প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
জিপিএ-৫ পেয়েছেন লঞ্চ অগ্নিকাণ্ডে বাবা-মা-ভাই হারানো হাফসা। আজ শুক্রবার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তার সব আনন্দই ভেসে গেছে চোখের পানিতে। হাফসার কাঁধে এখন ছোট দুই ভাই-বোনের দায়িত্ব।
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ বড় লবনগোলা গ্রামের হাকিম শরীফ ও পাখি বেগম দম্পতির বড় মেয়ে হাফসা। পাখি বেগম ঢাকার কোনো এক গার্মেন্টসে কাজ করতেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন হাকিম শরীফ।
স্বামী স্ত্রী দুজনের আয়-উপার্জনে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে, মানুষের মত মানুষ হবে।
বড় মেয়ে হাফসা এ বছর বরগুনার সদর উপজেলার কালীরতবক দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা বেতাগীর সরিষামুড়ি ইউনিয়নে ঢাকার একটি বায়িং হাউজে কর্মরত পাত্র দেখে রেখে রেখেছিলেন অভিবাবকরা। আজ শুক্রবার উভয়পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা উত্তোলন এবং মেয়ে হাফসার বিয়ের কেনাকাটা করতে ২০ ডিসেম্বর আড়াই বছরের শিশুপুত্র নাসিরুল্লাহকে নিয়ে ঢাকা যান পাখি বেগম। ঢাকাতে বিয়ের কেনাকাটা সেরে ২৩ ডিসেম্বর স্বামী হাকিম শরীফ ও আড়াই বছরের পুত্র নসরুল্লাহকে নিয়ে অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন পাখি বেগম।
২৩ ডিসেম্বর রাতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বড় লবনগোলা মানিকখালী গ্রামের আব্দুল হাকিম শরীফ, তার স্ত্রী পাখি বেগম এবং তাদের আড়াই বছরের পুত্রসন্তান নসরুল্লাহ।
২৪ ডিসেম্বর সকালে পাখি বেগমের মা ফরিদা বেগম প্রতিবেশিদের নিকট জানতে পারেন লঞ্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর। এই দুর্ঘটনার খবর শুনেই ফরিদা বেগম অব্যাহতভাবে মোবাইলে ফোন দিতে থাকেন জামাই হাকিম শরীফ ও তার মেয়ে পাখি বেগমকে। বহুবার ফোন করে ব্যর্থ হওয়ার পর রওনা দেন ঘটনাস্থল ঝালকাঠিতে। সেখানে পৌঁছে অগ্নিকাণ্ডের এই ভয়াবহতা এবং ভস্মীভূত লাশের স্তুপ দেখে মেয়ে জামাই বা নাতি কাউকেই শনাক্ত করতে পারেননি। অভিযান লঞ্চের স্টাফ কেবিনের ভস্মীভূত ছাইয়ের মধ্যে খুঁজে পান মেয়ে পাখি বেগমের ওড়না, অক্ষত কিছু জামাকাপড়, নাতিদের জন্য কেনা জামা প্যান্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো আংশিক পোড়া।
দক্ষিণ বড় লবণগোলা গ্রামের নিখোঁজ আব্দুল হাকিমের বাড়িতে গেলে দেখা হয় হাকিম শরীফ-পাখি বেগম দম্পতির অবুঝ আর তিন সন্তানের কান্না। এরা হলেন সুমাইয়া , ফজলুল হক ও হাফছা বেগম। তিনজনই মাদরাসার পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফল জানার পরই হাফসা শুরু করেছেন কান্না আর আর্তনাদ। সেই কান্না থামানো যাচ্ছে না। সমস্ত গ্রামজুড়ে বইছে শোকের মাতম।