শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
পবিত্র কোরআনে সাত দিন এবং বারের শুভ অশুভ!
সোহেল সানি
প্রকাশ: শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

অসহনীয় যানজটের কবলে পড়ে ধানমন্ডী যাবার ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখলাম। বিকেল তখন সাড়ে তিনটা।  সিএনজি শান্তিনগর থেকে কাকরাইল হয়ে মৎসভবন, ততক্ষণে ঘড়ির কাটা ছুঁয়েছে পাঁচটায়। পথিমধ্যে কি আর করা, সিএনজিকে ন্যায্যটা বুঝিয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে কাকরাইল। রমনা থানা ঘেঁষা একটা পুরানো রেস্তোঁয়ায় ঢুকে পড়লাম। বয়কে করলাম চা'য়ের অর্ডার। কাপে মুখ বসাতেই কানে বেজে উঠলো দেশসেরা শিল্পী রুনা লায়লার একটি গান। বহুল প্রচারিত সেই  গানটি হলো "বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম, দেখা পাইলাম না- বুধবারে শুভ যাত্রা, বৃস্পতিবারে মানা, শুক্রবারে প্রেমপ্রীতি হয় না ষোলআনা, শনিবারে গিয়া তোর দেখা পাইলাম না, বন্ধু তিন দিন-----।"  

জনপ্রিয় গানটি আমারও মন ছুঁয়েছিলো। প্রেম-উচ্ছ্বাসে জোয়ারে প্লাবন বয়ে যাচ্ছিল কোমলমতিপ্রাণে।  সুরের মূর্ছনা আমার মনের আকাশে প্রেমধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে অনুরণের সৃষ্টি করেছিলো। আমার জীবনে প্রেম এসেছিলো। প্রথম প্রেমের প্রস্তাবটির জন্য বুধবারকেই বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হলো।  প্রথম অনুভূতিটা পরাস্ত হলো। কিন্তু  দমে গেলাম না। ইচ্ছাটাকে জিইয়ে রাখলাম। এর মধ্যে দেড়বছর পার হলো। 

নিত্য পিছু ছুটতে গিয়ে ক্লান্তি নেই এতোটুকু। টগবগে তরুণ। মেয়েটির মুখোমুখি দাঁড়াতে গিয়ে একটা অপ্রীতিকর ঘটনারও জন্ম হলো।  দেড়বছর পরে আসলো ইতিবাচক সাড়া। আমার অশান্ত অশান্ত মন শান্ত হলো। 

প্রেমিকা হাসিলের হাতিয়ারটা ছিলো একটি পত্র। রঙধনুআঁকা জলছাপিত প্যাড। প্রেমপত্র বলে কথা। বহুরঙের কালিতে লেখা পত্রটি কিন্তু মেয়েটির হাতে তুলে দেয়ার বারটি ছিলো  বৃহস্পতি। সেদিন তারূণ্যপ্রদীপ্ত উচ্ছ্বল, উন্মাদনার তান্ডব অনুভূত হয়েছিলো দেহটাজুড়ে। সেকালে প্রেমে মাধ্যম অনস্বীকার্য ছিলো। মেয়েটির বান্ধবী ছিলো মাধ্যম। যাহোক পত্রের উত্তরের আশায় মরিয়া কিন্তু উত্তর মিলছিলো না। এলো সপ্তাহ ঘুরে বৃহস্পতিবার। ওদিনই উত্তর এলো। রাজধানীমুখী হওয়ার পর সেই দুটি মনের ভালোবাসা আর এগুলো না।  তারপরও কি প্রথম প্রেম ভোলা  যায়?  কেউ কি ভুলতে পারে?

