শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ
চিকিৎসক সংকটে বেহাল প্রান্তিক
হাসপাতালের গেটে রোগীদের ভিড়, ফিরতে হচ্ছে চিকিৎসা না নিয়ে
রতন বালো
প্রকাশ: সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:২৬ এএম | অনলাইন সংস্করণ

শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জণ্ডিস, আমাশয়সহ বহুবিধ রোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, প্রতিদিন হাসপাতালগুলোর বহিঃবিভাগে ৬০০ থেকে ৭০০ শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২০০ থেকে ৩০০ শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। শৈতপ্রবাহ এলাকা তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ে সদর হাসপাতালে ১০০ বেডের হাসপাতালে ১৭০ থেকে ১৮০ জন রোগী ভর্তি আছে। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে। ফলে চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে রোগীদের।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, এই মুহূর্তে হাসপাতালে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শীতকালীন ডায়রিয়া, ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ ফ্লু ভাইরাসজনিত রোগ নিয়ে আসছে। এছাড়া ১২ থেকে ১৫ শতাংশ নিউমোনিয়া এবং দুই বছরের কম বয়সীরা ব্রংকাইটিস ও হাঁপানি সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।

এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, শীতে শিশুদের প্রতি একটু বিশেষ নজর রাখলে ঠাণ্ডাজনিত রোগ এড়িয়ে যাওয়া যায়। যেমন- শিশুকে গরম পানিতে গোসল করানো যেতে পারে। তা না পারলেও শিশুর গায়ে যেন গরম জামা-কাপড় থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। খোলা হাওয়ার মধ্যে শিশুকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া ঠিক হবে না। শিশুকে মায়ের অথবা অভিভাবকের কাছাকাছি রাখতে পারলে এদের যত্ন নেওয়াও সম্ভব হয়। ফলে অনেক রোগব্যাধি থেকে শিশুদের রক্ষা করা যায়। 

ডা. আতিয়ার রহমান আরও জানান, বয়স্করা নিজের যত্নটা নিজে নিতে পারেন কিন্তু তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বয়স্কদের শিশুদের মতো নিজের দেহের খেয়াল রাখার মানসিকতা থাকতে হবে।

এদিকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন রোগীরা ভিড় করছে। সবচেয়ে দুরাস্থার ভেতরে রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না মেলায় তাদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে অনেক জেলা উপজেলায় ডাক্তার সংকট রয়েছে। কাগজে কলমে তাদের নাম থাকলেও এসব চিকিৎসকরা নিয়মিত অফিস করেন না বলে অভিযেগ রয়েছে। আবার মফস্বলে দোহাই দিয়ে তারা অফিস না করেও মাসের শেষে বেতন ভাতা তুলে নিয়ে যান। বারবার সরকারি হুঁশিয়ারিসত্বেও হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়নি যার খেসারত দিচ্ছেন এলাকাবাসী।

সবমিলিয়ে শীতজনিত কারণে চলতি ডিসেম্বর মাসের রবিবার পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ২৮৮ জন। ডায়রিয়ায় ২০ হাজার ৮৫৯ জন। জণ্ডিস, আমশয়, চোখের প্রদাহ, চর্ম ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৬৬০ জন। মোট ৬০ হাজারেও বেশি আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ বেশির ভাগ হাসপাতালে প্রতিদিন আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে। কেউ ভর্তি হচ্ছে। কেউ বহিঃবিভাগের ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা গাইডলাইন নিচ্ছেন। চলতি মাসের গত কয়েক দিনে শিশুসহ নানা বয়সের ৬০ হাজারেরও বেশি রোগী শীতজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে অভিভাবকদের আরও সচেতন থাকতে হবে। গরম জামা কাপড় পরিয়ে শিশুদের রাখতে হবে। আর কুসুম গরম পানি শিশুদের খাওয়াতে হবে। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য শীতজনিত রোগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ জানান, শীতের শুরুতে গত কয়েক দিন ধরে শিশু হাসপাতালে সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাপানি, ডায়রিয়া ও চর্মরোগী বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে শিশু হাসপাতালে ৪৮ জন শিশু শুধু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে যারা বেশি অসুস্থ তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর যাদের ভর্তি না করলে চলে তাদের চিকিৎসা গাইডলাইন দেওয়া হয়। এখন প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডা. দেবব্রত বনিক জানান, ঠাণ্ডায় ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি, কাশি কোভিডের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এটা শিশু বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হয়। ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখতে গরম পোশাক পরাতে হবে।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক তথ্যে জানা গেছে, শীতজনিত কারণে চলতি ডিসেম্বর মাসে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ২৮৮ জন। ডায়রিয়ায় ২০ হাজার ৮৫৯ জন। জণ্ডিস, আমশয়, চোখের প্রদাহ, চর্ম ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৬৬০ জন। মোট ৬০ হাজারেও বেশি আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রো-ভিসি প্রফেসর ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন জানান, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। তাদের গরম কাপড় পরে চলাচল করতে হবে।

আগে থেকে যারা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাদের শীঘ্রই ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে পরামর্শ নিতে হবে। ফুসফুসের সমস্যা, নিউমোনিয়া ইনফ্লুয়েঞ্জা সমস্যা হলে আগেই টিকা বা ইনজেকশন নিতে হবে। আর শীতের সময় প্রচুর পানি ও ফলমূল খাওয়াতে হবে। বয়স্কদের দিনে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে। 

রাজধানীর শ্যামলী টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, ঋতু পরিবর্তনের পর এখন শীত শুরু হয়েছে। এখন স্বাস্ব্যবিধি মেনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে চলতে হবে। বাসাবাড়ি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখলে ভালো হবে। আর শীতে শিশুদের গরম কাপড়ের পাশাপাশি বাইরে না যাওযাই ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন। সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের থেকে দূরে থাকাই ভালো। করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা হয়। এখনো মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাবে বলে তিনি মনে করেন।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে শীতে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।

রবিবার রাতে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. ফজলুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ে সদর হাসপাতালে ১০০ বেডের হাসপাতালে ১৭০ থেকে ১৮০ জন রোগী আছে। বহিঃবিভাগে রোগী দেখা হয়। তবে তেঁতুলিয়াসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে। ওই অঞ্চলে চিকিৎসক থাকতে চায় না। অনেকগুলো পদ এখনো শূন্য রয়েছে। যারা আছেন তারা সর্বক্ষণ দায়িত্ব পালন করছেন। কোন অসুবিধা হয় না। ডাক্তার বেশি থাকলে আরও সুবিধা হতো বলে তিনি মতামত দেন। 

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক এ এফ এম গাউসুজ্জামান জানান, শীত থাকবে আরো দুই তিন দিন। কুড়িগ্রামে, পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতেও শীত জেকে বসেছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]