বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ। স্বাধীন বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনিই প্রথম পুলিশের মহাপরিদর্শক, যিনি অর্ধ-শতাব্দীর পুলিশ বিভাগের নতুন বিস্ময়। তাকে ঘিরে কেবল পুলিশ বিভাগ নয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন জেগেছে।
নতুনত্ব, সিদ্ধান্ত আর অর্জন-সাফল্যে ভরপুর তাঁর দীর্ঘ ৩৩ বছরের বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবন। পাড়ি দিয়েছেন অনেক বন্ধুর পথ। প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক ও স্মার্ট নেতৃত্বের পথিকৃৎ। কথার সঙ্গে বাস্তবতার সম্মিলন ঘটিয়েই পথ চলেছেন একজন ড.বেনজীর আহমেদ।
ডিএমপি কমিশনার বা র্যাবপ্রধান হিসেবেই নয়, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবেও দেশপ্রেমের প্রোজ্জ্বল শিখায় নিজের দৃঢ়চেতা মনোভাব ও সাহসী নেতৃত্বে নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে আলোকিত-বিকশিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস অটুট রয়েছে সতের কোটির বাংলাদেশের। দেশপ্রেমের স্বাতন্ত্রিকতায় পথচলা এই পুলিশপ্রধানকে আবারও ‘টার্গেট’ করা হয়েছে।
তথ্য-প্রমাণহীন পূর্ণ মিথ্যাচারের মনগড়া মতলবি এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে কথিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা! একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক আরও ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নীতি-নৈতিকতার মানদন্ডে যুগোত্তীর্ণ পুলিশের এই ইন্সপেক্টর জেনারেল আহত পাখির মতো আর্তনাদ করেননি।
দমেও যাননি একবিন্দু। বরাবরের মতো এবারও অটল থেকেছেন বিকশিত বৃক্ষের মতোই। সর্বাঙ্গ রুধির মেখে সব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠায় নিরন্তর প্রয়াস নিয়েছেন। প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন। সাফ সাফ জবাব দিয়েছেন। পুরো বিষয়টিকে তিনি বলেছেন, ‘ভেরি আনফরচুনেট’।
তাঁর ভাষ্য হচ্ছে-‘ যুক্তরাষ্ট্র একটি মহান ডেমোক্রেসি। সেখানকার কিছু জনপ্রতিনিধি, আমাদের দেশ বিরোধী শক্তির দীর্ঘমেয়াদী অপপ্রয়াস প্রসূত দু:খজনকভাবে প্রভাবিত হয়ে এই কাজটি করেছেন। যার ভিত্তি মিথ্যা, অসত্য ও বানোয়াট, মিসকন্সট্রুথ ফ্যাক্ট। ডেফিনেটলি বলবো, এটি একটি আনকমফোর্ট জোন তৈরি করেছে অনাকাক্সিক্ষতভাবে।’
নিজের সুস্পষ্ট এই উচ্চারণের মাধ্যমে যেন দীর্ঘ কন্টকাকীর্ণ পথে ষড়যন্ত্রের কুহেলী জাল ভেদ করে ৭১’র সুমহান চেতনা, গভীর দেশপ্রেম, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব আর দৃঢ় মানসিকতারই পরিচয় দিয়েছেন পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদ। গত মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দেশের বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অনেক কঠিন বিষয়ে সোজা-সাপ্টা জবাবই দিয়েছেন।
অমিত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ডিএমপি কমিশনার বা র্যাব ডিজি হিসেবে তিনি যে দায়িত্ব পালন করেছেন তার সবাই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। রাজনৈতিক নয়, নগরবাসীর শান্তির হাতিয়ার হিসেবেই সেই সময় কাজ করেছে পুলিশ। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বাহিনীটির সদস্যদের মনোবল ভাঙবে না, বরং পেশাগত প্রত্যয় আরও সুদৃঢ় হবে বলেও জানান দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
কেউ প্রত্যাশা করেনি, ঘটনাটি ঘটা উচিত হয়নি
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের পর দেশবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চারের বিষয়টি মোটা দাগে সামনে তুলে আনেন। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে রিঅ্যাক্ট করেছে? মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার রিফ্লেকশনস আছে ওভার দিস দি সিচুয়েশনস। সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতেও রিফ্লেকশনস আছে। ইফ উই ওয়াচ দি রিফ্লেকশনস তাহলে বুঝা যাবে এই বিষয়টি খুবই দু:খজনক এবং অনভিপ্রেত। উভয় পক্ষের কেউ প্রত্যাশা করিনি, এই ঘটনাটি ঘটা উচিত হয়নি।’
আইজিপির প্রশ্ন ‘হোয়াই মি’?
