বর্তমান বিশ্বে মহিলা নেত্রীদের মধ্যে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাই প্রধান। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উনি বাঙালিদের জন্য যা করেছেন সেটা সত্যিই অনস্বীকার্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে আমাদের অনেক বাঙালি আছেন যারা তার বিরুদ্ধে বিদেশের বসে কথা বলেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে শেখ হাসিনা একজন উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থার কারণে আজ এই অর্জন আমরা অর্জিত করতে পেরেছি।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৫৯তম পর্বে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, ইতালি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাঈন উদ্দিন লিটন, ইতালি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, গফরগাঁও কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস, গফরগাঁও থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহামদ শাহজাহান শাজু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, এই বিজয়ের মাসে আজকের এই আলোচনায় আমার বক্তব্যের শুরুতে আমি প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই ব্যক্তিকে, যিনি আমাদেরকে একটি পতাকা এনে দিয়েছেন, যার জন্ম না হলে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না, আজকে এখানে বসে কথা বলতে পারতাম না। সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আমাদের জাতীয় চার নেতার মাগফিরাত কামনা করছি এবার এর সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল মুক্তিযোদ্ধা ও ৩০ লাখ শহীদের প্রতি আমি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। সত্যিকার অর্থে আমরা বিজয়ের চেতনায় উদ্ভাসিত পুরো বাংলাদেশ। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় চেষ্টা ও প্রত্যয়ে আজকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে এই বছর বিজয় মাসের প্রাক্কলে আমরা আরও একটি অর্জন অর্জিত করেছি। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ হিসেবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ৩টি মানদণ্ডই পূরণ করেছে। ১৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্ল্যানারি সভায় এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়। এটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১-এর বাস্তবায়ন। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বাঙালির অনবদ্য শ্রেষ্ঠ অর্জন। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সেশনে মঙ্গলবার এই সুপারিশ গৃহীত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র দেশ হিসেবে তিনটি মানদণ্ডই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের কী হতে পারে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থার কারণে আজ এই অর্জন আমরা অর্জিত করতে পেরেছি।
মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, আমার কাছে মনে হয় বর্তমান বিশ্বে মহিলা নেত্রীদের মধ্যে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাই প্রধান। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উনি বাঙালিদের জন্য যা করেছেন সেটা সত্যিই অনস্বীকার্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে আমাদের অনেক বাঙালি আছেন যার তার বিরুদ্ধে বিদেশের বসে কথা বলেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে শেখ হাসিনা একজন উন্নয়নের রোল মডেল। তার কারণে আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উজ্জলতা ছড়াচ্ছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের মহাসড়কে। সে পথ ধরে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আর বাংলাদেশের এ রূপান্তরের রূপকার শেখ হাসিনা বিশ্বসভায় আপন মহিমায় স্থান করে নেওয়া একজন সফল বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক নানান ইস্যুতে তার বিচক্ষণ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ একদিন তার হাত ধরে উন্নয়নের সকল ধাপ অতিক্রম করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে এক কাতারে শামিল হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি বাংলদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নের প্রস্তুতিসহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন, দারিদ্রসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও পরিশ্রমের ফসল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ, যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারনে। তার সাহসী এবং গতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঠামোগত রূপান্তর এবং উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
মোহামদ শাহজাহান শাজু বলেন, আমি প্রথমেই আমার বক্তব্যের শুরুতে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করেছি আমরা। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনে দিনে রাষ্ট্রের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। জনমানুষের নেতা হতে হলে যে রাজপথের কর্মী হতে হয়, তা তিনি আমাদের শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করেছেন। এভাবে ক্রমাগত সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে গড়ে তুলেছেন। সততার শক্তিতে আমাদের উজ্জীবিত হতে অনুপ্রাণিত করেছেন। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে লড়ার কর্মকৌশল তিনি গ্রহণ করেছেন। অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বারবার তার জীবন বিপন্ন হয়েছে। কিন্তু তিনি মৃত্যুকে কখনও ভয় করেননি; বরং জনগণের কল্যাণে তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, দেশের হাল ধরেছেন। উন্নয়নের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে তার চিন্তাশীলতার প্রয়োগ ঘটেনি। এ চিন্তাশীলতা তিনি নিজের মধ্যে না রেখে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের এই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তাঁর সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তৃতীয় মেয়াদেই ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত আছে।