বাঙালি জাতির রাজনৈতিকইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা আর বিজয়। হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। প্রাচীনকালে পূর্ব ভারতের যে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর। বসবাস ছিল, আজকের বাংলাদেশ তার একটি অংশমাত্র। এ অঞ্চলের মানুষগুলো নানা গোত্র, গোষ্ঠী ও স্বতন্ত্র। জনপদে বিভক্ত ছিল। নানা ঘাতপ্রতিঘাত, সংযোজন বিয়োজনের।
মাধ্যমে একটি ভৌগোলিক ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হয়ে কালক্রমে বঙ্গ থেকে বাঙ্গাল বা বাঙ্গালা বা বাংলা, সুবে বাংলা, নিজাম, বেঙ্গল, পূর্ব বাংলা, পূর্ব পাকিস্তান এবং পরিশেষে স্বাধীন বাংলাদেশ ও সার্বভৌম বাঙালি জাতির অভ্যুদয় ঘটে। অষ্টম শতাব্দীতে পাল বংশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা মূর্ত হয়ে উঠলেও বিভিন্ন বিজাতীয়। বিশেষ করে ঔপনিবেশিক শক্তির আগমন এবং হস্তক্ষেপের ফলে এর স্বাভাবিক। বিকাশ সম্ভব হয়নি। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পাল বংশ, একাদশ শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যের সেন বংশ, দ্বাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত তুর্কি ও আফগনি সুলতানি শাসন, পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত মুগল সবেদারি ও নবাবি আমল, সপ্তদশ থেকে অষ্টদশ শতাব্দী। পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও শোষণ, অষ্টদশ শতাব্দীর। মধ্যভাগ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের শাসন এবং সর্বশেষ ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসন ও শোষণে এই বাংলা বারবার হয়েছে নিষ্পেষিত, বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও অবহেলিত। প্রায় ১২শ' বছরের ভিন্ন ভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর এ শাসন ও শোষণের ফলে সোনা ফলা বাংলার উর্বর জমিন যেমন হয়ে পড়েছিল নিস্ফলা, তেমনি এ ভূখণ্ডের মানুষগুলোও বারবার থেকেছে অধিকার বঞ্চিত, সম্পদহারা নিঃস্ব রিক্ত জীর্ণ শীর্ণ। হাজার বছরের বেশি সময়রে এসব অপশাসন, শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে এ বাংলায় বিভিন্ন সময় দেখা দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহ, ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, চাকমা বিদ্রোহ, প্রজা বিদ্রোহ। গড়ে উঠেছে ফারায়েজি আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন ও সমাজ সংস্কারসহ নানা আন্দোলন। তিতুমীরের কৃষক বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডের মানুষের রক্তেমাংসে বিদ্রোহের আগুন প্রবাহিত হতে থাকে। পরবর্তিত সময়ে। শোষণের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দানী বেঁধে ওঠে। একপর্যায়ে লাহোর প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তান। আন্দোলন এবং বিদায় নেয় ব্রিটিশ । কিন্তু পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষণ, সামরিক শাসন, ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে পোড় খাওয়া বাঙালি ১৯৪৮ সালেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা অধিকার রক্ষার জন্য জীবন। উৎসর্গ, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন, ৬১টিতে শিক্ষা। আন্দোলন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬৬টিতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীকার। আন্দোলন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে স্বৈরশাসক দমন পীড়নের পথ বেছে নেয়। শাসকচক্র শেখ মুজিবসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করলে গোটা জাতি ইস্পাত-কৃঢ় মনোবল নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে। সামরিক শাসকরা শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য। হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উনসত্তরে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দানের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলা ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। গোটা দেশ এক ব্যক্তি নির্ভর হয়ে ওঠে। নানা বিরোধিতা ও ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসে ব্যাপক প্রাণহানির পরও বঙ্গবন্ধুর একক সিদ্ধান্তে সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সমগ্র পাকিস্তান শাসনের সাংবিধানিক অধিকার অর্জন করে আওয়ামী লীগ। বাঙালি জাতির এ ধারাবাহিক সংগ্রাম ও আন্দোলনকে দমানোর জন্য। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক অস্ত্রের ভাষায় বল প্রয়োগের কৌশল বেছে নিয়ে। প্রকান্তরে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই ত্বরান্বিত করে। আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গোটা জাতি ধীরে ধীরে স্বাধিকার আন্দোলনের সমস্ত পর্যায়গুলো অতিক্রম করতে থাকে। একাত্তরের ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়, এ দেশের নাম হবে। 