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মী বলছিলেন, ‘২০০৪ সালে র্যাবের যাত্রা শুরু। যে ক’টি প্রসঙ্গ তুলে আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই শুরু থেকে র্যাব সম্পর্কে বলা হতো। কেন ২০২১ এই সময়ে এবং যাদেরকে বেছে নেওয়া হলো?’ প্রশ্ন করতেই স্মীত হেসে ড.বেনজীর আহমেদ পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘হোয়াই মি’?
বলতে থাকেন, ‘আমি বহু বছর আগে একটি বই পড়েছিলাম, বইয়ের শিরোনাম ছিল ‘হোয়াই মি’? আমি খুব আশ্চর্য হইনি এজন্য যে, যারা এটির পেছনে আছে তারা কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরেই এটি করার চেষ্টা করে আসছে। তারা কিন্তু লুকিয়ে ছাপিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছেন না, প্রকাশ্যেই করছেন। এই ঘোষণাটি আসার পর একজন লিখেছেন- পরবর্তী গন্তব্য জাতিসংঘ।
মার্ডারারস ক্যান নট বি পিস কিপারস। দেখেন একজন বাংলাদেশের মানুষ তাঁর সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশকে বলছে মার্ডারার। এখন তাহলে বুঝা যায়, এই লোকগুলোর মোটিভেশন কি? কখন আপনি একজনকে মার্ডারার বলতে পারেন, যখন কোন লফুল কোর্ট কাউকে মার্ডারার বলে সিদ্ধান্ত দেয়। অনলি দে ইউ ক্যান সে সামবডি, মার্ডারার। এখানে হোলসেল কথা বলা হচ্ছে, পুরো সশস্ত্র বাহিনী ও পুরো পুলিশ বাহিনীকে লেভেল করা হচ্ছে মার্ডারার হিসেবে।
এই লোকগুলো দীর্ঘ সময় ধরে সরকারকে, দেশকে, রাষ্ট্রকে এবং মানুষকে বিব্রত করার জন্য জঘন্য, ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এই সময়টি অনেকগুলো বিশেষ কারণে তাদের জন্য অপরচুন মোমেন্ট, ফেভারেবল মোমেন্ট ছিল। এবং তারা সেই ফেভারেবল ও অপরচুন মোমেন্টে সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগিয়েছে।’
উই আর শকড, নট সারপ্রাইজিং
প্রশ্নকর্তা এবার জানতে চান-‘এটা কি শুধুমাত্র আপনার ক্ষেত্রে না কী যে ক’টি নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে সকলকে আপনি ডিফেন্ড করবেন?’ উত্তরে আইজিপি বলেন, ‘আমি ডিফেন্ড করছি না। ডিফেন্ড করার কিছু নেই। কারণ হচ্ছে, এই বিষয়টি এভাবে আরোপ করার আগে এই প্রক্রিয়াটি কি ছিল? সেই প্রক্রিয়াটি আমরা কেউ কিন্তু জানি না। আমি যেটি শুরুতে বলছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট কন্টাক আছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে এই বিষয়ে আগাম কিছু জানায়নি বা কোন তথ্য চায়নি? সাংবাদিকের সেই প্রশ্নের জবাবে ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘রাইট। দে কুড টক টু আস।’ সেটি কি সারপ্রাইজ ছিল আপনাদের জন্য, ফের প্রশ্ন প্রশ্নকর্তার। জবাবে সাবেক এই র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বলেন, ‘আমি বলবো, উই আর শকড, নট সারপ্রাইজিং। আমাদের দেশের মানুষ শকড হয়েছে।
এ রকম একটি সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে সম্পর্কের কথা আমরা বলছি, সেই সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এ রকম সিদ্ধান্ত হতে পারে না। বিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে তারা এ ধরণের একটি সিদ্ধান্তে জাম্প করেছেন। জাম্প না করে তারা কিন্তু সরকারের সঙ্গে কথা বলতে পারতো।
