বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
গত ১২ বছরে ১৩৭২ কোটি টাকার ১৫ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন
উন্নয়ন ও ব্যার্থতা নিয়ে ২০২১ পার করলো মোংলা বন্দর
বন্দর অভ্যান্তরে পন্য চুরি ও অবৈধ মালামাল আমদানী রোধ করা যাচ্ছে না
মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫৫ পিএম আপডেট: ৩১.১২.২০২১ ৯:৫৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

কিছু উন্নয়ন আর কিছু ব্যার্থতা নিয়ে ২০২১ পার করলো মোংলা বন্দর। এক সময়ের মৃতপ্রায় মোংলা সমুদ্র বন্দর আজ বিশ্ব বানিজ্যিক বাজারে সুনাম অর্জন করায় এ বন্দরটি লাভ জনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এ বন্দরকে নতুন সাজে সাজিয়ে তুলতে ও বন্দর উন্নয়নের জন্য গত ১২ বছরে গুরুত্বপুর্ন ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এছাড়াও বন্দরের কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এবং ব্যাবসায়ীদের কার্যক্রমের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোংলা বন্দরের জন্য শীর্ষ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের অধীনে মোট ৭৫টি ইকুইপমেন্ট ক্রয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

আর চলতি অর্থ বছরে বন্দর উন্নয়ন ও আমদানী রপ্তানী কারকদের ব্যাবসা বান্ধব বন্দর গড়তে আরও ৯টি প্রকল্প চলমান। যা থেকে ৩টি প্রকল্পের কাজ ইতি মধ্যে শেষ হলেও বাকিগুলো চলতি অর্থ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ বন্দরের যতটাই উন্নয়ন হয়েছে তার মধ্যে ব্যার্থতাও কম নয়। বন্দরের অভ্যান্তরে আমদানীকৃত গাড়ী, দেশী-বিদেশী মুল্যবান মালামাল ও যন্ত্রাংশ চুরি, মাদকসহ নিষিদ্ধ পন্য আমদানী করা মালামাল চুরিসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার সুত্রপাত হলেও তা কোন উপায়ই বন্ধ করতে পারছেনা বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

বন্দর সুত্রে জানা যায়, ৯০ দশকের মোংলা সমুদ্র বন্দর (ডেট পোর্ট) আর্থাৎ মৃত্য বন্দর হিসেবে ঘোষনা দিয়েছিল তৎকালীন ক্ষমতাশীন সরকার। সে সময় মোংলা বন্দরে কোন কোন মাসে জাহাজ শুন্য মোংলা বন্দর হিসেবে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ব্যাবসায়ীক আমদানী-রপ্তানীর খবর। কাজ না থাকায় বন্দরের অনেক শ্রমিক তাদের পেশা পরিবর্তন করে অন্যাত্র গিয়ে কাজ করে বেঁচে ছিল তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। না খেয়েও অনেক শ্রমিক অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করতেছিল এখানকার জাহাজে খালাস-বোঝাই কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা।   

পরে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপুর্ন বন্দরকে সচল করার উদ্দ্যোগ নেয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ বন্দরকে উজ্জীবিত করতে দেশের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর মোংলাকে উন্নয়নে বর্তমান সরকাররের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গত ১২ বছরে এসব প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করতে সরকারের ব্যয় হয়েছে মোট ১হাজার ৩৭২ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা। যার ফলে বর্তমান সরকারের সময় এবং উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা হিসেবে (জিওবি অর্থায়নে) এবং বরাদ্ধে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর। এ থেকেই মোংলা সমুদ্র বন্দরকে আর পিছনের দিকে তাকাতে হয়নি, এগিয়ে গিয়ে একটি ব্যাবসা বান্ধব লাভ জনক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর। 

এছাড়া বর্তমানে বন্দরের অভ্যান্তরে জেটি এলাকায় কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোংলা বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় "যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহ" শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে মোট ৭৫টি ইকুইপমেন্ট ক্রয় করা হয়েছে যা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান মোঃ জহিরুল হক জানান, ২০০৯ সালের মে মাস হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে মোংলা বন্দরের উন্নয়নে ১হাজার ৩৭২ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে মোট ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর জন্য ৭শ কোটি টাকা ব্যায় আউটার বারে ড্রেজিংয়ের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে এবং ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যায় ইনার বারে ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আউটারবারে ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হওয়ায় মোংলা বন্দরের প্রথম সীমানা বঙ্গোপসাগর মোহনা অ্যাংকারেজে বয়া থেকে ইতিমধ্যে ৯মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে কিছু ব্যার্থতা নিয়েও ২০২১ সাল পার করলো মোংলা সমুদ্র বন্দর। গত ১২ বছরে ব্যাবসায়ীদের আমদানী করা মুল্যবান পন্য জেটি এলাকা থেকে গায়েব হয়েছে। যেমন, ২০১৮ সালে ৪ জুন বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটির অভ্যন্তরের ৫নং সেডে থাকা একটি প্রাডো জীপ গাড়ী চুরি করে নিয়ে যায় জনৈক এক ব্যক্তি। যার মুল্য প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। জেটির আভ্যান্তরে কন্টেইনার ভর্তি ব্যাবসায়ীদের আমদানী করা মুল্য কাপর সিসি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও কন্টেইনার খুলে এসকল মালামাল নিয়ে যায় পাচারকারীরা। এছাড়া বন্দরের চ্যানেলে জাহাজে চুরি, পন্য চুরি, মালামাল ও যন্ত্রাংশ চুরি সহ অনেক ঘটনাই ঘটেছে এ বন্দরে। কিছু কালো তালিকা ভুক্ত ব্যাবসাীরা ভুয়া কাগজ পত্রে বিদেশী মদসহ নিষিদ্ধ পন্যও আমদানী করছে। তবে এদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে কিন্ত কোন সফলতা আনতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

ব্যার্থতার কথা স্বীকার না করলেও সফলতার ব্যাপারে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, কোভিড-১৯ নামক মহামারির মধ্যে সারাদেশে যখন ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল তখন মোংলা সমুদ্র বন্দর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৯৭০টি দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ আগামন ঘটেছে এ বন্দরে। যার মাধ্যমে ১শ ১৯ দশমিক ৪৫ লাখ মেট্রিকটন কার্গো, ৪৩ হাজার ৯৫৯ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা এবং পন্য আমদানী-রপ্তানী করা সম্ভব হয়েছে এ মোংলা সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে। যাতে এক সময়ের লোকসানের স্থানে ৩শ ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা বন্দরের পুর্বের ৭০ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড অর্জন করেছে পরিবেশ বান্ধব ও ব্যাবসায় সাফল্যের সম্ভাবনাময় মোংলা সমুদ্র বন্দর। 

তিনি আরো বলেন, বন্দর কেন্দ্রিক অন্যান্য অবকাঠামোসহ পদ্মা সেতু নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সাথে মোংলা বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। যার ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও আমদানী-রপ্তানী কারক ব্যাবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহার বহুগুনে বেড়ে যাবে। এ বিবেচনায় ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য মোংলা বন্দরকে আরো সক্ষম করে তোলার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার ও সহায়তা করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলে জানায় মোংলা বন্দরের সফল চেয়ারম্যান।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]