প্রকাশ: শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৩৩ পিএম আপডেট: ০৯.০১.২০২২ ৩:০৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহীনির হাতে নিহত এক শহীদ বাবার অসীম সাহসী সন্তান প্রবাসী বদরুজ্জামান বদরুল। ১৯৭১ সালে দেশে বাঙালিদের ওপর পাকহানাদার বাহীনির বর্বরতা ও নির্যাতনের ঘটনা তাঁকে পীড়িত করে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু একটা করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি একাত্ম হয়েছিলেন দেশের মুক্তিসংগ্রামে। লন্ডনে দেশের জন্য আন্দোলনের প্রথম সারিতেও ছিলেন সাহসী এই তরুণ।
প্রবাসী বদরুজ্জামান বদরুলের জন্ম ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ সালে মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার ৬নং একাটুনা ইউনিয়নের মল্লিকসরাই গ্রামে। তাঁর পিতা আবু সুফিয়ান উরফে আসকির মিয়া, মাতা রহিমা বানু। তাঁর পিতা একজন প্রতাপশালী, সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন। আট ভইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। ১৯৫৫ সালে চাঁদনিঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। পরবর্তীতে জুনিয়র হাইস্কুল ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি অধ্যয়নরত ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই বেশ পরোপকারী ছিলেন তিনি, সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতেও। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে জড়িয়ে পরেন ছাএ রাজনীতির সাথে। ১৯৬৫ সালে পারিবারিক কারণে তিনি পারি জমান লন্ডনে। ১৯৭১ সালে সেখান থেকেই এই তরুণ একাত্ম হয়েছিলেন এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে। যোগ দেন তৎকালীণ সংগঠন মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন ও কল্যাণ পরিষদে। সেই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন একাটুনা গ্রামের মইনুদ্দিন মনাক মিয়া। তাঁর নেতৃত্বে দেশ-মাতৃকার টানে, তারুণ্যে টগবগ, দৃঢ় প্রত্যয়ের এই তরুণ চালিয়ে যান ক্লান্তিহীন সংগ্রামী আন্দোলন। এই ত্যাগী সৈনিক শুধু মুক্তিসংগ্রামের আন্দোলনেই যুক্ত ছিলেন না, বরং প্রবাসে নিজের কষ্টার্জিত বেতনের বেশিরভাগ টাকা আন্দোলনের সাহায্যার্থে দান করতেন তার সংগঠনকে।
এরই মধ্যে জানতে পারেন বাংলাদেশকে ঘায়েল করতে বিশ্ব ব্যাংক থেকে আর্থিক অনুদান নিচ্ছে পাকিস্তান। তাৎক্ষণিক মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন ও কল্যাণ পরিষদ সংগঠনের সবাইকে নিয়ে ফ্রান্সে বিশ্বব্যাংক ঘেরাও করার পরিকল্পনা নেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে গড়ে তুলেন তীব্র আন্দোলন 'এইড টু পাকিস্তান মিনস ভুলেট ফর বাংলাদেশ' স্লোগানে। তাঁদের আন্দোলনের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় বিশ্ব ব্যাংক, ঘোষনা দেয় পাকিস্তানকে আর্থিক সহযোগিতা করবেনা তাঁরা।
এ ঘোষনার পর বাঙালি ও মুক্তিবাহিনীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ জাগে। সেই বিজয় নিয়ে সংগঠনের সাথে তিনি ফিরে এসে জানতে পারেন ফ্রান্সে আন্দোলনে তাঁর সম্পৃক্তার খবর পেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁর বাবাকে তুলে নিয়ে যায় তৎকালীণ টর্চার সেল বর্তমান মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজে। সেখানেই রাতভর টর্চার করে তার বাবাকে হত্যা করে পাকিস্তানি ঘাতকরা। দেশে ফিরলে হানাদার বাহিনী তাকেও প্রাণে মেরে ফেলবে স্বজনদের এমন ভয়ে বাবার শেষকৃত্বেও আসতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়ে পাঠায় লন্ডনে। ৯ জানুয়ারি লন্ডনে তৎকালীণ মুগল শাহী রেষ্টুরেন্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা হয় বদরুজ্জামানের। সেই রেষ্টুরেন্টে খাবার খেতে যান বঙ্গবন্ধু, বদরুজ্জামান জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু এসেছেন,তিনি ছুটে যান তাঁর সান্নিধ্য পেতে, বঙ্গবন্ধুও তাকে জড়িয়ে ধরেন পরম মমতায়। সদ্য বাবা হারা ব্যাকুল বদরুজ্জামানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন পরম মমতায়। সেদিনের সেই স্মৃতি আজও আবেগ-আপ্লুত করে তাকে। বঙ্গবন্ধুর সান্নিদ্য পাওয়া সেই বদরুজ্জামান আজও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালণ করে মানুষের সেবায় কাজ করছেন। প্রবাসে থাকলেও প্রতিবছর তিনি ছুটে আসেন তাঁর মাতৃভ’মি নীজ গ্রামে। সাধারণ মানুষের প্রতি বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন গ্রাম হবে শহর বাস্তবায়নে নিজ অর্থাায়নে গ্রামের উন্নয়নে নিরবে ভুমিকা রাখছেন তিনি। তাঁর কাছে দল মত , ধর্ম বর্ণ কোন কিছুর পার্থক্য নেই, মানবতার সেবাই তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য। নিজ আয়ের অর্থ থেকে গরীব মেয়েদের বিয়ে, চিকিৎসা, মসজিদ, মাদ্রাসা, নির্মান এমনকি স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও তিনিদেন আর্থিক সাহায্য।
৭১’এ বদরুজ্জামানের সেই সাহসীকতাকে কেউই স্মরণে রাখেনি। তাঁরপরও মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জন্য তিনি কিছু করতে পেরেছেন এটা ভেবেই, গর্বে বুক ভরে যায় তাঁর। জীবনের শেষ কটা বছর তিনি এবাবেই প্রধানমন্ত্রীর ভীষনকে সফল করতে আর বঙ্গবন্ধুর সোনারবাংলা গড়তে দেশের জন্য নিরবে কাজ করে যেতে চান।