#তামাকজাত পণ্য গ্রহণে উৎসাহিত করছে বিজ্ঞাপন #এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কর্মশালা অনুষ্ঠিত
তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রদর্শনের বিভিন্ন কুট কৌশল এবং যুবকদের তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, (২০০৫) এর বিভিন্ন ফাঁকফোকর ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্যবিরোধী কাজগুলো অবাধে করে যাচ্ছে। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামাক বিষয়ে সরকারের জিরো টরালেন্স নীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, আমাদের বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে এবং সংসদে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে সাহায্য করবে।
এদিকে তামাকজাত পণ্য বিক্রয় কেন্দ্রে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রদর্শন ও প্রচারের জন্য ডিলার ও বিক্রেতাদের বিভিন্ন ভাবে উৎসাহিত করে এবং বিভিন্ন কুট কৌশল অবলম্বন করে চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে এক সাংবাদিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংগঠন ভয়েসেস ফর ইন্টারেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) আয়োজন করে। কর্মশালায় তামাক কোম্পানির উল্লেখিত অনৈতিক কূটকৌশল ও ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে দুইটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। এ সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মোট ৩০ জন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় বলা হয়, ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, (২০০৫) এর বিভিন্ন দুর্বল দিকসমূহ ও তামাক কোম্পানির অনৈতিক বিক্রয়কেন্দ্রে পন্য প্রদর্শন ও ঢাকা শহরের রেস্তোঁরায় ধুমপানের জন্য নির্ধারিত স্থানের জন্য লোভনীয় প্রণোদনা দিয়ে আসছে তামাকজাত কোম্পানিগুলো। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংগঠন ভয়েস পরিচালিত ‘ঢাকা শহরের বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং স্পনসর্শিপের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ’ শীর্ষক গবেষণায় এইসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তামাক বিক্রয়কে উৎসাহিত করে। তারা বিভিন্ন কৌশল যেমন পণ্য বিক্রয়ের উপর লক্ষ্যমাত্রা প্রদান, সেরা বিক্রেতাদের নাম তামাক কোম্পানির বিশেষ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী প্রদান এবং প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী সরঞ্জাম যেমন বিছানা, আলমিরা, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ব্লেন্ডার ইত্যাদি এবং বিলাসসামগ্রী সোনার কয়েন, এলইডি টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ এবং দামী গিফট ভাউচার ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এ সময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন, লীড পলিসি অ্যাডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) মো. আতাউর রহমান (মাসুদ), সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার, মো. আব্দুস সালাম মিয়া, গ্রান্টস ম্যানেজারসহ সিটিএফকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ। কর্মশালায় জানানো হয়, রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উপহার পেয়ে থাকে। যেমন- টি-শার্ট, লাইটার, অ্যাশ ট্রে, রান্নার জিনিস, কফি মগ, তামাকজাত দ্রব্য, কম দামে তামাকজাত দ্রব্য, প্লেট/গ্লাস, কোভিড প্রতিরক্ষামূলক সামগ্রী, নতুন সিগারেট ব্র্যান্ডের বিনামূল্যে নমুনা ইত্যাদি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের নিশ্চিত করতে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে আরো জোরদার করে সকল বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন, বিজ্ঞাপন ও প্রচার নিষিদ্ধ করা। অধূমপায়ীদের বিশেষ করে শিশু ও নারীদের পরোক্ষ ধুমপান হতে বাঁচানোর জন্যে সব ধরনের পাবলিক প্লেস থেকে পৃথক ধুমপান এলাকার রাখার বিধান বাতিল করার জোর দাবি জানানো হয়। কর্মশালায় ৩০ জন সাংবাদিক গবেষণার ফলাফল থেকে সংবাদের জন্য সম্ভাব্য শিরোনাম তৈরি করেন এবং তা উপস্থাপন করেন। সাংবাদিকরা তামাক কোম্পানির অসুস্থ কৌশল এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার জন্য এবং বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের জন্য আরও রিপোর্ট করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বক্তারা বলেন, এই ধরনের বিজ্ঞাপন ও বিপণন কৌশল আইন লঙ্ঘন করছে। এর পাশাপাশি তামাকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে এবং এই ধরনের বিজ্ঞাপন বিশেষ করে তরুণদের বেশি আকৃষ্ট করছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্বৃতি দিয়ে বক্তারা বলেন, এই আইনের সংশোধন করে সকল বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন ও পণ্য প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তামাক কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সাবেক স্বাস্থ্যমস্ত্রী ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক ধূমপানের বিরুদ্ধে মানুষ যথেষ্ট সচেতন তবে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ব্যবসায়িক স্বার্থে যদি আইন লঙ্ঘন করে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হতে হবে। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করার এবং বিক্রির স্থানে পণ্য প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার কঠোর বিধান অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
ভয়েসের গবেষণার প্রশংসা করে হাবিবে মিল্লাত এমপি বলেন, এ ধরনের গবেষণা আমলে নিয়ে আইন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস’র (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলোর অধিক মাত্রার মুনাফার আকাক্সক্ষা ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, (২০০৫) আরো জোরদার করে সকল বিক্রয় কেন্দ্রে তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন ও প্রচার নিষিদ্ধ করার জন্য গবেষণায় সুপারিশ করা হয়।