#বাজেট ৭৮৬ কোটি টাকা থেকে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা এসে পৌঁছেছে। #জিডিপি ১০০ ডলার থেকে এখন তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। #নিম্নআয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। #সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। #আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দেশ। #৯৯ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের সুবিধা। #ইন্টারনেট ব্যবহারে দশটি দেশের একটি বাংলাদেশ। #এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখছে বাংলাদেশ। এ বছর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী। এই ৫০ বছরের পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বিদেশিদের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল এক তলাবিহীন ঝুড়ি। আর এখন সমৃদ্ধ-স্বনির্ভর বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে ৭৬০ গুণ। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। ২০২০-২১ অর্থবছরের যা উন্নীত হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায়। আর আগামী জুনে প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। ১৯৭০ থেকে ২০২০, বাংলাদেশের এ ৫০ বছরকে নানা সূচকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্লেষণ করতে হলে সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতির সব তথ্যের একটি তুলনামূলক সমাবেশ ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এখানে হয়তো সার্বিক বিশ্লেষণের সব তথ্য নেই। বর্তমানে উদাহরণ হিসেবে নানা জটিল মাপকাঠি ব্যবহার না করেও শুধু চারটি তুলনামূলক তথ্য ব্যবহার করা হলো।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বাড়ছে গড় আয়ু। অর্থনীতির আকার বাড়ছে। বাড়ছে বাজেটের আকার। বাজেট বাস্তবায়নে পরনির্ভরতাও কমছে। অবকঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে। বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতাও বাড়ছে। বাংলাদেশ আকাশে স্যাটেলাইট হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। তথ্য প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরের সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক কনজারভেটিভ থিংক ট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সূচকে বিশ্বের ১৬৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম। ছোট ছোট কিছু সমস্যা দূর করা গেলে এই সূচক আরও ভালো করা সম্ভব বলে মনে করেন দেশের সংশ্লিষ্টরা।
কনজারভেটিভ থিংক ট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে ৫৬.৫ স্কোর করে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম। ভারতের অবস্থান ১২১তম। অন্যদিকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫২তম। করের বোঝা, ব্যবসার স্বাধীনতা ও শ্রম স্বাধীনতায় আগের চেয়ে স্কোর বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের। গতবছর বাংলাদেশের অবস্থান একধাপ নিচে ছিল। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবারের স্কোরে বাংলাদেশ ৪০ দেশের মধ্যে ২৫ নম্বরে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে কেবল ভুটান। দেশটির স্কোর ৫৮.৩ ও অবস্থান ১০৯তম। বাংলাদেশের ওপরে অবস্থান হলেও ভুটানের এ বছর অগ্রগতি কমেছে এবং বাংলাদেশের বেড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে নেপাল। তালিকায় ৮৯.৭ স্কোর নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর। এরপরই আছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড (স্কোর ৮৩.৯) এবং অস্ট্রেলিয়া (স্কোর ৮২.৪)। তালিকায় শ্রীলঙ্কা ১৩১, নেপাল ১৫৭, যুক্তরাজ্য ৭, যুক্তরাষ্ট্র ২০তম অবস্থানে আছে। তালিকায় সর্বশেষ অবস্থানে উত্তর কোরিয়া। দেশটির অবস্থান ও স্কোর যথাক্রমে ১৭৮ এবং ৫.২।
দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশন জানায়, গত দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে ধীর অথচ স্থির প্রকৃতিতে সামনের দিকে এগিয়েছে। এ বছরের সূচকে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশেরই স্কোর কমেছে। জিডিপির হিসেবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ক্রয় ক্ষমতার বিবেচনায় ৩৩তম। আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লড়াইটা জারি আছে। আর পেছনে টানার নানা উপাদান সক্রিয় থাকলেও তা পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর ধারণা করা হয়, ২০৩০ সালে ভারত ও চীনের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৬তম অর্থনীতির দেশ।
১৯৭১ সালের পর এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলারের কাছাকাছি। এখন তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। শুধু মাথাপিছু আয় নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সপ্তাহেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, একটি জনবহুল ও নি¤œ আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দারিদ্র্য দূর এবং বৈষম্য কমানোকে সংযুক্ত করেছে, তা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন উদাহরণ দেওয়ার মতো একটি দেশ। আবার আরেকটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক একটি টেবিল উপস্থাপন করে দেখিয়েছে, প্রধান ১২টি সূচকের মধ্যে ১০টিতেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং অন্য নি¤œ আয়ের দেশের তুলনায় এগিয়ে গেছে বা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্জন :অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ - যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।
কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনকৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এছাড়া এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত। বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লাখেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। যেকোনো দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধরা হয় মানবসম্পদ উন্নয়ন। এক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের ‘মানব উন্নয়ন সূচক, ২০২০’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে ৫২তম। সেখানে পাকিস্তান ৪১ পয়েন্ট নিয়ে ৩১তম স্থানে আছে। ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে ভারত ৫৯তম স্থানে থেকে অবশ্য এ সূচকে এগিয়ে আছে।
