শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন
#আজ সারা বিশ্বের বিস্ময়ে রূপান্তরিত হয়েছে বাংলাদেশ: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ। #আজ বাংলাদেশকে নিয়ে সাড়া বিশ্ব গর্ব করে: নিজাম চৌধুরী। #অসামান্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ: অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী। #বিজয়ের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করছেন শেখ হাসিনা: ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া। #শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ: সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। #সমুদ্রের অমিত সম্ভাবনা আমাদের কাজে লাগাতে হবে: ড. সন্তোষ কুমার দেব।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৩৯ পিএম আপডেট: ১৮.১২.২০২১ ১১:৪২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি এবং একই সাথে আমরা স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। সেখানে আজকে আমরা এমন একটা সময় উদযাপন করছি যেখানে আজকের ভোরের পাতা সংলাপের এমন একটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে যেটা সত্যি সারা বিশ্বের মানুষ স্বীকার করছে।  প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার স্বপ্নকে হৃদয়ে লালন করে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য। গত ১২ বছরে তিনি তাঁর লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, উন্নয়নের এই গতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৫৫তম পর্বে বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য‍ অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, জার্মান দূতাবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনারারি কনস্যুলেট, ফর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের  প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সন্তোষ কুমার দেব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।

মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, এই বিজয়ের কথা বলতে গেলে আমার শুরুতেই যে কথাটা মনে পড়ে যে উন্নয়নের যে মহাসড়কে বাংলাদেশ উঠে গিয়েছে এবং সারা বিশ্বের যে বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। এবং আগামী দিনে বাংলাদেশ যে জায়গায় পৌঁছাবে সেটাও আমরা আজ বিশ্বের অনে বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পাচ্ছি। আজ বাঙালি জাতির উৎবের দিন, আনন্দের দিন। বাঙালি জাতির হাজার বছরের বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস। একই সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের দিন। তাদের মাথা অবনত করার দিন। যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দিন। আজকের দিনটি প্রতিটি বাঙালির কাছে বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকবাহিনী দীর্ঘ নয় মাস ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গ্লানি মাথায় নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয় হানাদাররা।   ​বাংলাদেশ এই বিজয় অর্জন করেছিল পৃথিবীর অনেক পরাশক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তো সেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানে এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র ছিল। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেদিন মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছিল।  বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা  দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রীর বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল।​ ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আগে ছিল আরো অনেক দিনের আন্দোলন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা। ১৯৪৮ ও '৫২ এর ভাষা আন্দোলন, '৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, '৬২ সালের ৬ দফা আন্দোলন, '৬৯-'৭০ সালে ব্যাপক রাজনৈতিক গণআন্দোলন এবং '৭১ সালের প্রথম দিনগুলোতে অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন-- এসবই বাঙালিকে প্রস্তুত করে তুলেছিল তাঁর মুক্তিযুদ্ধের জন্য।কিন্তু বাংলাদেশ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে না পারে সেজন্য স্বাধীনতাবিরোধী নরপিচাশরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ২৭৮ ডলার। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মাথাপিছু আয় ২৭৮ ডলার থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমে দাঁড়ায় ১৪১ ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)প্রবৃদ্ধি হয়েছিল স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে। ১৯৭৪ সালে দেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তা নিচের দিকে নামতে থাকে। একই ভাবে খাদ্য জ্বালানীসহ সকল খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তলানিতে নামে। ১৯৯৬ বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত কাজগুলো শুরু করেন।জাতির পিতার আদর্শকে সামনে রেখে আবার এদেশের জিডিপি’র  উত্তরণ ঘটান। গত একযুগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির দিক থেকে যে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছেও বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু যদি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হতেন, যদি আর দশটি বছরও বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি হিসেবে গৌরবের আসন নিশ্চিত করতে পারত। 
