প্রকাশ: সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:১৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থা সত্যিই মর্মান্তিক। এই বিমানবন্দরের সুযোগ-সুবিধাগুলো কখনোই গর্ব করার মতো কিছু ছিল না, তা সত্যি। তবে দিনে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিমানবন্দরের একমাত্র রানওয়েটি বন্ধ থাকার কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
যে ফ্লাইটগুলো ২৪ ঘণ্টা সময় ধরে পরিচালনার কথা ছিল, সংস্কার কাজ চলায় সেগুলো এখন ১৬ ঘণ্টার মধ্যে পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে বিমানবন্দর অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চাপের মধ্যে আছে প্রতিনিয়ত।
দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদন অনুসারে, লাগেজ কার্টে হাত দেওয়াই যাত্রীদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই কার্টগুলো আগে থেকেই সংখ্যায় খুব কম। এগুলো মেরামত করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।
ডিপার্চার লাউঞ্জের সামনের লাইন এখন অনেক দীর্ঘ হয়। ক্রমাগত ফ্লাইট দেরি হওয়ার পাশাপাশি এটি যাত্রীদের আরও ভোগান্তি দিচ্ছে৷ এর প্রধান কারণ, কোভিড-১৯ পরীক্ষা যাচাই করার জন্য অপর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের সব জায়গায় লাইন খুব দীর্ঘ হলেও সেখানে যাত্রীদের বসার জায়গা খুব একটা নেই।
কোনো বিদেশি যখন কোনো নতুন দেশে ভ্রমণ করেন, তখন প্রথম যে জিনিসটি লক্ষ্য করেন তা হলো এর বিমানবন্দর। আমাদের বিমানবন্দরের যে অবস্থা, তাতে আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভালো ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রায়ই আমাদের রাজনীতিবিদ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বলতে শুনি।
আচ্ছা, মানুষ যখন আমাদের উপচে পড়া ও অপ্রস্তুত বিমানবন্দর ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতামূলক ও রূঢ় আচরণ দেখেন, তখন তাদের সামনে আমাদের দেশের কী চিত্র ফুটে উঠে?
অভিবাসী শ্রমিকরা, যাদের কষ্টার্জিত অর্থ আমাদের ভারসাম্য স্থিতিশীল রাখে, তারা বিমানবন্দরের শোচনীয় অবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্যতম। তাদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরার পর বিশ্রামের জায়গাটাও পান না। আমাদেরই অর্থনীতির চাকা সচল রাখা নাগরিকদের সঙ্গে কি আমাদের এমন আচরণ করা উচিত?
বিমানবন্দরের যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে কতটা উদাসীন, তা দেখাটাও অস্বস্তিকর। এর ফলেই বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরটির এমন খারাপ অবস্থাই (যা বিদেশিদের কাছে প্রথম দেখাতেই আমাদের দেশের ভয়াবহ চিত্র উপস্থাপন করে) তুলে ধরে, আসলে তারা জাতির ভাবমূর্তি নিয়ে কতটা যত্নশীল।
শাহজালাল বিমানবন্দরের অবস্থা উন্নয়নে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। পাশাপাশি, ব্যবহারযোগ্য লাগেজ কার্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ওয়েটিং রুমের সিটের সংখ্যা ও বিমানবন্দরে কর্মীর সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এই ব্যবস্থাগুলো বিমানবন্দরে স্বল্পমেয়াদের জন্য নয়, স্থায়ীভাবে রাখতে হবে।