শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
হবিগঞ্জের সাতছড়ি উদ্যানেই কেন বার বার অস্ত্রের সন্ধান মিলছে?
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:৫৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে বুস্টারসহ রকেট প্রফেল গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। 

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি জানান, রবিবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আবেল ত্রিপুরা অমিত নামে খাগড়াছড়ির এক যুবককে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে সঙ্গে নিয়েই সাতছড়িতে অভিযান চালায় সিসিটিসি। অভিযানে সাতছড়ির গহীন অরণ্য থেকে ১৫টি রকেট প্রফেল গ্রেনেড, ২৫টি বুস্টার ও লংরেঞ্জ স্বয়ংক্রিয় মেশিনগানের ৫১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। অমিতকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখা হয়েছে। তথ্য পেলে অভিযানও অব্যাহত থাকবে।

ভারতীয় সীমান্তের অদূরে অবস্থিত এই সাতছড়ির বনাঞ্চলে এ ধরনের অভিযান নতুন নয়। গত কয়েক বছরে এখানে অনেকগুলো অভিযান চালিয়েছে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেশকিছু ভারী অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে কামান বিধ্বংসী রকেট, রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, মেশিনগান এবং কয়েক হাজার হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করে র‍্যাব।

ঐ বছরেই আরো দু'দফা অভিযান চালিয়ে আরো কিছু অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী।

এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাতছড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০টি হাই এক্সপ্লোসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করা হয়।

তাছাড়া ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ১৩টি রকেট লঞ্চারের শেলসহ কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

এ বছরই মার্চ মাসে সাতছড়িতে আরেকটি অভিযান চালিয়ে ১৮টি ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট শেল উদ্ধার করে বিজিবি।

এ এলাকায় সর্বশেষ অভিযানটি চালানো হয় গত ১৩ আগস্ট। সেদিন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন একটি ব্রিজের পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় নয়টি একনলা বন্দুক, তিনটি পিস্তল ও ১৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি।

সাতছড়িতেই কেন অস্ত্রের মজুদ?

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই একটি জায়গায় কেন বার বার এ ধরনের ভারী অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভৌগলিকভাবে হবিগঞ্জের সাতছড়ির অবস্থান এমন যে এটি অস্ত্র আনা, নেয়া এবং জমা করার জন্য নিরাপদ একটা জায়গা হতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান বলেন "জিওগ্রাফিক্যালি এই এরিয়াটা বন-জঙ্গল ঘেরা এবং এখানে মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে কাজ করার অত্যন্ত সহজ"।

ভারতের সীমানা ঘেঁষা এই সাতছড়িতে এর আগেও কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তবে যারা এখানে অস্ত্র, গোলাবারুদ রাখছে তারা কেন বার বার একই স্থানে অস্ত্র মজুদ করছে?

রব বলেন "এটা একটা সাইকোলজিক্যাল গেস (মনস্তাত্ত্বিক অনুমান) যে, আচ্ছা কয়েকবারই তো ধরা গেল, আর বোধহয় এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। এই সুযোগটা তারা কাজে লাগাতে পারে। এমন একটা অনুমান থেকে তারা এটা করতে পারে"।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, অস্ত্রগুলো দেখলে বোঝা যাবে এটা নতুন করে মজুদ করা হয়েছে নাকি ২০১৪ সালে যে অস্ত্র মজুদ করা হয়েছিল সেটাই কয়েক দফায় উদ্ধার করা হচ্ছে সেটা অনুমান করা যাবে।

"যখন এই ধরণের একটা জায়গাতে সিলেক্ট করা হয় অস্ত্র মজুদ করার জন্য তখন এক জায়গায় রাখা হয় না। চারিদিকে টানেল করা হয়। বিভিন্ন টানেলে এগুলো মজুদ করা হয়।"

"এমন হতে পারে অস্ত্রগুলো তখন বিভিন্ন টানেলে মজুদ করা হয়েছিল। সেটা অস্ত্রগুলো দেখলে বোঝা যাবে কতটা পুরোনো" বলেন তিনি।

সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা

সাতছড়ি এলাকাটা এক সময় বনজঙ্গলে ঘেরা একটা দুর্গম এলাকা ছিল। পরে এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হলেও সাধারণ মানুষের এখানে অবাধ যাতায়াত নেই। বিশেষ করে বর্ষার সময় স্থানটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়।

এছাড়া এখানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত এলাকার সাথে যুক্ত এমন অসংখ্য রাস্তা আছে। তাই অস্ত্র মজুদ করার এটা একটা আদর্শ স্থান বলে মন্তব্য করছেন তারা।

ত্রিপুরার কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠী কি এর পেছনে?

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন "এরকমও হতে পারে ত্রিপুরা লিবারেশন ফ্রন্টের একটা অংশ এখনো একটিভ আছে। অনুমান ভিত্তিক বলা যায় এই অস্ত্রগুলো তাদের এবং তারাই রেখেছে, মজুদ করেছে"।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে এত বড় কোন সশস্ত্র গোষ্ঠী নেই যারা এধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল- তারা ছিল বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে। সেই গোষ্ঠী এখানে অস্ত্র মজুদ করবে না বলে তারা মনে করেন।

"যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে তাতে এত ম্যাসিভ অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না। সেই জায়গাটাতে ডেফিনিটলি এখানে হয়ত কোন গ্রুপ আছে যারা পাহারা দিয়ে রাখছে। তাদেরকে টাকা দিয়ে রাখা হয়"- বলেন মি. হোসেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান বলেন "যদি বাংলাদেশের মধ্যে এই অস্ত্রের ব্যবহার কেউ করতে চায় তাহলে একটা হতে পারে- খুব তাড়াতাড়ি ব্যবহার করা হবে এটা না চিন্তা করে নিরাপদ-ভাবে রাখার কথা চিন্তা করেই রাখা হয়েছে। "

"যেহেতু দেশের যেকোন স্থানে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে না- তাই তারা আপাতত সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে"- বলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]