প্রকাশ: সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৫৭ পিএম আপডেট: ২৭.১২.২০২১ ১০:১১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং তাতে ৪০ জন নিহতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র্যাব।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান। এর আগে এদিন সকালে কেরানীগঞ্জ থেকে লঞ্চটির মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেফতার করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ গত নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। এর জন্য নেয়া হয়নি কোনো অনুমোদন। লঞ্চটিতে কর্মরত তিনজন (মাস্টার, ড্রাইভার) কর্মচারীর নৌ-পরিবহন অধিদফতরের জাহাজ চালানোর অনুমোদনও নেই।
তিনি আরো বলেন, লঞ্চটিতে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার মোবাইল ফোনে মালিক হামজালালকে আগুন লাগার বিষয়টি জানান। কিন্তু তিনি কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবা কোথাও জানাননি, বরং চুপচাপ থাকেন। আগুন লাগার পর লঞ্চের ক্রুরা (২৬ জন) জ্বলন্ত ও চলন্ত লঞ্চ রেখে পালিয়ে যান। এতেই ঘটনাটি আরো মর্মান্তিক হয়। এছাড়া লঞ্চে কর্মরত তিনজনের (মাস্টার ও ড্রাইভার) সরকারি কোনো চালনার অনুমোদন ছিল না।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার মালিকের তথ্য অনুযায়ী, ঘাট থেকে বিলম্বে লঞ্চ ছাড়লেও গন্তব্যে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ৭২০ হর্স পাওয়ারের জাপানি রিকন্ডিশন ইঞ্জিন সংযোজন করার সময় সাধারণ মেকানিককে ব্যবহার করা হয়।
যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না জানিয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, লঞ্চে শুধু কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে গ্রেফতার মালিক জানিয়েছেন। তবে অধিকাংশ বয়াই যথাস্থানে ছিল না। এ ছাড়া লঞ্চটির কোনো ইনস্যুরেন্সও করা ছিল না বলে গ্রেফতার হামজালাল শেখ জানিয়েছেন।
ঘটনার সময় ত্রুটির কারণে ইঞ্জিনে বিকট শব্দ হচ্ছিল। চিমনি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ধোঁয়া বের হচ্ছিল না। সঙ্গে ছিল অস্বাভাবিক গতি। এক পর্যায়ে ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হয়। তখন পুরো লঞ্চের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইঞ্জিন রুম থেকেই লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আগুন দেখার পর কাছাকাছি তীরে ভিড়িয়ে যাত্রীদের বাঁচানোর চেষ্টা না করে কর্মচারীরা সবাই পালিয়ে যায়। মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার বলেন, প্রাথমিকভাবে জেনেছি ওই লঞ্চটিতে স্টাফ ছিল ২৬ জন। মূল স্টাফ ২ জন, মাস্টার ২ জন ও ড্রাইভার বাধ্যতামূলক থাকতে হয়। ঘটনার পর মালিককে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও অন্যান্য মাস্টার বা স্টাফরা পলাতক। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে লঞ্চে অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে।
ভোরের পাতা/কে