ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও উদ্বাস্তুর কারণে ঢাকার জনসংখ্যার উপর চাপ বাড়ছে, ঢাকা আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার লোক ঢাকায় ঢুকছে। আর এদের জায়গা হচ্ছে ফুটপাত ও বস্তিতে। ফলে নগরীর সার্বিক অবস্থা কিছুটা খারাপ ও ফুটপাত দখল হয়ে যায়। সবার আগে এটা বন্ধ করতে হবে।’
বুধবার (২৯ ডিসেম্বরে) সকাল সাড়ে ১১টায় ডিএনসিসির সম্মেলন কক্ষে ডিএনসিসি ও ব্র্যাকের যৌথভাবে আয়োজিত ঢাকা শহরের স্ট্রিট ভেন্ডরদের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অংশীজন সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকজন হকারদের সাথে নিজে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তাদের বিক্রির সময় শুরু হয় বিকাল ৪টার পর কিন্তু তারা সকাল ১০টায় গিয়ে জায়গা দখল করে রাখে এবং এতে মানুষজনের চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে। আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এটা কেন করে তারা? তারা জানিয়েছে, ওই সময় না আসলে অন্য কেউ ওই জায়গায় বসে যাবে।’
এ সময় তিনি বলেন, তাই আমরা চিন্তা করেছি, তাদের এই দখল না হয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তাটুকু দিলে পথচারীদের যদি ব্যাঘাত না ঘটে সেটা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘সপ্তাহের কিছু দিন, কিছু সময় এবং কিছু কিছু রাস্তায় এটা বাস্তবায়ন করা হবে। এভাবে তাদের এক সময় পুনর্বাসন করা হবে। উন্নত অনেক দেশে রাস্তার পাশে ফুটকোর্টের মতোও আছে, সেটার বিষয়েও ভেবে রাখবো।’
মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি জায়গা কেউ ওউন করতে পারবে না। এটাতে সবার সমান অধিকার। ভেন্ডরদের এই বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা ওয়ার্কিং কমিটি করে দিতে চাই। ওয়ার্কিং কমিটি পলিসি তৈরি করে দেবে। কাদের এসব জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে সেটাও স্থির করতে হবে। প্রয়োজনে পিপিপিতে (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) কাজ করতে হবে। এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আসতে হবে, ভালো থাকার জন্য।
তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে একটি মানবিক নগর গড়ে তুলতে চাই। সর্বস্তর থেকে সবার সহযোগিতা পেলে এটি সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় অংশ নেওয়া অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে ফুটপাত ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনের সহায়তা, দুই সিটি কর্পোরেশনের যৌথভাবে কাজ করার বিষয়গুলি উঠে আসে।এছাড়া যারা নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় বসতে চায় তাদের স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে শহরে যেসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে তাদের কর্মীদের জন্য হাল্কা নাস্তা ও স্মোক জোন তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘ঢাকাকে নিয়ে বাস্তবসম্মতভাবে নতুন ভাবে চিন্তা করা। আমাদের শহরকে যারা কার্যকর রেখেছেন, সেই ইনফর্মাল কর্মীদের এর কেন্দ্রে রেখে একটি উইন উইন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এজন্য আমরা এটিকে শুধু টেকনিক্যাল সমাধান দিচ্ছি না। বিষয়টিতে নানা ধরনের স্টেকহোল্ডার জড়িত। তাই সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারলে আশা করি এটির একটি বাস্তবসম্মত সমাধানে পৌঁছাতে পারবো।’
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে ও সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।