শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সালতামামি
বছর জুড়েই আবাসনখাত ছিল চাঙ্গা
রমজান আলী
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৮ এএম আপডেট: ২৯.১২.২০২১ ১:০৯ এএম | অনলাইন সংস্করণ

দেশের ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ কালো টাকা সাদা করার ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ের সরকার অনেকবার চেষ্টা করেও কালো টাকা সাদা করতে সক্ষম হননি এমন কি তেমন সাড়াও পাননি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে এ সুযোগ দিয়ে এলেও এবারের মতো আগে কখনই এত সাড়া পাননি। বিগত বছরগুলোর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও যা হাতেগোনা কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কালো টাকা সাদা করা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বর্তমান সময়ে এসে সেটি দেশের জন্য অনেকটাই আশির্বাদ বয়ে এনেছে। ফলে এই টাকা বিনিয়োগে সচল হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা। কালো টাকা সাদা হওয়ার কারণে দেশের পুঁজিবাজার, আবাসনখাত অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সরকারি নির্দেশনার সুযোগে এ দুটি খাতেই কালো টাকা বিনিয়োগে যা অনেকটাই আশার আলো সৃষ্টি করেছে। ফলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছর রেকর্ড ২০ হাজার ৬০০ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে। ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালো টাকা বৈধ করেছেন। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশ স্বাধীনের পর কালো টাকা সাদা করা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। কালো টাকা সাদা করার তালিকায় আছেন চিকিৎসক, সরকারি চাকরিজীবী, তৈরি পোশাক রফতানিকারক, ব্যাংকের উদ্যোক্তা মালিক ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে। এর মধ্যে নগদ টাকা সাদা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি। ব্যাংক বা নগদে রাখা এই বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করেছেন প্রায় সাত হাজার করদাতা। বাকি টাকা জমি-ফ্ল্যাট ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। এমনটিই বলছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক হিসাব। শিগগিরই চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কালো টাকা সাদার করার গড় ট্যাক্স ১০ শতাংশ হিসাবে মোট ২ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে একাধিকবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও তা তেমন একটা কাজে  আসেনি।  সাবেক  তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৩২ হাজার ৫৫৮ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পান। তখন অবশ্য সাড়ে তিন হাজারের বেশি কালোটাকা সাদা হয়েছিল। বিদায়ী অর্থবছরের মতো এত ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ খুব একটা দেওয়া হয়নি। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে জমি-ফ্ল্যাটেও টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রথম দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। 

তখনকার সামরিক আইনের আওতায় এই সুযোগ প্রথম দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ৭০ কোটি টাকা, ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে ২০০ কোটি, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ২৫০ কোটি, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ৪০০ কোটি এবং ২০০০-০১ অর্থবছরে ১ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে এ সুযোগ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ২৫২ জন। ওই সময় ৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বৈধ হয়। এরপর সবচেয়ে বেশি কালো টাকা সাদা হয় ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়ে ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করে।  কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ সুযোগ আরো বাড়ানো হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, বন্ড ও পুঁজিবাজারে কালো টাকা সাদা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয় এ বাজেটে। বলা হয়, এক্ষেত্রেও আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। পুরো অর্থবছর এ সুযোগ পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছর রেকর্ড ২০ হাজার ৬০০ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে। ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা কালো টাকা বৈধ করেছেন। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশ স্বাধীনের পর কালো টাকা সাদা করা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এবার কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে যে সাড়া মিলেছে এটা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু এ ধরনের সুযোগ প্রত্যেক বছর দেওয়া উচিত হবে না। এমন সুযোগ বারবার দেওয়া হলে তা হীতে বিপরীত হতে বাধ্য। তখন সবাই অবৈধ টাকা উপার্জনের দিকে নজর দিয়ে দুর্নীতিতে মেতে উঠবে। যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য কালো অধ্যায়।  তখন তাদের ভাবনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হবে ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়েই তো বৈধ করা যায়। মির্জ্জা আজিজুল হকের মতে, কালো টাকা সাদা করার জন্য একটি নিদিষ্ট সময় দেওয়া উচিত। যে এই সময়ে মধ্যেই কালো টাকা সাদা করতে পারবে। এর পার আর পারবে না। তাহলে ভালো হবে। তা না হলে এভাবে কালো টাকা সাদা হলে অবৈধভাবে আয় করার প্রবণতা বেড়ে যাবে।  

এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সব সময়েই কালো টাকা সাদার করার বিপক্ষে। ১০ শতাংশ সুদে অবৈধ টাকা সাদা করার প্রবণতা থাকলে সবাই অবৈধ পথে টাকা আয়ের চেষ্টা করবে। পরে ১০ শতাংশ সুদে বৈধ করবে। ফলে এতে সরকারে রাজস্ব কমে যাবে। তাই কিভাবে বৈধ টাকা আয় করা যায় সেই পদ্ধতি সরকারের বের করতে হবে। এ ব্যাপারে রিহ্যাবের সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, আমরা সব সময়ে বলে আসছিলাম, অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে। এছাড়া যারা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করবে, তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। এর কারণে অনেকেই অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে ব্যয় করেছে। করোনার কারণে প্রথমদিকে আবাসান ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তা ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে আসাতে তেমন কোন প্রকার মহামারির প্রভাব পড়েনি। করোনার মধ্যে আবাসন খাতের ব্যবসা ভালো ছিল। এছাড়া তিনি আরো বলেন, আবাসন মেলা-২০২১ এ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বুকিং দিয়েছেন ক্রেতারা। মেলায় গৃহঋণ সংক্রান্ত ব্যাংক কমিটমেন্ট এসেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। কোভিড-১৯ কাটিয়ে সবাইকে এক করতে পেরেছি। এই রিহ্যাব ফেয়ারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করেছি। এটাই বড় সাফল্য। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]