#২০২২ সালে বাংলাদেশে আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে: ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। #এ বছরে শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্ব বাড়াতে হবে: অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া। #নতুন বছরে আমরা বাংলাদেশের সমৃদ্ধির আরও পরিবর্তন দেখতে চাই: অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা।
আজ নববর্ষ উদযাপনের শব্দ আসছে চারিদিক থেকে। ছেলে-মেয়েরা নববর্ষ উদযাপনের জন্য মাতোয়ারা হয়ে আছে। সত্যি বলতে কি আসলে এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সারা গ্রহব্যাপী নানা ধরনের আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে উৎযাপন করা হয় এবং বাংলাদেশও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। আসলে আমরা যে প্রত্যাশাই করি না কেন, আমরা যদি শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকি এবং নিজে কিছু না করি, তাহলে এই প্রত্যাশা করে কোন লাভ নেই। প্রত্যাশা হবে আমরা যে যেখানে যে দায়িত্বে আছি না কেন সবাই যার যার জায়গা থেকে সততার সহিত তার দায়িত্ব পূরণ করতে পারে তাহলেই আমাদের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৭০তম পর্বে শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (নীলদল) সাবেক সভাপতি, লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, বেলজিয়াম বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, আজকে যারা ভোরের পাতা সংলাপে সংযুক্ত আছেন তাদের সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই এবং সাথে দেশবাসীসহ পৃথিবীবাসীকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। চারিদিকে আজ নববর্ষ উদযাপনের খুব শব্দ আসছে। ছেলে-মেয়েরা নববর্ষ উদযাপনের জন্য মাতোয়ারা হয়ে আছে। সত্যি বলতে কি আসলে এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এইদিনটিকে কেন্দ্র করে সারা গ্রহব্যাপী নানা ধরনের আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে উৎযাপন করা হয় এবং বাংলাদেশও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। আমরা যদি এটা আলোচনা করতে চাই যে ২০২১ সাল আজ রাত ১২ টায় বিদায় নিচ্ছে আমাদের থেকে এবং ২০২২ সাল নানা ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে উকি দিচ্ছে। ২০২১ সালটি খুব একটা ভালো হয়েছে বলে মনে হয় না আমার কাছে, তার একটা অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে করোনা মহামারি। এখন পর্যন্ত সেটা রয়েছে নানা রকমের রূপ ধারণ করে পুরো বছর ঝুড়ে এই গ্রহের মানুষকে তার গ্রাসের মধ্যে রেখেছে। অসংখ্য প্রাণহানি ঘটেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি-শিল্পসহ সকল সেক্টরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এতো কিছু নেতিবাচক দিক থেকেও আমরা যদি আমাদের দেশের দিকে তাকাই তাহলে বলতে হবে আমরা ভালোই ছিলাম এবং আছি জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও চৌকস নেতৃত্বে। এই করোনা মোকাবিলা করেও আমরা মোটামুটি একটা ভালো অবস্থানে রয়েছি এবং আমরা একটা রেসিলিয়ান্স ইকনোমির জন্ম দিয়েছি। করোনার এতো ব্যাপক মহামারির পরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যগত দিকসহ অন্যান্য সেক্টরেও কিন্তু আমরা সামলে উঠেছি এবং একটা রেসিলিয়ান্স আনতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বব্যাপী এই বৈরি প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা বাংলাদেশে দুটি অসামান্য কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। একটি হলো জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীর যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান সেটা আমরা এই ২০২১ সালে করতে পেরেছি এবং আরেকটি হচ্ছে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী একই সাথে বর্ণাঢ্যভাবে পালন করতে পেরেছি। এই দুইটি ইভেন্টকে আমি বাংলাদেশের অন্যতম মাইলস্টোন অর্জন বলতে চাচ্ছি।
অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, আমি শুরুতেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকের সংলাপে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। প্রথম আলোচক অল্প সময়ে খুবই সুচারুভাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। জাতীয় থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আমি আসলে বাংলাদেশ সম্বন্ধে দুই-একটি কথা বলতে চাচ্ছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সাথে যেভাবে সরকার পরিচালিত করছেন, সে কারণে আমাদের অর্থনীতি সঠিক ধারায় পরিচালিত হয়েছে। এদিক থেকে আমি বলবো যে, বাংলাদেশ সরকার অনেকটা সফল হয়েছে। অন্যদিকে এই ২০২১ সালে আমরা অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গকে হারিয়েছি যা আমাদেরকে পীড়া দেয়। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা দেশের কয়েকজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি, যা গভীর বেদনাবহ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে উন্নয়নের মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নববর্ষের এই সূচনালগ্নে সবার প্রত্যাশা জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলতা আসুক। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সবার চেষ্টা ছিল এগিয়ে যাওয়ার। নতুনের মধ্যেই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সুযোগ করে দেবে নতুন বছর। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা গর্বিত ও আশাবাদী। বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সামনের দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। এখন আর আমাদের কেউ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করার সাহস দেখায় না। আগামী বছরটা কেমন আসবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা এটা মূলত আজকের আলোচ্য বিষয়। আসলে আমরা যে প্রত্যাশাই করি না কেন, আমরা যদি শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকি এবং নিজে কিছু না করি তাহলে এই প্রত্যাশা করে কোন লাভ নেই। প্রত্যাশাটা হবে আমরা যে যেখানে যে দায়িত্বে আছি তারা যদি সেই জায়গা থেকে সততার সহিত তার দায়িত্ব পূরণ করতে পারে তাহলেই আমাদের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে। এই প্রত্যাশা আসলে কি হতে পারে? এই ক্ষেত্রে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে পারি আগামী বছরে শিক্ষা ও গবেষণার গুরুত্ব বাড়াতে হবে আগামী দিনগুলোতে। দুর্নীতি নির্মূল বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়তে সরকারের যে সকল প্রচেষ্টা আছে সেগুলোর সাথে নিজেকেও সম্পৃক্ত করতে হবে তাহলেই আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে।
অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা বলেন, আমাদের নতুন বছরের প্রত্যাশা অনেক কিন্তু কি পরিমাণে এই প্রত্যাশা আমরা ঘরে তুলতে পারবো কিনা সেটাই মূল বিষয়। আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলতে চাই তাহলে দেখতে হবে যে, বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষই চায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, চাই সেটা সামাজিক হোক, রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিকভাবেই হোক না কেন। সব জায়গায় আমরা সমৃদ্ধির পরিবর্তন দেখতে চাই। এই সমৃদ্ধির পরিবর্তন আমরা কিভাবে দেখতে চাই সেটাই আমরা আজকে এখানে আলোচনা করতে এসেছি। পৃথিবীতে টেকনোলোজিকাল যে পরিবর্তনটা হয়েছে সেটা বেশ দেখা গিয়েছে এই বছরে, কিন্তু আমাদের মধ্যে যে মানবিকতার কিছু পরিবর্তন দরকার সেটা তেমন দেখা যায়নি এই বছরে। এই ক্ষেত্রে আমাদের মানবিকতার ব্যাপক প্রয়োজন আনতে হবে বলে আমি মনে করি। সারা পৃথিবীতে এ বছর মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ প্রায় পুরো বছর জুড়েই বিশ্ববাসী মহাআতঙ্কে অতিক্রম করছে। অপর দিকে বিশ্ব অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছেন কয়েক লাখ মানুষ। ২০২১-এর শুরুটি মোটামুটি ভালোই ছিল। ভাবা যায়নি বছরটা করোনার নতুন ঢেউয়ে এভাবে ওলটপালট হয়ে যাবে। মার্চেই করোনার নতুন ধরন- ডেল্টা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে হানা দিয়েছিল। ২০২০-এর চাইতে ২০২১-এর ডেল্টা ভাইরাস অনেক বেশি আগ্রাসী ছিল। তাইতো করোনামুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখছেন সবাই। স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি আমাদের মধ্যে আসে। আমরা আলোড়িত উদ্দীপিত হই। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে চলতে। নতুনভাবে জীবনযাপন করতে, নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শন অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে উন্নয়নের সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে হবে বাঙলার প্রতিটি ঘরে ঘরে।