রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিজয়ের সুর্বণজয়ন্তী: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বজয়ের পথে বাংলাদেশ
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৬.১২.২০২১ ১২:০৬ এএম | অনলাইন সংস্করণ

আজ মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাসে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিল বাঙালি জাতি। এই দিনেই ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্যদিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালি জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। 

৫০ বছরের বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের প্রতীক বা মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, নারীর স্বাধীনতা, মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্তি, শ্রমশক্তি, শিশুস্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তিসহ নানা সূচকে আজ বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে নেতৃত্বে সমাসীন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে দেশকে উচ্চশিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বাঙালি জাতিকে দিয়েছে মহান স্বাধীনতা। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তি। দেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশকে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে আসতে দেশ ও দেশের মানুষকে বিপুল ত্যাগ-তিতিক্ষা সইতে হয়েছে। এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। মনে রাখতে হবে বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে ৭১ এর বিজয়ের নেপথ্যে রয়েছে বেদনার বিরাট আখ্যানও। 

অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের; যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের। এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল রাজনৈতিক নেতা। তাদের সবাইকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল বহু স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা বুকে নিয়ে। কিন্তু একরাশ স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও অনেকেরই অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে গেছে। সেই সঙ্গে এও বলতে হচ্ছে যে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম হত্যাক-ের শিকার হতে হয় ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট। জাতির পিতার হত্যাকা-ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় উল্টোপথে। ‘৭৫ এর পরবর্তী সময়ে যারা দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন তারা ছিলেন বর্বর পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। ক্ষমতায় বসেই তারা বাংলাদেশকে নব্যপাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ থেকে জাতির পিতা নাম মুছে ফেলতে সব আয়োজন করেন। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োগ দেন। বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধু। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। জামায়াতের আমির গোলাম আজমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বদান করেন। রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে জামায়াত তার পূর্ণব্যবহার শুরু করেন। দিনদিন পূর্ণশক্তি সঞ্চার করে দলটি। সারাদেশ জুড়ে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা গলাটিপে হত্যার চেষ্টা থেকে একটুকু বিরতি দেয়নি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী জিয়া। তিনি ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ক্যান্টমেন্টে বসে প্রতিষ্ঠা করেন বিএনপি। এতে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী চক্রই সর্বসর্বা হয়ে ওঠেন। ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে এভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি ঘূর্ণাবর্তে পড়ে পথ হারাতে থাকে। জান্তা জিয়া পাকাপোক্তভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাশাপাশি সেনাবাহিনী-মুক্তিযোদ্ধা শত শত সৈনিক ও সেনা অফিসার হত্যায় মেতে ওঠেন। বাঙালি জাতি দেখতে পান জিয়াউর রহমান নামে এক দানব বাংলাদেশের বুকের ওপর চেপে বসেছে; যিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি। বঙ্গবন্ধু হত্যায় খুনি মোশতাকের সেরা সহযোগী। খুনি মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে জিয়াকেই প্রধান সিপাহীসালার হিসেবে বেছে নেন। জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশিদ-ডালিমদের নেতৃত্বদেন। খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশের নানা দূতাবাসে উচ্চপদে চাকরি দেন এবং বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর খুনিদের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখেন। স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক জামায়াতকে বিএনপি অঙ্গীভূত করে যেভাবে বলিয়ান হবার চেষ্টা করেছে, তাতে একটা সময় এসে জামায়াত-বিএনপির জন্য গলগ্রহে পরিণত হয়। এও বলা যায়, ঘাতক জামায়াত, ক্রমাগত বিএনপির শরীরের রক্ত চুষে খেয়ে দুর্বল করে ফেলে। রাজনৈতিকভাবে বিএনপি দেওলিয়া হওয়ার পেছনে রয়েছে জামায়াত কূটকৌশল। মুসলীম লীগকে জামায়াত যেভাবে নিঃশেষ করেছে, বিএনপিকে একই কায়দায় নিঃশেষ করে দিয়েছে। 

৩০ লাখ শহীদ ও হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ আজ ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। এই দীর্ঘ সময়ে স্বাধীতার সুফল বাংলাদেশের মানুষ ঘরে তুলতে পারেনি, নেপথ্যে সাম্রাজবাদের কলকাঠি নাড়ার কারণে। সাম্রাজ্যবাদ ও বর্বর পাকিস্তান মিলে স্বাধীন বাংলাদেশের যে ক্ষতি করেছে, তা  থেকে কাটিয়ে উঠতে প্রাণান্তর চেষ্টা করে আসছেন বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রের মানস কন্যা রাষ্টক্ষমতায় এসেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা প্রতিষ্ঠায় প্রাণান্তর চেষ্টা করতে থাকেন এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে দেশ আজ বিশ্বমাঝে উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে আছে এবং দেশ অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক জামায়াতকে অঙ্গীভূত করে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কতটা দেওলিয়া হয়েছে তা নানা ঘটনাপ্রবাহই প্রমাণ করে। বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একযোগে পৃথিবী থেকে সরিয়ে জন্য বেগম জিয়া এবং তার গুণধরপুত্র তারেক রহমান গ্রেনেড হামলাও করেছিল। শুধু তাই নয়, দেশের বাইরে বসে এখনো বাংলাদেশকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত এই তারেক রহমান গং। দেশের উন্নয়নকে তারা চোখে দেখে না। 

পৃথিবীতে অনেক দেশই স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো বিজ্ঞানের দিবস সব দেশের নেই। এই বিজয় ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশটাকে আত্মপ্রত্যয়ের জায়গায় নিয়েছিলেন। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতেই শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ৭৫-এ বেঁচে গিয়েছিলেন। তারপর ৮১ সালে দেশে ফিরে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের সবাইকে হারিয়ে শুধু এদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কথা বলেছিলেন। আজকের অবস্থানে বাংলাদেশকে পৌঁছাতে তিনি দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এবারের বিজয় দিবসকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দেশবাসীকে নিজে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। আমি নিজেও রাষ্ট্রীয় সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবো বলে আশা করছি। এটা আমার জন্য পরম প্রাপ্তি। বাংলাদেশের আজকের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিজয়ের দিনে শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করার প্রত্যয় নিতে হবে। এই হোক বিজয়ের চেতনায় অঙ্গীকার। কারণ তিনিই বাংলাদেশকে বিশ্বজয়ের পথে এনেছেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক :
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
পরিচালক, এফবিসিসিআই
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]