বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিরাজমান সম্প্রীতি রক্ষায় সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি নষ্টে এখনও সক্রিয় ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদের বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কের ভিত্তি রক্তের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এ দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে, তেমনি ভারতের অনেক মানুষও রক্ত দিয়েছে। অন্যদিকে ভাষা, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু এসব কারণে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতকে সবার উপরে স্থান দেয়া হয়। এ সম্পর্ক ও সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করতে হবে, আজীবন অটুট রাখতে হবে।
র্যাবের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উন্নয়নশীল দেশের পা টেনে ধরার মতো উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে চাই, আপনারা বাংলাদেশের র্যাব ও কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এটা অন্যায়, ভিত্তিহীন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা কোন মানবতা বা হিউম্যান রাইটসকে লঙ্ঘন করিনি। আইনের ভিত্তিতেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। র্যাব দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে জঙ্গী, ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের দমনে যে সফলতা দেখিয়েছে এটা সারা পৃথিবীতে একটা উদাহরণ। ধর্মীয় অন্ধরা বা সন্ত্রাসীরা সারা পৃথিবীতে বিস্তার করেছে, বাংলাদেশকেও ধর্মীয় রাষ্ট্র করার জন্য চেষ্টা করেছে। এসব ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের আমরা যেভাবে সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছি, তা সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হয়েছে।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম, আফগানিস্তানেও ভুল করেছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এটি কোনভাবেই সঠিক হয়নি। এতে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। একটা দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল মনে হয় তাদের পা টেনে ধরেছে । আমি যুক্তরাষ্ট্রকে রিভিউ করে অতি তাড়াতাড়ি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে জনগণের নির্বাচিত সরকার রয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় এসেছি ও সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করছি। আমরা মানবতার কোন কিছু লঙ্ঘন করিনি। বিএনপিসহ কোন বিরোধী নেতাকর্মীকেই দেশে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদেরকে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ফাঁসি ও জেল দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছোট একটি দেশে এত টিভি, পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকা রয়েছে, যা পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। সারাদিন যে যা বলছে নিউজে আসছে। বাক স্বাধীনতা রয়েছে। কোথায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এটা আমার বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর মোঃ ফজলে আলীর সভাপতিত্বে সাবেক রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক বাসুদেব ধর ও সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সাধারণ সভায় প্রফেসর মোঃ ফজলে আলীকে চেয়ারপার্সন, বিশিষ্ট সাংবাদিক বাসুদেব ধরকে নির্বাহী চেয়ারপার্সন ও মমতাজ চৌধুরীকে মহাসচিব করে ৫ বছরের জন্য ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কার্যকর পরিষদ নির্বাচিত করা হয়।