টাকা দিতে চাইলাম, আমার টাকা না নিয়ে উল্টো আমাকে দুই হাজার টাকা দিছে, চা, বিস্কুট,কলা খাওয়াইছে, উকিলকে ফোন করে কম খরচে তারাতারি আমার কাজটা কইরা দিতে সুপারিশও করছে। কিš‘ এত অনুরোধ করার পরেও আমার অটো রিকসাটি দিলোনা। এমন ওসি জীবনেও দেহিনি। রবিবার রাতে আবেগ আপ্লূত ভাষায় এ কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার লাইট্রামারী চরের বাসীন্দা অটো চালক সাহেদ আলী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অটো চালক সাহেদ আলী এ প্রতিবেধককে জানান গত শনিবার দুপুরে ত্রিশাল থানাধীন বালিপাড়া এলাকা থেকে আমার একটি অটো রিকসা চুরি হয়। ওই দিন রাতেই চোরি হওয়া অটো রিকসাটিসহ চোরকে আটক করে গফরগাঁও থানা পুলিশ। খবর পেয়ে গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহমেদ স্যারের সাথে দেখা করলে তিনি বললেন গাড়িসহ চোরকে ধরেছি। আপনাকে বাদী হয়ে একটি চোরির মামলা করতে হবে। আপনার মামলায় এই চোরকে আদালতে পেরণ করা হবে। গাড়িটি এখন আলামত তাই এটা নিতে হলে কোটের অর্ডার লাগবে। তখন আমি ওসি স্যারকে বিনয়েরসাথে আমার পারিবারিক অবস্থা তুলেধরে বললাম আমি খুব গড়িব মানুষ। গাড়িটিই আমার একমাত্র অবলন্ধন। এই গাড়িটি চালিয়ে সারা দিনে যা উপার্জন করি তাতে আমার সংসার চলে। আমি মামলা করতে চাইনা। মামলা করলে কোট কাচারিতে দৌড় ঝাপ করতে হবে। উপার্জন করতে না পারলে আমার পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকবে। গাড়িটি উদ্ধার করতে আপনাদের অনেক কষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকজন পুলিশ এত দুর থেকে চোরসহ গাড়িটি উধ্ধার করে থানায় এনেছেন। আমি খুশি হয়ে আপনাকে খরচ বাবদ দশ হাজার টাকা দিতে চাই। এই দশ হাজার টাকা অনেক কষ্ট করে ধার কর্জ করে এনেছি, সমর্থ থাকলে আরও দিতাম। টাকাগুলো রেখে আমার গাড়িটি দিয়ে দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকিবো। আমার কথাগুলো শুনে পরম ভালবাসার সাথে মিষ্টি ভাষায় ওসি স্যার আমাকে বললেন থানায় আসলে টাকা লাগে কে আপনাকে বলেছে। আমরা সরকার থেকে বেতন পাই। এইযে দশ হাজার টাকা ধার করে এনেছেনা। শোধ করবেন কি ভাবে। ঘুষ নেয়া যেমন অন্যায় ঘুষ দেওয়াটাও অন্যায়। ওসি স্যার উল্টো আমাকে ২হাজার টাকা দিয়ে বললেন কোর্টের অর্ডার আনতে সর্বো”চ ২দিন লাগবে। যেহেতু দুই দিন আপনি উপার্জন করতে পারবেনা দৌড়ঝাপকরবেন তাই আমি আপনাকে ২হাজার টাকা খরচ দিয়ে সহায়তা করলাম। গাড়ি চোরের শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে মামলা দায়ের করতেই হবে। নয়ত চোরি আরও বেড়ে যাবে।মন চাইছে আপনার গাড়িটি দিয়ে দেই কিš‘ আইনগত কারনে দেয়া যাচ্ছেন। এ সময় পরম মমতার সাথে চা,বিস্কুট,কলাও খাইয়ে আপ্যায়নও করলেন।
আমি ওসি স্যারের সাথে কথাবলার সময় আনুমানিক সত্তর বছর বয়সের এক বৃদ্ধ মহিলা এসে ওসি স্যারকে কাদতে কাদতে বললেন স্বামী মারাগেছে ৫/৬ বছর আগে এখন তার ছেলে তাকে অত্যাচার করে খাবার দেয়না সারা দিন কিছু খাইনি কথাগুলো শুনে আবেগাপ্লূত ওসি সাহেব বৃদ্ধ মহিলার হাতে ৫শত টাকা তুলে দিলেন। থানার সেন্টিকে এই বৃদ্ধ মহিলাকে খাবার খাওয়াতে বললেন। পাশাপাশি একজন সাব ইন্সপেক্টরকে তদন্ত পুর্বক বেবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেন। সত্যি বলছি এমন সৎ ও মানব দরদী ওসি জীবনেও দেখিনি।
অটো চালক সাহেদ আলী আরও জানালেন চোরের পক্ষে কেউ একজন ওসি স্যারকে ফোন করে তদবীর করছিলেন। এক লক্ষ টাকার অফারও করছিলেন। সদা হাস্যজ্জল মিষ্টিভাষী ওসি স্যার হঠাৎ করেই প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। তদবীর যিনি করেছিলেন তাকে যে কথাগুলো বলেছেন ওসি স্যার তিনি সারা জীবন মনে হয় অন্যায় কাজে আর তদবীর করবেননা।
