#পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের বিজয় দিবস নেই: উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার। #শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ: অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা। #বিশ্ব আজ বাংলাদেশের বিজয়ের চেতনায় উদ্ভাসিত: মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল।
বিজয়ের দিন আমরা উদযাপন করলাম এবং গতকাল আমরা সারা দেশে বিশেষ এক উন্নয়নের শোভাযাত্রা উদযাপন করলাম, আমরা আনন্দের মধ্য দিয়ে এই বিজয় উদযাপন করছি। সত্যিকার অর্থেই আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে আমাদের জীবদ্দশায় আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৫৮তম পর্বে রোববার (১৯ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, বেলজিয়াম বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং লেখক মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বলেন, বিজয়ের দিন আমরা উদযাপন করলাম এবং গতকাল আমরা সারা দেশে বিশেষ এক উন্নয়নের শোভাযাত্রা উদযাপন করলাম, আমরা আনন্দের মধ্য দিয়ে এই বিজয় উদযাপন করছি। সত্যিকার অর্থেই আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে আমাদের জীবদ্দশায় আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ ও জাতি রয়েছে যাদের কোন বিজয় দিবস নেই কারণ তাদের যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে হয় নাই। তাদের দেশ কখনো পরাধীন হয়নি ও স্বাধীনও করতে হয়নি। আমাদের বিজয় দিবস আমাদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি প্রমাল করে আমরা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম ও আরও প্রমাণ করে আমরা একসময় পরাধীন ছিলাম। এই পরাধিনতাকে জয় করেছি আমরা বিজয়ের মাধ্যমে। সুতরাং এই দুটি কারণে আমাদের বিজয় দিবস খুবই গুরুতপূর্ণ। আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা এবং সেই স্বাধীনতার মর্মমূলে জেগে আছে এমন এক গৌরবের ইতিহাস যার কোনো তুলনা নেই। অতুলনীয় সেই গৌরবের পাশেই উজ্জ্বল সূর্যের মতো দীপ্তমান এক নাম: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এবং শোষণের বিরুদ্ধে যে মানুষটি শক্তভাবে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে বঙ্গবন্ধু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিলেন যে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বাঁচাতে হলে দেশকে স্বাধীন করতে হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি ১৯৬০ পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন এবং জনগণকে এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত করেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফার মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা প্রেরণ করে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানে সেনা সরকারের চিন্তার কারণ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণ যেভাবে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের বিষয় সামনে রেখে পরিচালিত হয়েছে। শুধু পাকিস্তানের নিপীড়নমূলক শাসন থেকে মুক্তি পাওয়াই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল না। একটি শোষণবিহীন ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই জাতির পিতা দেশে ফিরে শাসনক্ষমতা গ্রহণের পরপরই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। সংবিধানে চারটি মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন করার লক্ষে বঙ্গবন্ধু যে যখন দেশের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত তৈরি করার কাজে নেমে পড়েছিলেন ঠিক তখনই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশি-বিদেশি চক্রের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে সংঘটিত হয় বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক, ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য যেমনি, তেমনি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য ছিল এক মহাবিপর্যয়কর ঘটনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য হয়ে অবশেষে ১৭ মে ১৯৮১ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রিয় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ‘ভোট ও ভাতের’ অধিকার আদায় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু হয় তার জীবনের এক সুদীর্ঘ সংগ্রাম। শেখ হাসিনার এ সংগ্রামে জাতির পিতার মতো হাতিয়ার ছিল সততার আদর্শ ও শক্তি, লক্ষ্য অর্জনে তার সম্পূর্ণ নিবেদিত প্রাণ, জনগণের কল্যাণে শতভাগ অঙ্গীকার, তার প্রতি জনগণের অগাধ বিশ্বাস ও মমত্ববোধ, সর্বোপরি দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের মতো নিবেদিতপ্রাণ কর্মীনির্ভর শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন। ১৯৮১ সাল থেকে প্রায় ৪ দশক ধরে তিনি সভানেত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগের সফল নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অগ্রযাত্রায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের রূপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমুখী নানা পরিকল্পনার সুফল এখন মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বিভিন্ন কাজে ডিজিটালাইজেশন, সবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে।
মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্জন ও আত্মগৌরবের একটি দিন মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পরে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। উচ্চারিত হয়েছিল ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিতে উড়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। এই দিন স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব নিয়ে পতাকার মতো উড়ছে ৫০ বছর ধরে। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সরকার বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল ভিত্তিকে সংবিধান থেকে বাদ দিয়েছিল। তারা চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি কায়দায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলবার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের চাকাকে সচল করার চেষ্টা করে বেশ সফল হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে পুনরায় সে পথ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৭-২০০৮ সালের ব্যতিক্রমী সরকার ব্যবস্থার পরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃতে আওয়ামী লীগ জনগণের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করে। একসময় সদ্য জন্ম নেওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যা দিলেও এখন বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বেড়েছে শিক্ষার হার, গড়ে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান। অধিকাংশ অবকাঠামো যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধেরও ব্যাপক পরিবর্তন সাধন হয়েছে। বাস্তবায়িত হয়েছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। যার সুফল ভোগ করছে দেশের আপামর মানুষ।