রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দ্রুত জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধন করে দেয়ার আশ্বাসে কুপ্রস্তাবসহ অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তৈয়বুর রহমানের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দৌলতদিয়া বাজার এলাকার বাসিন্ধা এক গার্মেন্টস কর্মী (২০) জানান, বর্তমানে গার্মেন্টসে চাকরীর ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। তার কাছে থাকা পুরোনো জম্ম নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তিনি সেটা ডিজিটাল করতে কিছুদিন আগে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে ইউপি সচিব তৈয়ুবুর রহমান সনদটি ডিজিটাল করে দেওয়ার আশ্বাসে তাকে অযথা ঘুরাইতে থাকে। প্রায়ই তিনি আমাকে সন্ধ্যায় তার অফিসে একা একা যেতে বলেন। ওখানে যাওয়ার পর তিনি নেটওয়ার্কের সমস্যার কথা বলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বসিয়ে রাখেন এবং আকার ইঙ্গিতে কুপ্রস্তাব দেয়। এছাড়াও তিনি কয়েকবার আমার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করেন।
ওই তরুনী আরো জানান, তার ছুটির সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি সচিবের চাহিদা মতো নগদ ৭শ টাকা দিয়ে জন্মনিবন্ধনটি হাতে পান। তবে আরো ৫ শ টাকা পাঠানোর জন্য তিনি আমাকে সাদা কাগজে একটি বিকাশ নম্বর লিখে দেন। পরবর্তিতে ওই ৫শ টাকার জন্য তিনি বার বার আমার ফোনে তাগিদ দেন। আমি বেতন না পেয়ে টাকা দিতে দেরি হওয়ায় এক পর্যায়ে তার মোবাইল নম্বরটি ব্লক করে রাখি। এ সব বিষয়ে চেয়ারম্যান যেনো না জানে সচিব সে বিষয়েও আমাকে সতর্ক করে দেন।
সরেজমিন জানা যায়, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিদিনই বহু লোক জম্মনিবন্ধনের জন্য দিনের পর দিন হয়রানি হচ্ছে। এদের অনেকের কাছ থেকেই সচিব অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন বলে তারা অভিযোগ করেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ০ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর জন্য ২৫ টাকা এবং ৫ বছরের উপর শিশুদের জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য ৫০ টাকা নেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া পরিষদে সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে তিনি অসদাচরণ করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চর দৌলতদিয়া এলাকার বাসিন্দা আবুল খা নামের একজন বলেন, সচিব তার নিকট থেকে একটি জম্ম নিবন্ধন সনদ ডিজিটাল করার জন্য ৪ শত টাকা নিয়েছেন। তারপরও অনেকদিন ঘুরতে হয়েছে।
শাহাদাৎ মেম্বার পাড়া এলাকার রনি খন্দকার জানান, আমি আমাদের পরিবারের ১০টি জন্ম নিবন্ধন করেছি। এর মধ্যে প্রথম ৬টি নিবন্ধের জন্য ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ৬শ এবং সচিব ৬শ টাকা নিয়েছে। পরবর্তী ৪টি জন্য ডিজিটাল সেন্টারে ৪ শ টাকা এবং সচিবকে ২ শ টাকা দিতে হয়েছে। তারপরও দীর্ঘদিন ঘুরে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
স্হানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, সচিব তৈয়বুর রহমান দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত রয়েছেন। এ সময়কালে তিনি অবৈধ পন্থায় বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। রাজবাড়ী শহরে আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন।
এসব বিষয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তৈয়ুবুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সার্ভারে সমস্যা থাকায় আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়তো সকলের নিবন্ধন সংশোধন করে দিতে পারছি না। তাই বলে কারো কাছ থেকে কোন বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে না। তরুণীকে জড়িয়ে যা বলা হচ্ছে এটাও একেবারে ভিত্তিহীন। এছাড়া তিনি অবৈধভাবে কোন অর্থ-সম্পদ অর্জন করেননি।
এ বিষয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ রহমান মন্ডল বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে মাত্র ২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। সচিবের দীর্ঘ দিনের কর্মকান্ড সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই। তাছাড়া আমার নিকট তার বিরুদ্ধে কেউ কোন ধরনের অভিযোগও করেন নাই। অভিযোগ পেলে তদন্ত পৃর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুল হক বলেন, এ বিষয়ে তার কাছেও কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।