বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামির সন্ধানদাতাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পুরস্কার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, এতে খুনিদের খুঁজে বের করা সহজ হবে।
রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে এক অনুষ্ঠান শেষে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকার ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণায় তারা সুবিধা পেতে পারে। বিন লাদেনের ক্ষেত্রেও তারা এভাবে সফল হয়েছিল বলে শুনেছি। এই পলিসি অনেক সময় সাকসেসফুল হয়। অনেক দেশই অনেক সময় এটা ফলো করে। আমরাও তো বঙ্গবন্ধুর তিন খুনিকে খুঁজে পেতে পুরস্কার ঘোষণা করেছি।
‘আমরা জানি অভিজিতের দুই খুনি পলাতক আছে। আমরা তাদের খুঁজছি। এদের বিচার হয়ে গেছে। এরা পালিয়ে আছে। এই ঘোষণা তাদের পেতে আমাদের সুবিধা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় যদি তাদের পাওয়া যায়, আমরা তাদের স্বাগত জানাই।’
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বেরিয়ে আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন।
অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইতোপূর্বে ‘মেজর জিয়া’ নামে পরিচিত সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আকরাম হোসেনের নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন অনুসন্ধানে।
চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। অপর আসামি ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেয়া হয়। রায়ের সময় জিয়া ও আকরাম ছাড়া অপর চার আসামি কারাগারেই ছিলেন।
অভিজিৎ হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের ধরিয়ে দিলে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার এ ঘোষণা দেয় দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে, যারা প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বিশেষ করে তাদের আইন প্রণেতাদের সঙ্গে। তাদের মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন, মিথ্যা ভিডিও বানাচ্ছেন। বাংলাদেশে একজন মরলে বলে ১০০ জন বিচার বহির্ভূত হত্যা হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ঘটনাকে বলে লাইন অফ বিউটি।’
আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন মরলে আপনারা যা বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ওরা তাই প্রচার করে। আপনারা সংবাদপত্র বড় হরফে ফলাও করেন। ওরা তা নিয়ে অপপ্রচার চালায়। ওদেশেও কিছু লোক আছে, এদেশেও কিছু লোক আছে।’
‘একদল মানুষ আছে, যারা দেশের উন্নয়নে সন্তুষ্ট নন। তারা ভাবেন আওয়ামী লীগ কেন এত ভালো করছে কেন? তারা ভাবে দেশের মানুষ এত ভালো থাকবে কেন? তারা ভাবে সব সময় আমরা পরনির্ভর থাকবো। বাংলাদেশ তো এখন মোটামুটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে।’
মোমেন বলেন, ‘এরা এটা পছন্দ করছে না। তাদের মধ্যে অনেকেই সম্ভবত ওদের দ্বারা পেইড ফর অলসো। তথ্যগুলো তারা সঠিকভাবেভাবে দেন না। মিথ্যা তথ্য দেন। অনেকে তা বিশ্বাসও করেন। সেখানে আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে।
‘কেউ পালিয়ে থাকা খুব বড় কিছু নয়। কারণ, দেশে মানুষের সংখ্যার তুলনায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কম। তারা তাদের কাজ করছে, আমরা আমাদের কাজ করছি। সরকারিভাবে আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই।’
উল্লেখ্য, এবছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।দুইজন ছাড়া বাকিরা কারাগারে রয়েছেন। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল।