রাজধানীর বনানীতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনার জন্য মনোরঞ্জন হাজংকে দায়ী করে থানায় জিডি করেছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসান। দুর্ঘটনায় বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হওয়ার দুইদিনের মাথায় সাঈদ হাসান এই জিডি করলেন।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেন বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আজম মিয়া।
ওসি নুরে আজম মিয়া বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। একদিকে মামলার তদন্ত চলছে, পাশাপাশি জিডির বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন পুলিশ অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
প্রাইভেটকার চাপায় এরইমধ্যে এক পা হারিয়েছেন মনোরঞ্জন হাজং। তার আরেক পায়ের অবস্থাও গুরুতর। আহত মনোরঞ্জন হাজং সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
তার মেয়ে ট্রাফিক সার্জেট মহুয়া হাজং ঘটনার ১৪ দিনের মাথায় ওই দুর্ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করতে সক্ষম হন। যদিও ওই মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
বনানী থানায় করা জিডিতে বিচারপতির ছেলে সাঈদ হাসান বলেন, ‘তার গাড়িটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়নি। বরং বেআইনিভাবে উল্টো দিক থেকে মনোরঞ্জনই তার গাড়িতে লাগিয়ে দেন। এতে তিনি ও তার স্ত্রীর প্রাণহানির মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। তাই উল্টোপথে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য এই দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব মনোরঞ্জন ওপরই বর্তায়।’
জিডিতে সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় বিচারপতির ছেলে নাজমুল হাসান উল্লেখ করেন, ‘গত ২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে নেমে চেয়ারম্যানবাড়ির ইউলুপ ঘুরছিলেন তিনি। এ সময় উল্টো দিক থেকে এসে মনোরঞ্জনের মোটরসাইকেলটি তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার স্ত্রীর ডান হাতে তিনটি আঙ্গুল ফ্র্যাকচার (ভেঙে) হয়।’
সাঈদ হাসানের দাবি, এ দুর্ঘটনার পর মনোরঞ্জনকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি। দুই দফায় আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। পরে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে সেখানে অপারেশনের ব্যবস্থা, কেবিন বরাদ্দ এবং মেডিকেল বোর্ড গঠন করাসহ যাবতীয় বন্দোবস্ত সাঈদ হাসান করে দিয়েছেন।
জিডিতে সাঈদ হাসান উল্লেখ করেছেন, দুর্ঘটনায় তার কোনো দোষ ছিল না। তাই পুলিশ ঘটনাস্থলে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেয়নি এবং তার গাড়িটিও জব্দ করেনি।
গত ২ ডিসেম্বর মনোরঞ্জন মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি ইউলুপে।এ সময় একটি প্রাইভেটকার তাকে চাপা দিয়ে চলে যায় বলে মামলায় উল্লেখ করেন বাদী মহুয়া হাজং।
দুর্ঘটনায় আহত মনোরঞ্জনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে তার ডান পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত এবং পরে সংক্রমণ হওয়ায় হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পরই মামলা করতে চেষ্টা করেন মনোরঞ্জনের মেয়ে মহুয়া হাজং। মামলা নিতে গড়িমসিরও অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। অবশেষে গত ১৬ ডিসেম্বর বনানী থানা পুলিশ মামলাটি নেয়।