আমাদের এখানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রয়েছেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে আমাদের দূতাবাস রয়েছে। আমাদের মাঝে এক্সচেঞ্জ অব পলিটিক্যাল ভিজিট রয়েছে। এটি আলাপ করা যেতো। আমি যখন র্যাবের ডিজি হিসেবে কাজ করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ট্রেনিং সহায়তা ছিল। ট্রেনিং সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের যেসব এক্সপার্টরা কাজ করেছে, ওরা যখন র্যাব অফিসে থাকতো, আমাকে জিজ্ঞাসা করতো আমি কী ওখানে যেতে পারি? আই সেইড দেট লুক উই ক্যান গো এনিহোয়ার ইন দিস অফিস। এই অফিসে গোপন কোন কিছু নেই।’
র্যাবের ইনকোয়ারি সেল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত
নানা সময়ে র্যাব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারীত্বের সম্পর্কের সঙ্গে গেছে এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘র্যাবের ইনকোয়ারি সেল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত। তারা আমাদের সঙ্গে থেকেছে, কাজ করেছে। আমাদের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
তারা আমাদের ইনকোয়ারি সেলের কর্মদক্ষতাও দীর্ঘ সময় যাবত পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা ওই সময় নেতিবাচক থাকলে আমাদের সঙ্গে এই ধরণের সম্পৃক্ততায় আসতো না। আমি মনে করি, ২০১৪ সালের পর থেকে একটি কনসার্টেড এফার্ট তৈরি হয়েছে, অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে ছিল।
আপনার নিশ্চয়ই ২০১৩ সালে ঢাকা সিজের কথা মনে আছে। তখন ঢাকা সিজের ৫ মে’র ৪৮ ঘন্টা আগে একটি বড় দল জনসভা করেছিল ঢাকা শহরে। আকস্মিকভাবে সেই দলের নেতা তার বক্তব্য শেষ করার আগে বললেন যে, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সরকারের পদত্যাগ করতে হবে। তা না হলে আমরা সরকারকে বাধ্য করবো।
৪৮ ঘন্টা শেষে দেখা গেলো, ঢাকা শহরে ওয়ান মিলিয়ন এক্সট্রিমেস্ট পিপোল দে টোক ওভার। সেখানে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে, ব্লাডলেসলি তাদেরকে ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।’
পুলিশ কমিশনার হিসেবে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমার
এই পর্যায়ে বেসরকারি টিভির সাংবাদিক ড.বেনজীর আহমেদ সম্পর্কে দীর্ঘ সময় যাবত চলে আসা একটি প্রোপাগান্ডার বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেন। বলেন এভাবে, ‘এটি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বাহিনীকে ব্যবহারে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনীর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, বিবৃতি বিভ্রান্তির স্রোতে তীরহারা একটি রাজনৈতিক দলের ভাড়াটে প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডের ঘৃণ্য উল্লাসের অবগাহনের ভেতরও নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সব সময় পূর্ণ সচেতন থেকেছেন বেনজীর আহমেদ। হেফাজতের ৫ মে’র সরকার পতনের খোয়াব’র সময়টিতে তিনি ডিএমপি কমিশনার ছিলেন।
প্রশ্নকর্তার উত্তরে ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার হিসেবে নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমার। সেটা করলে কি আমি রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করলাম? নাকি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করলাম। এ জন্য কিছু কিছু… হোয়াই পার্টিকুলার তাদের, দিজ আর দি রিজনস।
অনেকেই ভেবেছে, এটা থেকে বোধহয় বের হওয়া যাবে না। ইটস এ কগমায়ার। এই কগমায়ার থেকে বোধহয় বের হওয়া যাবে না। যখন তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ভন্ডুল করে আমরা ঢাকা শহরে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। অনেকের আশাভঙ্গ হয়েছে। অনেকে হতভম্ব হয়েছে, খুশি হতে পারেনি।
আমি এজ এ পুলিশ অফিসার-মাই ম্যান্ডেড ইজ টু সিকিউরড দি সেফটি অব মাই পিপোল, এজ এ পুলিশ কমিশনার। ইট ওয়াজ মাই কল টু গিভ প্রটেকশনস টু দি পিপোল লিভিং ইন দি সিটি। সো হোয়াট উই ডিড ইন ফিফথ মে দেট ওয়াজ ম্যান্ডেড অন মি, দেট ওয়াজ মাই কল এজ এ পুলিশ কমিশনার। সেমেলটেনিয়াসলি, আপনার যখন ২০১৩ সালের শেষের চার মাস, ইলেকশনের আগে তখন ইট ওয়াজ মাই কল।’
দেশ চলবে নিজেদের আইন-নীতি দিয়ে
ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের দেশ পরিচালিত হবে এই দেশের আইন দিয়ে, নীতি দিয়ে। এই দেশের আদালত ব্যবস্থাপনা আছে, এটি দিয়ে দেশ চলবে। আমাদের দেশের লিগ্যাল ম্যান্ডেড দিয়ে রাষ্ট্র চলবে।
যদি কোন ভায়োলেশন হয়, সেই লিগ্যাল প্রভিশনস যদি কেউ ভায়োলেট করে তার জন্যও তো ব্যবস্থা আছে। এখন দেখতে হবে, যে অভিযোগগুলো করা হয় সেগুলো কি আইনের প্রভিশনকে ভেঙে করা হয়েছে? সেগুলোর ব্যত্যয় ঘটেছে কীনা সেখানে সেটা দেখার বিষয় আছে। কোন ব্যত্যয় করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আসে, এটি আমরা দেখি না। এটি দেখে ম্যাজিষ্ট্রিয়াল অথরিটি। তারা দেখে।’
তার মানে টেকনাফের একরামের নিহত হওয়ার ঘটনা, সেটির কি তদন্ত হয়েছে? জানতে চাইলে ড.বেনজীর বলেন, ‘এটি স্টিল ওপেন। এটি আন্ডার মেজিষ্ট্রিয়াল ইনকোয়ারি। এটির তদন্ত চলছে।’
এটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি আপনাদের কাছে কোন ব্যাখ্যা চেয়েছে? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার জানামতে কেউ কোন প্রশ্ন করেনি। আমাদের দেশের প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী আমি বলবো, ওই বিষয়টি স্টিল ওপেন। এটা নিয়ে একটা ম্যাজিস্ট্রিয়াল ইনকোয়ারি চলছে।
এই পর্যায়ে আমার কোন ব্যক্তিগত মতামত দিলে সেটা আমি মনে করি যে সাবজুডিশ হবে। আমি বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান হিসেবে যে বিষয়টি সাবজুডিশ, যেটি নিয়ে এক সময় আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটি নিয়ে মন্তব্য করা বিধি ও আইনসম্মত নয় এবং নৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়।’
চেঞ্জ মেকার ড.বেনজীর, কী ভাবেন তিনি?
গণমাধ্যমকর্মী পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদের ৩৩ বছরের বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবনের সফলতার উর্ধ্বমুখীতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে নিজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে কখনও এভাবে মূল্যায়ন করি না। আমি রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
রাষ্ট্র আমাকে মনে করেছে, এই জায়গাগুলোতে আমি নিয়োগযোগ্য। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। সেক্ষেত্রে সফলতা-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করবে রাষ্ট্র। আর দুই নম্বর হচ্ছে, যারা আমার সার্ভিস ডেলিভারি নিয়ে থাকেন তারা। আই লুক এট দেম, নট মাই সেলফ।’
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রেস নোট সম্পর্কে
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রেস রিলিজে এনজিওদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ‘ওয়ার অন ড্রাগ’। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে হুমকি বলে তারা মনে করছে? এই শব্দগুলোর ব্যাখ্যায় ড.বেনজীর বলেন, ‘আমার এখানে মাদকের বিরুদ্ধে অপারেশন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে কিভাবে?