নিজাম চৌধুরী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি এবং একই সাথে আমরা স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। সেখানে আজকে আমরা এমন একটা সময় উদযাপন করছি যেখানে আজকের ভোরের পাতা সংলাপের এমন একটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে যেটা সত্যি সারা  বিশ্বের মানুষ স্বীকার করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশের বহুদূর এগিয়ে গেছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ উন্নতির এক রোল মডেল হিসেরে স্বীকৃতি পেয়েছে।  বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমি সব সময় আমেরিকায় একটি রেডিও চ্যানেলের প্রোগ্রাম শুনি। সেটার নাম হচ্ছে এনপিআর রেডিও। এখানে সব সময় সারা বিশ্বের সকল দেশকে কেন্দ্র করে নিরপেক্ষ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। হটাত করে এখানে বাংলাদেশকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হবে। গতকাল যখন প্রোগ্রামটি হলও তখন আমি খুব মনোযোগ দিয়ে প্রোগ্রামটি শুনলাম। সেখানে সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়। সেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনার আমলে এবং বর্তমান সময়ে কিভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে কিভাবে এতদুর এগিয়েছে তা আলোকপাত করা হয়। সেখানে আমাদের বাংলাদেশের অর্জন গুলোকে অনেক সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে এবং সে সময় আমরা বুকটা আসলেই গর্বে ফুলে উঠলো যে আমেরিকার মতো এইরকম একটা রেডিও ষ্টেশনে আমাদের বাংলাদেশের এই অর্জন গুলো কিভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। আসলে ২০০৯ থেকে ২০২১ এই ১২ বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ্য নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ইতিহাসের এক স্বর্ণযুগে।তিনি বাংলাদেশেকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি)থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটিয়েছেন। এদেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে এমডিজি অর্জন,এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা,কৃষি, দারিদ্রসীমা হ্রাস,গড় আয়ু বৃদ্ধি,রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন,১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল,পোশাক শিল্প,ঔষধ শিল্প,রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকের উন্নতি ঘটিয়েছেন।যা বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য গর্বের। আজ এমন একটা সময়ে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি যে, আজ শুধু আমরা না, সারা বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করে।

অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, আমি জাতির পিতার একটি উদ্রিতি দিয়ে আজকে আমার বক্তব্য শুরু করতে চাচ্ছি। 'আমি তোমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছি, তোমাদের এই স্বাধীনতা সংরক্ষণ করতে হবে'। জাতির পিতার যে ভাষণ গুলো রয়েছে তার মধ্যে ৫০টি ভাষণের ইংরেজিতে অনুবাদ করার যে প্রোজেক্ট ছিল সেটা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। জাতির পিতা সব সময় বলতেন আমি গরীব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুঁটাতে চাই। এখন আমার কথা হলও আসলে মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে কিনা। আজ  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, “গত এক দশকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছি, যা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের সুযোগও তৈরি করেছে।  বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে বন্ধুত্ব, তা দাঁড়িয়ে আছে অনন্য এক ভিত্তির ওপর, যা সংহত হয়েছিল ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ৫০ বছর আগে দক্ষিণ এশিয়ার আদর্শের মানচিত্র চিরতরে বদলে গিয়েছিল, জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ নামের এক গর্বিত দেশের। স্বাধীন বাংলাদেশের সেই স্বপ্ন অনুপ্রাণিত করেছিল লাখো মানুষকে। অবশ্য অবিশ্বাসী কেউ কেউ সেটা সম্ভব বলে বিশ্বাস করত না। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা কেবল রাজনৈতিকভাবে মুক্ত একটি দেশ নয়, তা হবে সমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সকলের দেশ। দুঃখজনকভাবে নিজের জীবদ্দশায় তিনি তা দেখে যেতে পারেননি। সেইসব স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করেছিল, তারা এটা উপলব্ধি করতে পারেনি যে বুলেট আর সহিংসতা দিয়ে তার দর্শনকে ধ্বংস করা যাবে না, যে দর্শন তৈরি হয়েছে মানুষের স্বপ্নকে ধারণ করে।” বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতি ১৯৭১ সালে উপনীত হয়। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে তাঁর অমর ভাষণে জাতিকে নির্দেশনা দিয়ে স্বাধীনতার পথ সুগম করেন। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। তিনি ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করা’র আহ্বান জানান।  শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যায় বাঙালি। অবশেষে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১ হাজার ৬৩৪ জন সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। 

ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া বলেন, গৌরবগাঁথা বিজয়ের ৫০ বছর। আমাদের জন্য আনন্দের, গৌরবের। মহান বিজয়ের এদিনে জাতি নানান উৎসবের পাশাপাশি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদদের। স্মরণ করবে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তার সহকমীর্ জাতীয় নেতাদের। জাতি শ্রদ্ধা জানাবে বীরাঙ্গনা আর শহীদমাতাদের।  রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ৯ মাসের একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।  বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্জন ও আত্মগৌরবের দিন আজ। ১৯৭১ সালের এদিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে। বাঙালি জাতির ইতিহাস হাজার বছরের পরাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হলেও এই ভূখণ্ডের বাঙালির স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আসেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের চেতনার বীজ বপন হয় সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। যেখানে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছিল রক্তের বিনিময়ে হলেও তারা তাদের দাবি আদায় থেকে পিছপা হবে না। বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূরীকরণে তথা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, নির্যাতন নিপীড়নের থেকে মুক্তির মহামাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। লাখো শহীদের রক্ত, লক্ষ লক্ষ মা- বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেখা দেয় সেই বহু আকাঙিক্ষত মহামুক্তি। