নামকরণ ও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই অবশেষে চালু হলো কালিগঙ্গা সেতু। দক্ষিণ মানিকগঞ্জে এ সেতু নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর ও হরিরামপুর তিন উপজেলাবাসী তাদের জীবন জীবিকা ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতর নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কিন্তু ৫৪ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জটিলতা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরও (এলজিইডি) সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারেনি। ফলে সেতুর দুই পারে প্রকৃত জমির মালিক ও প্রভাবশালী একটি মহল অবৈধ ভাবে ভোগ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছে।
আর এই সুযোগে এলজিডি’র এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তরা অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করছেন। এ কারণে প্রকৃত জমির মালিকরা সৎ ভাবে দখলের চেষ্টা করলেও প্রভাবশালীরা বলছেন এলজিইডি আমাদের দিয়েছেন। আমরা মার্কেট করে ব্যবসা করছি। এ জমি নিয়ে তোমাদের কোন কাজ নাই। এনিয়ে যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ খুনা খুনিও হয়ে যেতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান। এদিকে সেতু নির্মাণ কাজের জন্য পাথর সরবরাহকারীকে ৩৬ লাখ টাকাও দেওয়া হয়নি। অথচ সেতুর কোন নামকরণ হয়নি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই চালু করা হলো সেতু।
এ ব্যাপারে এলজিইডি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অধিগ্রহণ জায়গার সীমানা নির্ধারণ করে প্রকৃত জমির মালিকদের নামের যে জমি কালিগঙ্গা সেতুর নামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সব জমি সেতুর কাজেও লাগেনি সেই জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে দক্ষিণ মানিকগঞ্জের ভাংগাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মো. রহম আলী, এই গ্রামের মো. মারুফ ও মো. ফুলচান স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পত্র গত ২৭ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে জমা দিয়েছেন। কিন্তু এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী কিছুই করেন নাই। ফলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মার্কেট তৈরি করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ফলে প্রকৃত জমির মালিক ও দখলদারদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগকারীরা বলেছেন, মানিকগঞ্জ থানার ভাড়ারিয়া মৌজা আর এস-২২৪ দাগের অধিগ্রহণের জমির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ। কিন্তু কালিগঙ্গা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পুরো জায়গা সেতুর কাজে লাগেনি। বর্তমানে জমির মালিক এলজিইডি সিমানা নির্ধারণ করে সরকারি কাজে অধিগ্রহণ জমি কাজে লাগনো হোক, অথবা প্রকৃত জমির মালিকদের দেওয়ার আহ্বান জানান অভিযোগকারীরা। ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে তাদের রক্ষা করা হোক।
এ বিষয়ে জানার জন্য মানিকগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল হক এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগকারীদের নাম ঠিকানা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রকাশকের কাছে পাঠিয়েছি। এখন আমাদের কাছে কোন কাজ নেই। তিনি (জেলা প্রশাসক) যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, সেটাই আমরা মেনে নেব। সেতু নির্মাণ কাজের জন্য স্থানীয় সহকারী ঠিকাদার মো. চাঁন মিয়া সিলেটের পাথর সরবরাহ করেছেন। তিনি ৩৬ লাখ টাকা পাবেন। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা প্রধান ঠিকাদারের কাজ। এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেন নি।
এ ব্যাপারে ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের নব নির্বাচিত ইউপি মেম্বার আব্দুল জলিল মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় না।
তবে বালিরটেক বাজার সংলগ্ন কালিগঙ্গ নদীর উপর নির্মিত ২৯১ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু চালু হওয়ায় তিনটি উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার খুলে গেল বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তারা বলেছেন, সেতুটি চলাচলের পর সিংগাইর, মানিকগঞ্জ সদর ও হরিরামপুর উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলে গেল। প্রকৃত একজন কৃষক তার উৎপাদিত ফসল সরাসরি রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসতে পারছেন। সবমিলিয়ে এলাকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৯১ মিটার দৈর্ঘ্য পি.সি.গার্ডার ব্রিজ এবং ১৬৫ মিটার দৈর্ঘ্য ভায় ডাক্ট নির্মাণ বিষয়ক সেতুটি ২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর এর অধিনে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মানিকগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়।