যাদের মনে বিরহের স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠেছে তাদের কাছে তো প্রথমপ্রেম অনেক বড় দুর্বলতার বিষয়।  প্রেমহীন মানুষ হয়না। এডলফ হিটলারের মতো খলনায়ক তার দৃষ্টান্ত। হিটলার পৃথিবীর বহুদেশ দখলের অবিস্মরণীয় মুহূর্তগুলোতেও  প্রেমিকাকে কাছে রেখেছিলেন। রাশিয়ার মস্কো দখল যখন পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালো তখনো প্রেমিকা তার বুকে আগলে ছিলো। 

আত্মসমর্পণ করার মতো মানুষ ছিলেন না হিটলার। বরং পরাজয়ের গ্লানি হজম করতে না পেরে প্রিয়তমাকে বললেন এসো মৃত্যুমুখে পতিত হই। বিষপানে আত্মাহুতির ইতিহাস যেনো রূপকথারই গল্প। অবশ্য নাৎসী বাহিনী দিয়ে ষাট লাখ ইহুদী হত্যাকারী জার্মানের অধিশ্বর হিটলারের শত্রুর হাতে পরাজয় অপেক্ষা আত্মহত্যাই উত্তম- এ কথাটি  মনে ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রেমিকা। সত্যিই তাদের সহমরণ হলো।  হিটলারদম্পতির দৈহিক মৃত্যু হলেও বেঁচে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস স্রষ্টা হিসাবে, বেঁচে আছেন প্রেমিক হিসাবে প্রেমিকার সঙ্গে সহমরণ ঘটিয়ে। 
 ফিরে যাচ্ছি মূল আলোচনায়।

দিন বা দিবস সম্পর্কে কোরআন কি বলেছে, আল্লাহ কি বলেন সেদিকে উদ্ধৃতিদানের আগে বলে নিচ্ছি আমার এই লেখা একান্ত যতটুকু জানি তার ওপরে নির্ভরতা রেখে। একেবারে পবিত্র হয়ে ধর্ম পালন করার লোক কম পাওয়া গেলেও ধর্মীয় উস্কানীতে শামিল হতে লোকের  অভাব হয় না। ভারত বিভাগের আগে পরে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হাজার হাজার প্রাণ সংহারই এর প্রমান। এটা দমাতে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হলেও মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে প্রমান করেছে ধর্মীয় কূসংস্কার বর্জন করেই এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কলেমা তাইয়্যেব "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ"  এই অশেষ বানীতেই বিশ্বাস করে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশেও ইসলামের নামে আমরা নানা রকম তান্ডব দেখছি। যাহোক, 
শৈশবে কোরআন শিক্ষায় হাতেখড়ি হলেও মুখস্তবিদ্যার বাইরে এর অর্থ কি তা মত্তলবে হুজুরের কাছে শেখার সুযোগ পাইনি। আমাকে আরবি শিক্ষাদান করেন আমার এলাকার স্থানীয় এক শিক্ষিকা। শাহিদা আপা নামে তাঁকে ডাকি। বহুবছর পর তাঁর দেখা মেলে গতবছর আমি বাড়িতে গেলে। অনেকটা বৃদ্ধা হয়ে যাওয়া আপাকে বিনয়ের সঙ্গে একটি প্রশ্ন করলাম, "আপা আপনি আমার আরবি শিক্ষক ছিলেন, তখন অর্থসহ পড়ালেন কেনো? যদি পড়াতেন আমি তো মানুষ হতে পারতাম।" আপা অতিশয় সরল-সহজে বললেন, "মুই যা শিখছি, তোরে তো তাই শিখাইছি নাকি?"। আমি বললাম তা- তো ঠিক।

কোরআনের বাংলা অনুবাদক হিসাবে গীরিশ চন্দ্র সেনের নাম শৈশবে শুনেছি স্কুলের ধর্ম শিক্ষকের মুখে। জানার অদম্য ইচ্ছা ছোট্টবেলা থেকেই। পেশাগত অবস্থানকে সমৃদ্ধ করার জন্য ইতিহাস গবেষণাও আমার কাছে একটি লোভনীয় আকর্ষণ। বিভিন্ন গ্রন্থের পাশাপাশি সব ধর্ম গ্রন্থের দিকেও চোখ রাখছি।  
কোরআনের বাংলা অর্থ পাঠ করার মাধ্যমে অজানা বহু কিছু জানছি। তবে কোরআনের 'ইকরা' শব্দটির অর্থ 'পড়' এই কথাটির বলিষ্ঠ উচ্চারণ আমি পেয়েছি 'পড়' জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এক বানীতে। একাডেমিক শিক্ষার বাইরেও আমি পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ি। 