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় অর্জন বাঙালির সম্মিলিত আবেগ, অনুভূতি ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ফল। আজ এই বাংলাদেশের বর্তমান যে রূপটি আমরা দেখতে পারছি বাংলাদেশের এই ব্যাপক অর্জন এমনিতেই সম্ভব হয় নি। এর পেছনে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার স্বপ্নকে হৃদয়ে লালন করে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য। গত ১২ বছরে তিনি তাঁর লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, উন্নয়নের এই গতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, আজ আমরা বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে মেতে উঠেছে গোটা বাঙালি জাতি। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বন্যায় এবং ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত আব্রুর বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন এই বাংলাদেশ। পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল থেকে গৌরব ও অহংকারের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, ধ্বংস ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ৯ মাসের মরণপণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের, জন্ম হয় লাল-সবুজ পতাকার।  মার্চ মাসের পঁচিশ তারিখ পাকিস্তানি বাহিনী রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতির ওপর। শুরু হয় যুদ্ধ, স্বাধীনতার যুদ্ধ। যুদ্ধের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তার ৭ মার্চের ভাষণেই ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে বলেছিলেন। নিরস্ত্র বাঙালি জাতি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণের মুখে যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে যোদ্ধায় পরিণত হয়েছিলো। তারপর নয় মাস জুড়ে বাঙালি জাতি রচনা করেছিলো এক নতুন ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরে আজ বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তা কম গৌরবের নয়। কিন্তু এই গৌরবের পাশেই ইতিহাসের কিছু কলঙ্কও রয়ে গেছে। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলতে দিন রাত পরিশ্রম করছেন, যখন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় সন্তোষজনক পর্যায়ে উত্তীর্ণ, যখন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সদস্যপদ অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে, তখনই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই মহান বিজয়ের ইতিহাসকে সমাধিস্থ করতে চেয়েছিল খুনি জিয়া। আজ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতায় কারা আছেন সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তেমনি দেশ কোন নীতি-আদর্শ দ্বারা চালিত হচ্ছে, সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দিন বদলের সনদ নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকার ফলে সরকারের ধারাবাহিকতা বর্তমান সরকারকে দেশের উন্নয়নকে তরান্বিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন এবং নিরলস প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এছাড়াও উন্নয়নশীল দেশের তালিকা অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশ সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রোল মডেল হয়েছে আমাদের দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হচ্ছে। 

ড. সন্তোষ কুমার দেব বলেন, আজ আমরা এমন একটি মাহেন্দ্রক্ষণে আছি যেখানে আমরা মুজিব শতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পালন করছি। আমি প্রথমেই আজকের এই দিনে আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমরা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টের সেই কালরাতে তাঁর পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাতবরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ ইজ্জতহারা মা-বোনদের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন, “তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব- এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।” এইযে একটা ভাষণের উপর ভিত্তি করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল যার ফলে আজকের এই বিজয়ের দিনটি আমরা উদযাপন করতে পারছি।  যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিজয়ের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। শুরু হয় একাত্তরের পরাজিত শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন। ২১ বছর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিলেন বঙ্গবন্ধু, চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় ফেরেন। কিন্তু ২১ বছর জমে থাকা জঞ্জাল সরাতেই কেটে যায় তার অনেকটা সময়। এই সময়ে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার করছেন। সবচেয়ে বড় যে কাজটা করেছেন, তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া। কিসিঞ্জারের কল্পনার তলাবিহীন ঝুড়ি তো নয়ই, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখন সক্ষমতায়, মর্যাদায়, সামর্থ্যে সবার বিস্ময়। দেশে শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, অবকাঠামোসহ প্রতিটি ক্ষেত্রকে উন্নয়নের এক মহাসড়কে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  দৃঢ় মানসিকতা, দূরদর্শিতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার, বিশ্বের অনগ্রসর দেশ ও জাতির আদর্শ শেখ হাসিনা আজ দক্ষ নেতৃত্বের রোল মডেল। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির সব আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল তার হাত ধরেই বাঙালি জাতি এক ও অভিন্ন সত্তায় গড়ে উঠছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]