শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
হাসিনা সরকারের জন্য উভয়সংকট
আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৩৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

একটা দীর্ঘ সময় হাসপাতালে কাটিয়ে এলাম। ডাক্তাররা জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, আমার আয়ু আর বড়জোর সাত মাস। আমি এটা বিশ্বাস করিনি। এখনো লড়াই করে বেঁচে আছি। তাই রোগশয্যায় শুয়েও লিখছি। আমার রোগশয্যায় থাকাকালে বিশ্বে অনেক বড় বড় পরিবর্তন ঘটেছে। এর মধ্যে একটি বাংলাদেশ ও আমেরিকার সম্পর্ক। সম্প্রতি আমেরিকা বাংলাদেশকে তাদের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি। র‌্যাবের কর্মকর্তাদের আমেরিকা ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। তার প্রতিবাদে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আমেরিকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য উদাহরণ দেখিয়েছেন। তা kalerkanthoসত্ত্বেও আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমার মতে, এই আলোচনায় সুফল হবে না। আমেরিকা চায় বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ বশীভূত করতে। সম্প্রতি ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান মিলে যে স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে তাতে আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশকে ঢুকতে হবে। নইলে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত হবে না। এটা অনেকটা পঞ্চাশের দশকের মার্কিন সামরিক চুক্তিগুলোর মতো। পাকিস্তানকে বাগদাদ চুক্তি নামের আমেরিকার সামরিক চুক্তিতে ঢুকতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার পরিণাম আজ পাকিস্তান ভুগছে। তার অবস্থা এখন ‘না ঘরকা না ঘাটকা’।

বাংলাদেশে এখন চীনের প্রচুর অর্থনৈতিক লগ্নি হচ্ছে। এটা বন্ধ হলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ আশা করে, চীনের সাহায্যে গভীর সমুদ্রে নৌবন্দর নির্মাণ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অনেক উন্নতি ঘটাবে। আমেরিকা চায় না বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাক। সুতরাং বাংলাদেশের ওপর নানা রকম চাপ দেওয়া হচ্ছে। আসল চাপটা ভারতের। চীনের অথনৈতিক শত্রু ভারত। এখন আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের রাজনৈতিক শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশকে ভারত সরাসরি চাপ দিতে পারছে না। তাই আমেরিকার সাহায্যে এই চাপ প্রদান। ভারতের অভ্যন্তরে নানা বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও দমন-পীড়ন একটি প্রধান ইস্যু। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মনে ক্ষোভ আছে। এটা দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে। হাসিনা ও মোদি পরস্পর বন্ধু। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখার পক্ষপাতী। কিন্তু ভারতে মোদির আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব দমন-পীড়ন চলছে তাতে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যে সাহায্য করেছে তা স্মরণ করে বাংলাদেশ ভারতের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। তবে এই কৃতজ্ঞতার পাশ কাটিয়ে কী করে মোদি সরকারকে অসাম্প্রদায়িকতার পথে টেনে আনা যায় শেখ হাসিনা তাও ভেবে দেখছেন। কিন্তু টেনে আনতে পারছেন না। ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কের চিড় ধরতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে।

পঞ্চাশের দশকে আমেরিকা বিভিন্ন সামরিক জোট গঠন করে তাতে বিভিন্ন দেশকে টেনে এনে বিশ্বে আধিপত্য করতে চেষ্টা করেছিল। এ ব্যাপারে নেহরুর ভারত ছিল সম্পূর্ণ অটল যে তারা কোনো জোটে যোগদান করবে না।

ভারতের এই নিরপেক্ষতার নীতি তখন সর্বত্র বিশেষ করে আফ্রো-এশিয়ার দেশগুলোতে প্রশংসিত হয়েছিল। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় পরাশক্তি ছিল। এই দুই পরাশক্তির মধ্যে চলছিল শক্তির পরীক্ষা। ভারতের অনুসরণে পৃথিবীর প্রায় ৭৩টি দেশ মিলে গঠন করে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যাম। এই সময় আমেরিকা নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশকে তার সামরিক জোটে যোগ দিতে বাধ্য করে। ন্যাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আমেরিকার এই কৌশল অনেকটা ব্যর্থ হয়। ন্যাম অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। তাতে তখন নেতৃত্ব দিয়েছেন নেহরু, এনক্রুমা, নাসের, টিটো প্রমুখ শক্তিশালী নেতা। নাসের ও নেহরুর মৃত্যুর পর এই সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। রুশ-মার্কিন জোটের শক্তি পরীক্ষার সময় চীন আমেরিকার জোটে যোগ না দিতে গেলেও আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা গড়ে তোলে। এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে তার একটা ছোটখাটো যুদ্ধও হয়।

আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য করে চীন ব্যাপকভাবে লাভবান হয় এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে। চীনের এই শক্তি অর্জন আমেরিকা ও ভারত দুইয়েরই চক্ষুশূল হয়। নরেন্দ্র মোদি ভারতে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলেন। চীনও সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বন্ধুত্ব এই পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। ভারত ও চীনের মৈত্রী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং শত্রুতা বেড়ে যায়। এ সমস্যার মুখে শেখ হাসিনা ভারত, চীন ও আমেরিকা এই তিন শক্তিকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বর্তমান ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ থাকতে চায়। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আবার সে কথা বলেছেন। তা সত্ত্বেও আমেরিকা তাদের গণতন্ত্র সম্মেলন থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই সমস্যায় পড়েছিলেন; তিনি কি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্নির্মাণের জন্য আমেরিকা অথবা রাশিয়ান শক্তি জোটে যোগ দেবেন? সেই দুর্দিনেও বঙ্গবন্ধু কোনো শক্তিজোটে যোগ না দিয়ে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গে মিত্রতা সত্ত্বেও তিনি চীনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য। কিউবার মাধ্যমে চীনকে পাট পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন।  

আজ আবার চীন ও মার্কিন শক্তি জোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেখ হাসিনা পিতার আদর্শ গ্রহণ করেছেন। ভারত আমাদের বন্ধু আছে, চীনও তেমনই থাকবে। দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ সমান মৈত্রী বজায় রাখবে। আমেরিকার গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ লাভ এবং র‌্যাবের কর্মকর্তাদের আমেরিকা সফরে বাধা দূর করার জন্য আলোচনা অবশ্যই চলতে পারে। তবে নতি স্বীকার অবশ্যই নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে অথনৈতিক উন্নতি লাভ করেছে, তাতে তার রাজনৈতিক দর-কষাকষির শক্তি বেড়েছে। বাংলাদেশ কোনো শক্তির কাছেই মাথা নত করছে না এবং ভবিষ্যতেও করবে না। এটাই আমরা দেখতে চাই।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]