উই আর নট লিবিং ইন দ্যা সেইম কন্টিনেন্ট। উই ডোন্ট হেভ কমন বর্ডারস। আবার যুক্তরাষ্ট্রে যারা মাদক ব্যবসা করে পাচার করে তারা আমাদের পাচারকারী বা ব্যবসায়ী নয়। এটি আমি মনে করি জাস্ট ওই শব্দ প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োগ করা।’
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমি আমেরিকায় দায়িত্ব পালন করেছি, জাতিসংঘে দায়িত্ব পালন করেছি।’
আইজিপি বলেন, ‘৮ থেকে ১০ টি ল ইনফোর্সমেন্টের সঙ্গে মাদককে গুলিয়ে না ফেলে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অপারেশনটি সেপারেট করেছি। ওই সময় সোয়া লক্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছি। ১৪ হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে অনস্পট কনভিকশন দিয়েছি। ওইটার ইমপেক্ট দেশে তৈরি হয়েছে। সেটা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে, আমাদের ছোটখাটো বুদ্ধিতে বুঝছি না।
তারা তথ্যদাতা হিসেবে এনজিও শব্দটিকে ব্যবহার করেছে, যারা তাদেরকে বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। র্যাব তার লিগ্যাল দায়িত্ব পালন করছে। যাকে গ্রেফতার করছে তাকে আইনের কাছে সোপর্দ করেছে। বাকীটা আইন দেখছে, কোর্ট দেখছে। এখানে কোন ব্যত্যয় নেই।
আমি কী ভাবলাম তা দিয়ে একটি সংগঠনের কার্যক্রম মূল্যায়িত হবে না। সংগঠনের কার্যক্রম মূল্যায়িত হবে সংগঠনের ম্যান্ডেট অনুযায়ী। আমি আমার ম্যান্ডেটকে ভায়োলেশন করেছি কীনা? আমি যে আইনের আওতায় আমব্রেলায় কাজ করি সেই আইনের ব্যত্যয় হয়েছে কীনা সেটি হচ্ছে ইস্যু। কেউ করে থাকলে ডেফিনেটলি হি অর শি হেজ টু বি অ্যাকাউন্টেবল ফর দেট। আমরা অ্যাকাউন্টেবল করেছি।’
এই যাত্রায় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রবিরোধী এনজিও’র গোমরও ফাঁস করেন র্যাবের ইতিহাসে সফল এই মহাপরিচালক (ডিজি)। তিনি বলেন, ‘একটি বড় মানবাধিকার সংস্থা আছে, যার সাউথ এশিয়া দেখে একজন পাকিস্তানি। তার পার্টনার যে বাংলাদেশে, তার পূর্বপুরুষ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা করেছে, পরবর্তীতে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, চেতনার সঙ্গে জড়িত ছিল।
সঙ্গত কারণে তারা যেসব ফিড করেছে সেই ফিডগুলো হচ্ছে ফলস, ফিকটেশাস, বানানো এসব জিনিসপত্র দিয়েছে। ২০ জন লোকের তালিকা এসব এনজিও জাতিসংঘ দিয়েছে এগুলোকে না কী গুম করে দিয়েছে, হেসে বলছিলেন ড.বেনজীর।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা দেখলাম এগুলোর অনেকে বাড়িঘরে আছে, কেউ বাড়িঘর থেকে পালিয়ে গেছে। কেউ রাগ করে গিয়েছে, কেউ স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা করে চলে গেছে, আবার বাড়িতে ফিরে এসেছে। এগুলো কাস্টমাইস রিপোর্ট সাবমিট করে। দিস আর অল কাস্টমাইজ রিপোর্ট। এগুলো রিপোর্ট বেইজড অন উইশলেজড।’
মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বলছে, স্বচ্ছ হয়েছে এবারের রিক্রুটমেন্ট
পুলিশপ্রধান হিসেবে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সবাই বলে যে করাপশন বন্ধ করতে হলে কয়েকটি বেসিক জায়গায় কাজ করতে হবে। নিয়োগ, পদোন্নতি এবং পদায়ন। আমরা কিন্তু কনস্টেবল ও সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ পূর্ণাঙ্গ ওভারহেলিং করেছি।
সম্প্রতি সাড়ে ৩ হাজার কনস্টেবল রিক্রুট করেছি, এটি সাড়া ফেলেছে সারা দেশে। আমরা কোথাও বলিনি, আমরা ট্রান্সপারেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ করেছি। বরং মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বলছে, কত স্বচ্ছ হয়েছে এবারের রিক্রুটমেন্ট। নিয়োগ প্রক্রিয়া আমরা এমনভাবে তৈরি করেছি, যেটি ট্রান্সপারেন্ট হতে বাধ্য। পদায়নের ক্ষেত্রেও আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ স্বচ্ছতা। এগুলো পলিসির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছি।’
প্রশ্নই উঠে না মনোবল ভাঙার, দৃঢ় হবে পেশাগত প্রত্যয়
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ড.বেনজীর আহমেদকে প্রশ্ন করা হয় মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বাহিনীটির মনোবলে আঘাত হানবে কীনা? নিজেদের পেশাগত প্রত্যয় আর দৃঢ় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একসেপ্ট দোজ পিপোল, যারা এটার পেছনে কাজ করেছে তাদের জন্য বিগ ডে। তারা বাদে এদেশের মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমি গ্রেটফুল গভর্নমেন্ট ও সাধারণ মানুষের প্রতি। আমার বাহিনীর অফিসার এবং সদস্যদের রিফ্লেকশন দেখিয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকার এবং আমার বাহিনীর প্রতিটি কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।