বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন এই বুস্টার নিতে কোন নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। যারা করোনার টিকার দুই ডোজ নিয়েছে, তারা ধাপে ধাপে বুস্টার ডোজ পাবেন। এ জন্য তাদের আর সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার প্রয়োজন হবে না। প্রথমে সম্মুখসারির ব্যক্তিদের (চিকিৎসক, নার্স, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী ও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি) বুস্টার ডোজের আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যরাও বুস্টার ডোজ পাবেন। গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে দেশে কোভিড-১৯ টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি নাগাদ ৪৩ লাখ মানুষকে ফাইজারের টিকায় বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ৬০ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা মজুদ রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। আগে যেভাবে নিবন্ধন করে টিকা নেওয়া হয়েছে, বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে সেভাবে না-ও লাগতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছে, সুরক্ষা অ্যাপে সেই তথ্য রয়েছে। টিকাগ্রহীতাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নম্বর রয়েছে সরকারের কাছে। এ ক্ষেত্রে যারা বুস্টার ডোজ পাবে, তাদের কোথায় কবে আসতে হবে, সেটি এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে ফাইজার ছাড়াও মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্মসহ কয়েক ধরনের টিকা দেওয়া হয়েছে।
যারা ফাইজার ছাড়া অন্য টিকা নিয়েছে, তারা ফাইজারের বুস্টার ডোজ নিতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ফাইজারের বুস্টার ডোজ নিলে কোনো সমস্যা হবে না। বরং অন্য টিকা যারা নিয়েছে, ফাইজারের বুস্টার তাদের জন্য আরো ভালো কাজে দেবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মহাখালীর ‘বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস’ (বিসিপিএসএ) মিলনায়তনে ‘বুস্টার ডোজ’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি বুস্টার ডোজের জন্য সরকারের সুরক্ষা ওয়েবসাইটে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সেটা এখনো শেষ হয়নি বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, আইসিটি বিভাগ আমাকে জানিয়েছে, সুরক্ষা ওয়েবসাইট আপগ্রেড করতে আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে। এরপর সারাদেশে শুরু হবে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে প্রথম ডোজ দিয়ে গত বছর ২৭ জানুয়ারি করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর প্রায় ১০ মাস ২০ দিন পর তিনিই প্রথম বুস্টার ডোজ পেলেন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও বুস্টার ডোজ শুরু হলো ফাইজারের টিকায়। টিকা কর্মসূচির প্রথমদিকে যারা অগ্রাধিকার তালিকায় ছিলেন এবং টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের অন্তত ছয় মাস যাদের হয়েছে সেইসব ব্যক্তিই বুস্টার ডোজে অগ্রাধিকার পাবেন। যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যারা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, তাদের করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর তারা বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নিতে পারবেন। এজন্য ‘আপাতত’ নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। যারা তৃতীয় ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তাদের কাছে এসএমএস চলে যাবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান।
মন্ত্রী বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় ২৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৮৫ ভাগই ষাটোর্ধ্ব। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ জন্যই তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
টিকাদানের ফলে দেশ নিরাপদে আছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা এক ডিজিটেই আছে। শনাক্ত এক শতাংশের নিচে এসেছে, যা এত জনবহুল দেশে খুবই বিরল। সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রতিটি মানুষকেই প্রাপ্য টিকা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আগে যে নিয়মে টিকা দেওয়া হয়েছে, বুস্টার ডোজও সেভাবেই দেওয়া হবে। প্রথমে বয়স্ক ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা পাবেন। পর্যায়ক্রমে সবাইকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধিত। যাদের ছয় মাস হয়েছে, তাদের তৃতীয় ডোজ দেবো। যারা বুস্টার ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তারা কখন কোথায় টিকা পাবেন তা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, আমরা এখন ফাইজারের টিকা দিচ্ছি, কারণ যাদের টিকা নেওয়ার ছয় মাস হয়েছে, তারা সবাই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছিল। বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে টেকনিক্যালি কোন বাধা নেই। এ কারণে ফাইজারের টিকা তৃতীয় ডোজ হিসেবে দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছে, সুরক্ষা অ্যাপে সেই তথ্য রয়েছে। টিকাগ্রহীতাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নম্বর রয়েছে সরকারের কাছে। এ ক্ষেত্রে যারা বুস্টার ডোজ পাবে, তাদের কোথায় কবে আসতে হবে, সেটি এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তবে কোভিড টিকা বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক বলেন, গত রোববার উদ্বোধন হয়েছে। এরপর সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে কিভাবে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে আইসিটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।