সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ জনে। এদের মধ্যে ৬ জনের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বাকি ৩৬ জনের মরদেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাসানুর রহমান রিমন ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মরদেহগুলো গ্রহণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে বরগুনা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে শহরের পৌর মিনি পার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ঝালকাঠি পৌরসভার মিনি ট্রাকে মরদেহগুলো নেয়া হয়। এর আগে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়।
অপরদিকে নিখোঁজদের খোঁজে ঝালকাঠির সুগন্ধা নতীর তীরে আসা শোকার্তদের আশ্রয় দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঝালকাঠি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শোকার্ত স্বজনদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব পরিবার থেকে নিখোঁজ রয়েছে তাদের ডিএনএ নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। লঞ্চটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর বরগুনার ১০ যাত্রী বেঁচে ফিরলেও এখনো নিখোঁজ আছেন অনেকে।
শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বরগুনার নৌবন্দরে অপেক্ষা করেও অনেক যাত্রীর খোঁজ পাননি স্বজনরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। তথ্যমতে বরগুনার ১৯ জন নিখোঁজ আছেন।
তারা হলেন- বরগুনার মাইঠা এলাকার ইদ্রিস খান, নলী এলাকার আবদুল হাকিম, চাঁদপুরের মনোয়ারা, পাথরঘাটার টেংরার পপি আক্তার, পাথরঘাটা পৌরসভার তালতলা এলাকার আবদুর রাজ্জাক, পাথরঘাটার কালমেঘার কালিবাড়ি এলাকার রাকিব মিয়া, বরগুনা সদরের হাফেজ তুহিনের মেয়ে (নাম অজ্ঞাত), সদরের ছোট আমতলী এলাকার জয়নব বেগম, মির্জাগঞ্জ উপজেলার রিনা বেগম ও তার মেয়ে রিমা, বরগুনা সদরের পরীরখাল এলাকার রাজিয়া ও তার মেয়ে নুসরাত, সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউপির খাজুরা গ্রামের মইন, তার ছেলে আবদুল্লাহ ও শালি আছিয়া, বরগুনা ঢলুয়া এলাকার মোল্লারহোড়া গ্রামের তাসলিমা, তার মেয়ে মিম ও তানিশা এবং ছেলে জুনায়েদ। স্বজনদের খুঁজতে সন্ধ্যায় তাঁরা ঝালকাঠিতে আসেন। রাতে নিরাপদে থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতের গরম কাপড়সহ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি রুমে আশ্রয় দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিসি মো. জোহর আলী জানান, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ বরগুনার এমপি শওকত হাচানুর রহমান ও জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে ৬ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত ও নিখোঁজ যাত্রীদের বিষয়ে যেকোনো তথ্য জানা বা অবহিত করার জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুম খুলেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। এরপর সন্ধ্যা থেকেই বিষয়টি নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
ঘোষণায় বলা হয়, এরই মধ্যে নিহতদের মরদেহ বরগুনা আনা হয়েছে। মরদেহ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে রাতে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করার জন্য কন্ট্রোল রুমের মোবাইল নম্বর ০১৭১৬৭০০২৭০ এবাং টেলিফোনে ০২৪৭৮৮৮৬২৪৮ যোগাযোগ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে। হাসপাতাল থেকে স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে যেতে পারবেন। তাছাড়া নিখোঁজদের খোঁজতে আসা শোকার্তদের রাতে থাকার জন্য সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি কক্ষ খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে শীত নিবারণের জন্য কম্বল দেয়া হয়েছে