অটো চালক সাহেদ আলীর সাথে থানার সামনে কামরুলের চাষ্টলে বসে কথা বলার সময় ওই চা ষ্টলের মালিক কামরুল ইসলাম আমাদের কথাগুনে শুনে বললেন গত তিন চার দিন পুর্বে উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের পাগলার বাজার মোড় এলাকা থেকে তাস দিয়ে জুয়া খেলার সময় চার জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে এসেছিলো। পরে ওদেরকে ছেড়ে দিতে অনেক তদবীরের পাশাপাশি একলক্ষ ২০হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে চাইছিলো। কিন্তু ওসি স্যার ছাড়েনিনি। কোটে চালান করেছেন। ঘুষ অফার করা নিয়েও তদবীরবাঝদেরকে কঠিন হুশিয়ার করেছেন ওসি ফারুক স্যার। এমন অনেক ঘটনাই আমরা জানি লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে এসেও কাজ অন্যায় কাজ করতে পারেনি।
এসময় ওই চায়ের দোকোনে বসে থাকা গফরগাঁও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আরডিপির সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ সাংবাদিক ফকির এ মতিন ও গফরগাঁও আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রী কলেজের প্রফেসর আরসাদ একই সাথে বলেন গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহম্দে শতভাগ দায়িত্বশীল অসম্ভব সৎ ও মানবদরদী। গভীর দেশপ্রেম,সততা নিষ্ঠা, নীতির প্রশ্নে আপোষহীণতার সাথে সর্বো”চ পেশাদারিত্ব আর দৃঢ় মানসিকতারই পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মানুষের সাথে খুব সুন্ধর সাবলিন ভাষায় কথা বলেন। কর্মগুনে আলো ছড়ানো এই ওসির প্রতি দিন মানুষের ভালভাসা শ্রদ্ধা আর দুর্বলতা বেড়েই চলছে। দৃঢ়চেতা মনোভাব ও সাহসী নেতৃত্বে নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আলোকিত-বিকশিত করেছেন। তাঁর প্রতি আ¯’া-বিশ্বাস অটুট রয়েছে গফরগাঁওবাসীর। প্রতিদিন গভীররাতেও ওসি সাহেবকে গফরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা গাড়ি নিয়ে টহল দিতে দেখা যায়। সত্যিই তিনি ভালো মানুষ।
এসময় চায়ের দোকানে বসে থাকা সকলেই ওসি ফারুক আহম্মেদের অনেক ভালো ভালো কাজের উদাহারণ দিয়ে তারা বলেন আড়াই যুগে যে কাজ না হয়েছে তিনি তা আড়াইমাসেই করেছেন। মাত্র ৭৫ দিনে পুলিশ জনতার মধ্যে দুত্বের চিরচারিত প্রথা ভেঙ্গে দিয়ে প্রমান করেছেন পুলিশ জনতার বন্ধু।
পুলিশের উপর ঘুষের কলঙ্কও অনেকটাই মুছে দিয়েছেন তিনি। অমুল উন্নয়ন সাধিত করেছেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনেও। কমিনিউটি পুলিশের কার্যক্রমও আগের চেয়ে চাঙ্গা করেছেন।
চর আলগী ইউনিয়নের বাসীন্দা সজিব মিয়া জানান তার স্কুল পড়–য়া শালিকা অপহরণের ঘটনায় মামলা দায়ের থেকে শুরু করে ভিকটিমকে উদ্ধারও করেছে গফরগাঁও থানা পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতে নিয়েগিয়ে জবানবন্ধি প্রদান করিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি টাকাও তার খরচ হয়নি। সত্যি ওসি সাহেব খুব ভালো মানুষ।
জানা যায় গত আড়াই মাস পুর্বে গফরগাঁও থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন ফারুক আহমেদ। যোগদানের আড়াই মাসে বদলে দিয়েছেন গফরগাঁও থানা এলাকার চালচিত্র। দেশের বহুল আলোচিত জনপথ গফরগাঁওয়ের আইন শৃঙ্ঘলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অনেকটা চ্যালেজ্ঞ ছুড়ে দিয়েই মঠে নেমেছেন তিনি। দিবারাত্রী অভিযান পরিচালনা করে মাত্র আড়াইমাসে রেকর্ড সংখ্যক অপরাধীদের গ্রেফতার করেছেন। শুধু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নেই সিমাবদ্ধ থাকেননি। দায়িত্ব পালনের গন্ডি অতিক্রম করে গফরগাঁওবাসীর সাথে গড়ে তুলেছেন ভালবাসার মেলবন্ধন। পুলিশের আচার আচরন ও দায়িত্বশীল ভুমিকাতেও মনোমৃগ্ধ করেছেন গফরগাঁওবাসীকে।
গফরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)ফারুক আহম্মেদ এ প্রতিবেধককে জানান, থানায় আসলে কোন টাকা লাগেনা, পুলিশ বিনে পয়সায় মানুষের সেবা করে। পুলিশ জনগনের বন্ধু। এ কথাগুলো শতভাগ বাস্তবায়ন করা আমার প্রথম কাজ। এমপি মহোদয়, রেঞ্জ ডি আইজি ও জেলা পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশনার সঙ্গে বাস্তবতার সম্মিলন ঘটিয়েই পথ চলছি।