'বাংলাদেশ, জাতীয় সঙ্গীত হবে ‘আমার সোনার বাংলা পতাকা হবে মানচিত্র খচিত, বঙ্গবন্ধু হবেন জাতির পিতা এবং মুক্তি সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক। আসে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু কৌশলে ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম। স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।' বঙ্গবন্ধুর গেরিলা যুদ্ধের এই আহ্বান এবং প্রকারন্তরে স্বাধীনতা ঘোষণাকে হৃদয়ে ধারণ করে সমগ্র জাতি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আসে সেই ভয়াল ২৫ মার্চ। আপারেশন সার্চ লাইট' নামে বিশ্বের অন্যতম। সামরিক শক্তি পাকিস্তানি সুসজ্জিত সেনাবাহিনী রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর পৈশাচিক ও বর্বরোচিত হামলা চালায়। তারা শত শত ছাত্র, যুবক, নারী-শিশু, ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। মধ্য রাতে গ্রেফতার হওয়ার আগেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ। মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ঘোষণা করেন স্বাধীনতা এবং তার পরেই পাকবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ক্যান্টমেন্টে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর । এই স্বাধীনতার ঘোষণা পরদিন ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম, ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করা হয়। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান, শিক্ষক আবুল কাশেম সন্দীপ, মমতাজ উদ্দিন ও বেতারের কর্মকর্তা বেলাল মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাটি বারবার বেতারে প্রচার করতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রজমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সূত্র ধরেই ১০ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিব নগর সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী, এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য করে এবং কর্নেল এমএ জি ওসমানিকে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ-এর দায়িত্ব দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রবাসী সরকারের যাত্রা। আর এই সরকারের অধীনেই গোটা দেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের নেতৃত্বে চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধ। এরই মধ্যে মুজিবনগর সরকারের আহ্বানে ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় ও হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেয়। তল্কালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া হয় অস্ত্র। সমগ্র বিশ্বে জনমত সৃষ্টি, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ এবংমুক্তিযুদ্ধের পক্ষে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি পৃথিবীর সব বড় বড় দেশ সফর করেন। বিশ্বের মানবতাবাদী বিভিন্ন সংগঠন, পত্র-পত্রিকা এবং সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে। বিভিন্নভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ওই সময় বিশ্বের কোনো দেশই পাকিস্তান সামরিক সরকারকে সমর্থন করেনি। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বলিষ্ঠ ভূমিকার ফলে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী গণহত্যা বন্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। দেশের প্রতিটি স্থানে চলতে থাকে মরণপণ যুদ্ধ। মার্চ থেকে টানা ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যখন নাস্তানাবুদ ও কোণঠাসা, যুদ্ধে কার্যকর সুফল না পেয়ে তারা বেছে নেয় পােড়ামাটি নীতি। পাকবাহিনী গ্রামে পর গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে থাকে। নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে সাধারণ মানুষকে। সমগ্র বিশ্ব এবং বিশ্ব বিবেক সমর্থন জানায় বাংলাদেশের এই স্বাধীনতাযুদ্ধকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই যুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উত্থাপিত এবং যুদ্ধকে পাকিস্তানের সমর্থন সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভেটো দেয় সোভিয়েত রাশিয়া। এপ্রিলে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগোর্নি ও চীনের প্রেসিডেন্ট চৌ এন লাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে চিঠি লিখে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ না চালানো এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার জন্য অনুরোধ করেন। ৭ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জার চিফ অব স্টাফদের বৈঠকে তথ্য বিশ্লেষণে নিশ্চিত হন যে, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকার যে যুদ্ধ পরিচালনা করছে, তার ফলাফল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাবে। তারা এই যুদ্ধে বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে। না। তারপরও তারা পাকিস্তানকে সহায়তার জন্য মার্কিন সামরিক যুদ্ধজাহাজ ৭ম নৌবহর (এন্টারপ্রাইজ) পূর্ব পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে পাঠায়। ৭ম নৌবহর যখন মালাক্কা প্রণালি অতিক্রম করছিল তখনই এর বিরুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়া তাদের সাবমেরিন সংবলিত যুদ্ধ জাহাজ ভারত মহাসাগরে পাঠানোর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। গোপন সংবাদের মাধ্যমে ভারত ও মুজিবনগর সরকার নিশ্চিত হয় যে, এই যুদ্ধে চীন কোন পক্ষই অবলম্বন করবে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র ও কূটনীতি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির বিশ্ব সফরের পর বিশ্বের মানবতার কল্যাণকামী প্রায় সব দেশই তখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোণঠাসা ও সমর্থকহীন একঘরে হয়ে পড়ে পাকিস্তান। এদিকে নভেম্বরেই ভারত সরকার মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী দিয়ে সহায়তা দিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানিকশ’ ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার পরামর্শক্রমে কলকাতায় তাদের চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) মে. জেনারেল জেএফআর জ্যাকবকে সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণেরও নির্দেশ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই কমান্ড বিএসএফ-র সহযোগিতায় পরিকল্পিতভাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য মোতায়েনসহ সকল সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তের ভারতীয় বিমানঘাঁটিতেও যুদ্ধকালীন সতর্কতা অবলম্বন করে। উগ্র মস্তিষ্কের পাকবাহিনী ৩ ডিসেম্বর এই ভেবে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকা ও বিমান-ঘাটিতে বিমান হামলা চালায় যে, এই আক্রমণের ফলে ভারত নিজেরাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে, তখন তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ও সৈন্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবে না। ৩ ডিসেম্বরে পাক বাহিনীর। আক্রমণের সীমান্তবর্তী ১৩টি ভারতীয় বিমানঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হলেও আগে থেকেই সতর্ক থাকায় তাদের কোনো যুদ্ধবিমানই ধ্বংস হয়নি। ৪ ডিসেম্বর তাৎক্ষণিকভাবে ভারতীয় সেনা বাহিনী জল, স্থল ও আকাশে একযোগে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শ্যাম মানিকশ পর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইস্টার্ন কমান্ডকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সরাসরি যুদ্ধের নির্দেশ দেন। ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং সিজিএস মে, জেনারেল জেএফআর জ্যাকব তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী। মুজিবনগর সরকারের সাথে সমন্বয় করে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে সমগ্র বাংলাদেশেই একযোগে আক্রমণ চালায়। পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অর্ধশত অত্যাধুনিক ট্যাংক, ভারী সাঁজোয়া যান, বিমান বিধংসী কামান ও প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় সৈন্য যশোর, সিলেট, হিলি, রংপুর, পঞ্চগড়, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, সাতক্ষীরাসহ সীমান্তবর্তী সব এলাকায় পৌছে যায়। তারা স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর সাথে পরামর্শক্রমে যৌথভাবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল আক্রমণ শুরু করে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর ক্ষীপ্রগতির হামলা ও। ব্যাপকহারে বােম্বিং-এ মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাকবাহিনীর সবক'টি বিমানঘাঁটি অকেজো হয়ে পড়ে। নৌবাহিনীর তৎপরতায় চট্টগ্রাম ও মোংলায় পাকবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ গাজীসহ অন্যান্য নৌযানও অকেজো হয়ে পড়ে এবং তাদের সমস্ত নৌশক্তি এক প্রকার ধ্বংস হয়ে যায়। এরই মধ্যে ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। ওই দিনই ভটনিও বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। খুবই দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত রাশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত সরকার খুবই দ্রুততার সাথে পরস্পরের সাথে আলোচনা এবং যোগাযোগের মাধ্যমে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিষয় একমত হয়। এর পর আলোচনা গড়াতে থাকে আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া ও যুদ্ধ বিরতির বিষয় নিয়ে। এদিকে ৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি সংবলিত আর্জেন্টিনার আনা একটি প্রস্তাব ১০৪-১১ ভােটে গৃহীত হবার পর পাকিস্তান আরো বেকায়দায় পড়ে যায়। এরই মধ্যে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ’ পাকিস্তানের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমীর। আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির কাছে আত্মসমর্পণের বার্তা পাঠান। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা, মালিকের উপদেষ্টা মে. জেনারেল রাও ফরমান আলী মানেকশ'র বার্তাটি গভর্নরকে দেন। ৯ ডিসেম্বর গভর্নর মালিক যুদ্ধবিরতির সুপারিশসহ প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে জরুরি বার্তা পাঠান। গভর্নরেরবার্তা পেয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তাকে জানান যে, নিয়াজিকে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত ও দিনক্ষণ তারা উভয়ে আলোচনা করে ঠিক করবেন। ১৪ ডিসেম্বর গভর্নর মালিক তার পুরাতন গভর্নর হাউজে মন্ত্রিপরিষদের মিটিং ডাকেন। সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে। খবরটি পেয়ে যান জ্যাকব। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিলং এয়ারবেস কমান্ডার ভাইস মার্শাল দেবাশরকে নির্দেশ দেন গভর্নর হাউজে দ্রুত বােম্বিং করার জন্য। গভর্নর। হাউজ বঙ্গভবনে বােম্বিং-এর পর বাংকারে পালিয়ে কোনো রকমে তারা আত্মরক্ষা করেন এবং গভর্নর ডা. মালিক তার মন্ত্রিপরিষদসহ পদত্যাগ করে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এদিন বিকাল ৩টায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পাক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হামিদ নিয়াজীকে জরুরি। বার্তা পাঠিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এদিকে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী ঢাকার চারদিকে ঘিরে ফেলে। মুক্তাঞ্চল টাঙ্গাইলসহ আশপাশে মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় অর্ধশত বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে কয়েক হাজার ভারতীয় ছত্রিসেনা নামে। টাঙ্গাইল অঞ্চলে ছত্রি সেনা কমান্ডার মে. জেনারেল নাগরার নেতৃত্বে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর একটি কন্টিনজেন্ট সাভার হয়ে মিরপুর পর্যন্ত চলে আসে। মে. জেনারেল নাগরার সাথে লে. জেনারেল নিয়াজী এক সাথে কমান্ড্যান্ট কোর্স করায় তাদের মধ্যে আগে থেকেই সখ্য ছিল। সেই সূত্র ধরে জেনারেল নাগরা মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে জেনারেল নিয়াজীকে একটি বার্তা পাঠায়। তাতে বলা হয়, “প্রিয় আব্দুল্লাহ, ঢাকার চারদিক মুক্তি ও মিত্র বাহিনী ঘিরে ফেলেছে। মুক্তি বাহিনী দিন দিন প্রতিশোধ পরায়ন ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি ক্রমেই। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তারা (পাকিস্তানি বাহিনী) কী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, না অন্য কিছু ভাবছে। আমি এখন মিরপুর ব্রিজে অপেক্ষা করছি। তােমার প্রতিনিধি পাঠাও।' এই বার্তা পেয়ে নিয়াজির পক্ষ থেকে। জানতে চাওয়া হয়, জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কিছু করা তাদের (ভারতীয় পক্ষ) সম্ভব হবে কিনা। মিত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আত্মসমর্পণের কথা ভাবলে তাদের জন্য সব কিছুই করা হবে। তখনো দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছিল। এরই মধ্যে ইস্টার্ন কমান্ডের সিজিএস জেনারেল জ্যাকব পাকিস্তান বাহিনীকে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করার জন্য ভারত ও মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে জে. নিয়াজীকে বার্তা পাঠান। দিল্লিস্থ মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে এই বার্তাটি পাঠানো হয়। এই বার্তায় বলা হয়, জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী পাকিস্তানি বাহিনী সমস্ত নিরাপত্তা পাবেন এবং দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সব কিছু করা হবে। তাছাড়া তাদের ওপর কোনো প্রকার প্রতিশোধমূলক কিছু করা হবে। এই বার্তাটি হাতে পেয়ে জেনারেল নিয়াজি ও সামরিক প্রধান জেনারেল রাও ফরমান আলী ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত হার্ট স্পিভ্যাকের সাথে দেখা করেন এবং ওয়াশিংটনকে কিছু একটা করার জন্য অনুরোধ জানান। আত্মসমর্পণের বিষয়ে স্পিভ্যাক ওয়াশিংটনকে সব কিছু ওয়াকিবহাল করলে সেখান থেকে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে ব্রিফ করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হামিদ লে. জেনারেল নিয়াজীকে বলেন যে, জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধরত সমস্ত পাকিস্তান বাহিনী ও পূর্ব পাকিস্তানের সকল পাকিস্তানের নাগরিককে রক্ষা করে একটি মধ্যস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরদিন ১৪ ডিসেম্বর রাতে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পাক বাহিনী ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের ধরে।
নিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর জেনারেল। মানেকশ' পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিষয়টি চূড়ান্ত করে এবং ওইদিন বিকাল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধ বিরতিতে উভয় পক্ষ সম্মত হন। এরই মধ্যে আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত কপি দিল্লি থেকে জেনারেল মানেকশ হয়ে জ্যাকবের হাতে এসে। পৌছায়। জেনারেল মানেকশ’ ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ জেনারেল অরোরী এবং জেনারেল জেকবকে ১৬ ডিসেম্বর সকালের মধে ঢাকায় পৌছার নির্দেশ দেন। ১৬ ডিসেম্বর সকালে জেনারেল হামিদ নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ দিন ভােরে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কিসিঞ্জার জানান যে, পাকিস্তানের মৃত্যুঘণ্টা বেজে উঠেছে। আত্মসমর্পণের কোনো বিকল্প নেই। তারাও পাকিস্তানকে গ্রিন সিগন্যাল পাঠান। জেনারেল জেকব ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টার মধ্যেই সঙ্গীয় ফোর্সসহ কলকাতা থেকে ঢাকা পৌঁছেন এবং তাদের পাকিস্তানি বাহিনী। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ক্যান্টনমেন্টে নিয়াজীর অফিসে নিয়ে যান। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে এসে জেনারেলনিয়াজী মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে। অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মানিকশ ও জেনারেল জ্যাকবের দৃঢ়তার কারণে শেষ পর্যন্ত নিয়াজি এ শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হন। জেনারেল জ্যার্ক নিয়াজির সাথে বৈঠক করে আত্মসমর্পণের স্থান, সময় ও দলিলের খুঁটিনাটিসহ সমস্ত কিছু চূড়ান্ত করেন। বিকাল ৩টায় ৯টি হেলিকপ্টার। বহর নিয়ে ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান এবং মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান উইং কমান্ডার একে খন্দকারসহ মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি, ভারতের এয়ার মার্শাল দেওয়ান, ভাইস এডমিরাল কৃষ্ণ এবং গণমাধ্যমের সদস্যসহ ঢাকায় পৌঁছেন। তাদের সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে আত্মসমর্পণের জন্য আগে থেকেই পাকিস্তানের প্রায় ৯৩ হাজার সৈন্য ও নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। লে. জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে ছিলেন মে, জেনারেল রাও ফরমান আলী, মে. জেনারেল টিক্কা খান, মে. জেনারেল জামশেদ, নেী। বাহিনীর প্রধান রিয়ার এডমিরাল শরিফ, বিমানবাহিনীর এয়ার কমোডর ইমাম, ব্রিগেডিয়ার আবু বকর। তাদের রেসকোর্স ময়দানে নিয়ে আসেন মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডার মেজর হায়দার। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল তখন ৪টা ৩১ মিনিট। রেসকোর্স ময়দানের চারদিকে লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার জয়বাংলা ধ্বনিতে। আকাশ বাতাস তখন প্রকম্পিত। নির্দিষ্ট টেবিলে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেই জেনারেল নিয়াজি টেবিলের ওপর তার রিভলবারটি খুলে রাখেন এবং জেনারেলের র্যাংক ব্যাজও খুলে ফেলেন। সে সময় কসাই নামে খ্যাত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চল প্রধান দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জেনারেল আমীর। আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির দু'চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। পড়ন্ত বিকালের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে হাজার-লক্ষ-কোটি মুক্তিপাগল বাঙালির কণ্ঠে তখন একটিই স্লোগান ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।' দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগ ও ২ লাখ মা-বােনের সম্ভ্রমহানিসহ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আসে কাঙ্ক্ষিত সেই স্বাধীনতা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাঙ্ক্ষিত ও স্বপ্নের সোনার বাংলা' হয় স্বাধীন। অভ্যুদয় ঘটে ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। প্রায় দেড় হাজার বছরের শোষণ-বঞ্চনা আর নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতি পায় নিজের দেশ, লাল সবুজ পতাকা আর নিজস্ব পরিচিতি। (তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ ডকুমেন্ট-ভারত সরকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল পত্র-বাংলাদেশ সরকার, লে. জেনারেল জেএফআর জ্যাকবের-একটি জাতির জন্ম, মে. জেনারেল রাও ফরমান আলীর বাংলাদেশের জন্ম, অধ্যাপক ড, হারুন অর রশিদের বাংলাদেশের ইতিহাস এবং অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলামের স্বাধীনতার ইতিহাস)
লেখক: সম্পাদক, স্বদেশ প্রতিদিন