এভাবেই একসময় জানতে পারি যে আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হযরত রাসূলে করীম (সঃ) এর নূর তারপর সেই নূরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে অন্যান্য মাখলুক সৃষ্টি করার পর কলমকে হুকুম করেন উপরোক্ত কথা লিখতে। কলম আরশে বসে চার শত বছর পর্যন্ত শুধু লিখলেন, 'লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ'। আল্লাহ কলমকে বললেন,  মুহাম্মাদুর রাসূললুল্লাহ' লিখলে না কেন? কলম ভয়ে কেঁপে উঠলো, বললো কলম আদেশ পেয়ে মুহাম্মাদুর রাসূলল্লাহই শুধু লিখলো না কলমকে রাসূল করীম হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর নামের রহস্যবলীও লিখলো চার হাজার বছর পর্যন্ত। আল্লাহ আরশ সৃষ্টির পর তাকে চারভাগে ভাগ করে দ্বিতীয় ভাগে কলম সৃষ্টি করেন। সমস্ত কিছুর সৃষ্টির আগে আল্লাহ পাক তাঁর কুদরতী অপূর্ব নূর থেকে নবী রাসূল (সঃ)কে সৃষ্টি করেন। 
মানুষ মুখে সব দিনই আল্লাহর দিন" বললেও দিনের মূল্যায়ণ নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভোগে। আমরা একধরণের অপসংস্কৃতির দ্বারা আক্রান্ত অথবা প্রভাবিত। শুনন তাহলে, বাংলা পঞ্জিকায় দিনক্ষণ দেখে দাদা-দাদীকে দেখেছি নাত-নাতনীর বিবাহের দিন ধার্য করতে। অথচ, দিন বা বার দেখে কোন নেতাশাসক বা জননায়কের নিজ দেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিসংগ্রামের জন্য আরেক দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নজীর নেই। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক পরিসরেও " এদিন শুভ, ওদিন অশুভ' এমন সংস্কৃতির লালনের ইতিবৃত্ত রয়েছে। যদিও কোরআন- এ সাক্ষাত মিলে না। যুগেযুগে সবযুগে, দেশেদেশে সবদেশেই এই অপসংস্কৃতির লালনপালন চলে। আমরাও ভূত, পেত্নী, জ্বিন, পরির আঁচর ইত্যাদির গল্পস্বল্প বানিয়ে পরস্পর প্রভাবিত হই। একেক দিনকে একেকরকম দৃষ্টিতে বা মেজাজে মূল্যায়ন করে থাকি। দিন বা দিবস-রজনীকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর দেশে দেশে নির্দিষ্ট হয়েছে রাষ্ট্রীয় কতনা দিবস। ক্যালেন্ডারে সপ্তাহের মোড়কে একেকটি দিনকে 'বার' হিসাবে অভিহিত করে বারো মাসে একবছর এর হিসাব নির্ধারণ করে শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রম করছে পৃথিবী। বিভিন্ন ধর্মে দিক্ষীত বিভিন্ন বর্ণের বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন ভাষা বা বর্ণমালায় এসব দিনকে যে নামেই অভিহিত করুন না কেন আন্তর্জাতিকীকরণের সুবাদে ইংরেজী ভাষায় দিনগুলোর (সাতদিন) অলংকৃত নামগুলোই বিশ্বলয়ে বহুল প্রচলিত। 

এ জনপদের মানুষ হিসাবে আমরা  সাতদিনের শুরুর দিনকে বলি রবিবার, পবিত্র কোরআনে বর্ননানুযায়ী যেদিন আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আরশ। দ্বিতীয় দিনকে বলি সোমবার, এদিন আল্লাহ সৃষ্টি করেন সপ্ত আকাশ। মঙ্গলবার হলো তৃতীয় দিন, যে দিন আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সাত তবক জমিন। চতুর্থ দিন বুধবারে আল্লাহর সৃষ্টি অন্ধকারময় শূন্যমন্ডল। পঞ্চম দিন বৃহস্পতিবার  সৃষ্টি করলেন আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী বস্তুসমূহ। ষষ্ঠ দিন শুক্রবার আল্লাহ সৃষ্টি করলেন  চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র ও গ্রহ উপগ্রহ। সপ্তম দিন শনিবার আল্লাহ তাআলা অবসরগ্রহণ করলেন। 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]