আগুন আতঙ্কে মধ্যরাতে চাঁদপুরে আটকা পড়া বরিশালগামী সুরভী-৯ লঞ্চের স্টাফদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। হামলায় আহত হয়েছেন দুই সংবাদকর্মীও।
এ ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার মো. মিজানকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান লঞ্চের পরিচালক রেজিন-উল-কবির।
লঞ্চটি রবিবার সকাল ১০টার দিকে বরিশাল নদী বন্দরে নোঙ্গর করার আগে লাঠিসোটা দিয়ে যাত্রীদের মারধর করে তারা। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা নদী বন্দরে গিয়ে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র তুলতে গেলে দুইজন ক্যামেরাপার্সনকে মারধর করে হামলাকারীরা।
এ সময় ক্যামেরার লাইট ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সুরভী লঞ্চের ম্যানেজার মো. মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সুরভী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। হামলার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলেছেন নির্যাতিতরা।
৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভী-৯ লঞ্চটি শনিবার রাত ১১টার দিকে মেঘনা নদী অতিক্রমকালে সাইলেন্সার পাইপে লাগানো তাপ নিরোধক (পলেস্তার) প্রলেপ থেকে বাষ্পীয় ধোয়া বের হয়। এতে যাত্রীদের মাঝে আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীদের মধ্যে কেউ জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করে।
ওই রাতেই কোস্টগার্ডের একটি দল মাঝ নদীতে লঞ্চে গিয়ে ধোয়ার উৎস খুঁজতে থাকে। তারা লঞ্চটিকে মেঘনার মোহনপুর এলাকায় নোঙ্গর করতে বাধ্য করে। পরে চাঁদপুর নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ইঞ্জিন পরীক্ষা করার পর রবিবার ভোর সাড়ে ৪টার পর লঞ্চটি মেঘনার মোহনপুর থেকে বরিশালর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
রাতভর অনেক যাত্রী তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি নিজ নিজ ফেসবুকে লাইভ করে। অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে। লাইভ এবং ফেসবুকে যাত্রীরা লঞ্চের সার্ভিস নিয়ে নানা মন্তব্য করে। এর জের ধরে আজ সকালে লঞ্চটি বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. মিজানের নেতৃত্বে শ্রমিকরা বেশ কয়েকজন যাত্রীকে মারধর করে। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা নির্যাতনের ছবি তুলতে গেলে তাদের উপরও হামলা চালায় তারা।
হামলায় ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন দেওয়ান মোহন ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপার্সন রুহুল আমীন আহত হয়। ভেঙ্গে যায় মোহনের ক্যামেরার লাইট। যাত্রী এবং সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র লঞ্চের নিজস্ব সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়। নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক রুহুল আমীন জানান, বিনা কারণে যাত্রীদের উপর হামলা করেছে লঞ্চের শ্রমিক-কর্মচারীরা। সেই ছবি তুলতে গেলে হামলা চালানো হয় তাদের দুই জনের উপর। এতে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। নির্যাতিত সাংবাদিকরা এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) বলেন, তাদের সামনেই ঘটেছে যাত্রী এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা। এ ঘটনায় নির্যাতিত কেউ আইনি পদক্ষেপ নিলে তাদের সহায়তা করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সাথে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে তার আগেই পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। এ ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএমপি’র সহকারী কমিশনার (কোতয়ালী) শারমিন সুলতানা রাখী।
এদিকে যাত্রী এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে সুরভী নেভিগেশন গ্রুপের পরিচালক মো. রেজিন-উল কবির। নির্যাতনের ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কেউ আইনগত পদক্ষেপ নিলে কর্তৃপক্ষের আপত্তি থাকবে না।
অপরদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বরিশালের সাংবাদিক নেতারা। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ কঠোর বিচার দাবি করেছেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, বরিশাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (বিইমজা) সভাপতি ফিরদাউস সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন সুমন, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন এবং বরিশাল টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি গোবিন্দ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন সুমন সহ অন্যান্যরা।
ভোরের পাতা/কে