শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, খাবার-হোটেলে ভয়াবহ নৈরাজ্য
মোহাম্মদ শফিক, জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:২৪ পিএম আপডেট: ১৭.১২.২০২১ ১১:২৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

মহান বিজয় দিবসের তিন দিনের ছুটিতে প্রায় ৪ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে বলে জানান পর্যটন  সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে হোটেলে রুম না পেয়ে সৈকতের বালিয়াড়ি, বাস ও খোলা আকাশের নিছে রাত্রি যাপন করছে হাজার হাজার  পর্যটক। আর পযটকদের এ ঢলকে পুঁজি করে কিছু অসাধু  হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মেতে উঠেছে গলাকাটা বাণিজ্যে। খাবার, হোটেল ভাড়া,পরিবহন এমনকি প্রসাব পায়খানাতেও বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নিহাত আলু ভর্তা দিয়ে ভাতের প্লেট ৪০০ ও ডাল দিয়ে ৩০০ টাকা নিচ্ছে এ অসাধু ব্যবসায়ীরা। 

যার কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের পক্ষ থেকে শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) পৃথক সময়ে পর্যটকদের যাতে কোন ধরনের হয়রানির স্বীকার না হয় সেজন্য হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সী পার্ল ১ ও ২ হোটেল থেকে ২ জন পর্যটকদের টাকা হোটেলের কাছ থেকে ফেরত দেয়া হয় এবং দুইটি হোটেলকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার জন্য জরিমানা করা হয়। একইসাথে পর্যটকদের কোন ধরনের অভিযোগ থাকলে জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রে জানানোর জন্য মাইকিং করা হয়। এছাড়া সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।  জেলাপ্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

এছাড়া বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে চারগুণ বেশি পর্যটক একসাথে কক্সবাজারে এসেছে। যার জন্য একটু বিড়ম্বনায় পড়ছে আগত পর্যটকরা। পাশাপাশি পর্যটক সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক টিমসহ সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেলে চড়া দামেও রুম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত যাপন করছে অনেক পর্যটক। আবার কেউ কেউ যাত্রীবাহী বাস,  মানুষ বাসাবাড়ি এবং খোলা আকাশের নিছে  রাত কাটাচ্ছেন। সেখানেও একশ্রেণীর লাঠিয়াল বাহিনী গাড়ী পাকির্ংয়ের নামে ৮০০ টাকা করে আদায় করছে। 

জানাগেছে, কক্সবাজারে পর্যটকদের নিয়ে গলাকাটা বাণিজ্য করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল ছাড়াও পরিবহণ ভাড়া আদায় করছে অতিরিক্ত দ্বিগুন। শহরের অটো বাইক, রিক্সাচালক ও রেষ্টুরেন্ট সবখানে এসব বাণিজ্য করছে। এতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা হয়রানি ও প্রতারিত হচ্ছে। হোটেলে রুম না পাওয়ার সুযোগে খাবার হোটেলগুলোও বাড়িয়ে দিয়েছে খাবারের দাম। পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় রাস্তা মেরামতের কাজ চলমান থাকায় যানজটসহ নানা সংকট ও দুর্ভোগে পড়েছে পর্যটকরা। অনেক ভ্রমণকারী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাত কাটানোর একটি কক্ষের জন্য। 
এদিকে, ঢাকা থেকে আসা আতাউর রহমান নামের এক পর্যটক জানান, ছুটিতে প্রথমবার কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছি। কিন্তু, এখনকার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ঢাকার মতো মানুষের ভিড়। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আসলেও এক রাত সৈকতে ঘুরাঘুরিতে কাটিয়েছি। শুক্রবার সকালে চড়া দামে হোটেলে রুম পেয়েছি। আমার মনে হয় মৌসুমে কক্সবাজার না এসে অফ-সিজনে আসা উচিত।

জামালপুর থেকে আসা শাহীন দম্পতি জীবনের প্রথমবার এসেছেন কক্সবাজারে। তারা জানান, এই প্রথমবার এসে কক্সবাজারকে দেখলাম। একসাথে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ আর দেখিনি। সৈকতে এতো বেশি মানুষ দেখে মনে হচ্ছে এটা ঢেউয়ের সাগর নয়, যেন মানুষের সাগর।

দেখা গেছে, হোটেল মোটেল গুলোতে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত রুম ভাড়া আদায় করছে। প্রতিটি হোটেলে প্রকাশ্যে এসব ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আগে যে রুম ভাড়া ১ থেকে ২ হাজার টাকা ছিল, তা বেড়ে এক লাফে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। একইভাবে পরিবহণ, খাবারের দোকান ও রেষ্টুরেন্টে অস্বাভাবিক দামে পর্যটকদের ঠকাচ্ছে। বিশেষ করে শহরের কলাতলী মোড় থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ইজিবাইক ও রিক্সা ভাড়া জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা। যদি কেউ প্রাইভেটে আসে তাহলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করার বিধান রয়েছে।

কিন্তু, রিক্সা ও ইজিবাইক চালকরা এতে আদায় করছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বিশেষ করে এক শ্রেণীর ইজিবাইক চালকরা পর্যটক দেখলেই দ্রæত পাশে গিয়ে কৌশলে গাড়িতে উঠায়। পরে পথ অনেক দূর আছে, এমন মিথ্যা অজুহাত দিয়ে ভিন্ন পথে নিয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে করে কক্সবাজার পর্যটন শিল্প নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক দম্পতি তাহমিনা আক্তার ও হাসান ইকবাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু পরিবহন,খাবার ও হোটেল ভাড়ায় নৈরাজ্য চলছে তা নয়, প্রসাব পায়খানা করতে গেলেও নিচ্ছে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া কয়লা রেস্টুরেন্ট। এ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন অনেক পর্যটক। কক্সবাজারে বেড়াতে এসে বেসরকারি সংস্থায় কমরত রহমান আরমান বলেন, শুধু গলাকাটা বললেই কম হবে, রীতিমতো অবাক হয়েছি কয়লা রেস্টুরেন্টে এক বাটি মুগ ডালের দাম রাখা হয়েছে ৪০০ টাকা। অথচ এ মানের অন্য রেস্টুরেন্টে এক বাটি মুগ ডালের দাম নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। শুধু ডাল নয় এ রেস্টুরেন্টে সবকিছুরই বাড়তি দাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কোরাল রেস্টুরেন্ট বা কয়লা রেস্টুরেন্ট নয়, কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, জোন, বিচ এলাকা, ইনানীসহ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন স্থানে যে চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে এর মধ্যে বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।

হোটেল-মোটেল গুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম বলেন, ভরা মৌসুমে হোটেলের রুম ভাড়া একটু বেশী। তবে মাত্রারিক্ত যে হোটেল মালিক ভাড়া বেশী আদায় করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানও চলছে। কিছু হোটেলে আর রেস্তোরায় জরিমানা করা হয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান নিয়েছে। এসব পর্যটকদের উপস্থিতি দেখে ট্যুরিস্ট পুলিশ আগের চেয়ে দ্বিগুণ নিরাপত্তা জোরদার করেছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]