বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে: আব্দুল্লাহ আল বাকী
এ বছর আমাদের বিজয়ের ৫০ বছর অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। সকল বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি জাতিকে যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ তা পূর্ণতা পেয়েছে। সোনার বাংলার লক্ষ্য অর্জন শেষে বাঙালি জাতি এখন এক নতুন ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিমুখে যাত্রা করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার মানবিক নেতৃত্বে বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনমান আমূল বদলে গেছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৬৩তম পর্বে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকী, অস্ট্রিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ ভিয়েনার সভাপতি রবিন মোহাম্মদ আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে সেটা দেখলেই আমারা বুঝতে পারবো যে এই পঞ্চাশ বছরে আসলে বাংলাদেশের অগ্রগতি কতদূর হয়েছে। সে সময়ে আমাদের প্রত্যাশা কি ছিল এবং আজ আমাদের প্রত্যাশা কি সেটার মধ্যেও কিন্তু বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে যে ছয় দফা দেন বা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের ভাষণে যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় দেখিয়েছিলেন এই পঞ্চাশ বছর পর এসে আমরা দেখেছি যে আল্লাহ্র রহমতে আমরা আজ তার স্বপ্নের সোনার বাংলা থেকেও অনেক এগিয়ে গিয়েছি। গত দুই দশকে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে সাত শতাংশ এবং করোনাকালে পাশ্চাত্যের বহুদেশে যখন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা পাঁচভাগ অতিক্রম করেছে। অধিকাংশ দেশে জাতীয় আয় ও প্রবৃদ্ধি ঘটলেও সামাজিক সূচকে তার প্রতিফলন ঘটে না। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সামাজিক সূচক সমূহে ইতিবাচক অগ্রগতি দৃশ্যমান। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হারের বিশাল উন্নতি হয়েছে, ছয় কোটি ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা লাভ করছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বাধীন সরকার করোনার ভ্যাকসিন দেশের মানুষের জন্য বিনা পয়সায় যে রকম সহজলভ্য করেছেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে তা তুলনাহীন। শুধু করোনা ভ্যাকসিনই নয়; সরকার এই সময় কর্মহীন হয়ে পড়া এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য এবং আর্থিক সহায়তার ফলে সামাজিক সুরক্ষার দিকটি মুখ থুবড়ে পড়েনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন, শিল্পকারখানার উন্নয়ন, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দারিদ্র্যের হার কমে আসে, মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়, গড় আয়ু বেড়ে যায়, স্বাস্থ্য সেবা উন্নত হয়, দেশের সকল নাগরিকের শিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়।
আমি আরেকটি বিসয়ের উপর জোরআরোপ করতে চাচ্ছি যে, বিশ্বের প্রায় বেশিরভাগ দেশেই বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। অথচ এই প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোট দেওয়ার অধিকার এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি কোনো সরকার। একজন বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বের যেকোনো দেশেই বসবাস করুন না কেন, বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচনে তার ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে বাস্তবে এ দৃশ্যের কোনো দেখা নেই। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় দুই কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন। এই নাগরিকের অনেকের ভোটার তালিকায় যেমন নাম নেই, তেমনই বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রও নেই অনেক প্রবাসীর। প্রবাসী নাগরিকদের ভোট গ্রহণ খুব বেশি ব্যয়বহুলও নয়। ডিজিটাল মাধ্যমে হাইকমিশনের সহায়তায় এই প্রবাসী নাগরিকরা যাতে ইভিএমের মাধ্যমে তাদের ভোট প্রদান করতে পারে সেজন্য তাদের ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ থেকে শুরু করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল পরিকল্পনা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা উচিত। আরেকটি বিষয় সম্পর্কে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভোরের পাতা সংলাপের মাধ্যমে জানাতে চাচ্ছি যে, অনেক দিন ধরেই ঢাকা-প্যারিসের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার জন্য ফরাসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে, এই বিষয়ে দ্রুত আশাব্যঞ্জক ফলাফল প্রত্যাশা করছি আমরা।