চাষীরা ছাচি, ঝাল ও মিষ্টি পানের পাশাপাশি ভারতীয় এলসি জাতের পানের চাষ করেছেন। শীতকালে পানচাষীরা জানালেন, পানচাষ ব্যয়বহুল ও কঠোর পরিশ্রমের কাজ। সেকারণে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও পনচাষ করতে পারেন না।
তাদের মতে, একবিঘা জমির পানচাষ করতে হলে ‘বরজ’ তৈরিতে খরচ লাগে ৮/১০লাখ টাকা। বাঁশ, কংক্রিট খুঁটি, শলাকা, স্টিলের তার, পাটকাটি, উলু ইত্যাদি উপকরণ কিনতে হয়। পানের বরজ দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করতে এখন সিমেন্ট, বালু, খোয়া ও হালকা রডের তৈরি কংক্রিটের খুঁটি ব্যবহার করতে হয়। আগে বাঁশের তৈরি খুঁটি ব্যবহার করা হতো। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে তা পচন ও উঁইপোকা ধরে নষ্ট হতো। তাছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঝড়ো হাওয়া ও অতিভারী বৃষ্টিতে বরজের ক্ষতি হতো।
পানচাষীরা জানালেন, গেলবার তারা পানের দাম পেয়েছিলেন আকাশচুম্বী। আম্পান ঝড়ে পান বরজের ক্ষতি হওয়ায় প্রতি পন (৮০টি) পানের দাম ছিলো ২৫০/৩০০টাকা। এবছর পানের দামে ধস নামলেও বাজার আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। ভালো মানের পান প্রতি পন ১৫০/১৮০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পানচাষীদের মতে, পানের বিভিন্ন রোগবালাই, সাদা-কালো মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রব আছে। ঝরা, পচা ও অকালে পাতাপাকা রোগের ঝুঁকি থাকে। শীতকালে এসব রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়। ভারতীয় এলসি জাতের পানের আয়তন/আকারে বেশ বড়। রোগবালাইও কম হয়। সেকারণে নিয়মিত কঠোর পরিচর্যার পাশাপাশি পান গাছের গোড়ায় মাটি ছিটানো ও নিয়ম মাফিক সেচ, সার ও কীটনাশকের পাশাপাশি খৈল ব্যবহার করতে হয়। একবার পানের বরজ তৈরি করতে পারলে দীর্ঘদিন যাবৎ লাভজনক উপার্জন করা যায়।
জানাগেল, রপ্তানি পণ্য তালিকায় আমাদের দেশের পানের চাহিদা বিদেশের বাজারে রয়েছে। বাংলাদেশের ঝালপানের বিশেষ চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্থানের বাজারে। ঝিকরগাছা বাজারের খুচরা পান ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, আয়ুব খাঁন, আব্দুর রহমান ও আলমগীর জানিয়েছেন, বাজারে বিভিন্ন মানের পানের দাম একেক রকমের। সর্বনি¤œ ২০টাকা থেকে ১৮০/১৯০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।