আর্থিক ও সামাজিক সূচকে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আরও কিছু সূচকের তুলনা করলে দেখা যায় আসলেই বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে সমৃদ্ধি পথে। শিশু মৃত্যুহার রোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবাক করার মতো উন্নতি করেছে। একটা সময় ছিল যখন দেশে চিকিৎসার অভাবে কিংবা জনসচেতনতার অভাবে শিশু মৃত্যুহার ছিল অত্যধিক। আর এখন তা ভারত-পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। ভারতে প্রতি ১০০০ জনে ৩০, পাকিস্তানে ৫৮ ও বাংলাদেশে ২২ জন শিশু মৃত্যুহার। শিক্ষার হারের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এখন শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। পাকিস্তানের ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। শিক্ষার হারে অবশ্য বাংলাদেশ ভারতের থেকে পিছিয়ে। ভারতের শিক্ষার হার ৭৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে। যেখানে বাংলাদেশের রেটিং ৪ দশমিক ১, ভারতের ৫ দশমিক ৭ এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের ৯ দশমিক ৭। জন্মনিয়ন্ত্রণ হারে বাংলাদেশ শীর্ষে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সূচক (২ দশমিক ০), ভারতের (২ দশমিক ২) এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের (৩ দশমিক ৫)। গড় আয়ুর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩, ভারতের ৬৯ দশমিক ৪ এবং পাকিস্তানের ৬৭ দশমিক ১ বছর। গ্রোস সেভিংস জিডিপির ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশটির নাম বাংলাদেশ ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর রয়েছে ভারত ৩১ দশমিক ১ শতাংশ এবং সবার শেষে পাকিস্তান ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা নাগরিকের এক্ষেত্রে তিন দেশের পরিস্থিতিতে খুব একটা বড় পার্থক্য নেই। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা নাগরিক ভারতে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে সমান ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। তিনটি দেশের মধ্যে এখনও কেউই শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে পারেনি। তবে এক্ষেত্রে ভারত চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে। ভারত ৯৫ দশমিক ২ শতাংশ, বাংলাদেশ ৯৯ শতাংশ ও পাকিস্তান ৭১ দশমিক ১ শতাংশ।
করোনা মহামারি আঘাত হানার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় হয়েছিল ৪০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ওই বছরের রফতানি আয় ছিল মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার আর ভারতের রফতানি আয় ৩১৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে, পাকিস্তানের মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলার আর ভারতের ৩৩০ বিলিয়ন ডলার। মুদ্রার বৈদেশিক বিনিময় হারে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের মুদ্রা ৮৫ টাকায় এখন ১ ডলার পাওয়া যায় আর ওই ১ ডলার পেতে এখন পাকিস্তানে ১৫৮ রুপি লাগে।
উন্নত দেশ হতে কাজ চলছে ১০ মেগা প্রকল্পের :উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে এখন বাংলাদেশ। নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ। এরপর মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ। এখন বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে উন্নত দেশ হওয়ার। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের মহাসড়কে নিতে কাজ চলছে ১০টি মেগা প্রকল্পের।
পদ্মা সেতু প্রকল্প :সরকারের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করতে এ প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এটি এখন দৃশ্যমান স্বপ্নময় প্রকল্প। পদ্মা সেতু এখন পুরো দৃশ্যমান। আগামী জুনে উদ্ধোধন করা হবে পদ্মা সেতু।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র :দেশের সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প এটি। বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র :বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে এর কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র :জাপান সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ ১ দশমিক ১-এর পাওয়ার প্লান্ট এবং ওপার্ট ফ্যাসিলিটিজের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্যাকেজ ১ দশমিক ২-এর আওতায় প্লান্ট এবং পোর্ট ফ্যাসিলিটিজের কাজ এখন পর্যন্ত ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প :জাপান সরকারের অর্থায়নে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রকল্পটির শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০১২ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু হয়। শেষ হবে ২০২৪ সালে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ :প্রকল্পটি বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির ১০ম সভায় গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটিও যুক্ত করা হয়।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ :পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পকে ১৯টি কম্পোন্যান্টে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি কম্পোন্যান্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে, ৬টি কম্পোন্যান্ট পিপিপির মাধ্যমে এবং ৬টি কম্পোন্যান্ট জি-টু-জি পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ :চীন সরকারের অর্থায়নে জি-টু-জি পদ্ধতিতে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের শুরু থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প : এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১০ সালের জুলাই থেকে কাজ শুরু হয়েছে। মেয়াদ নির্ধারণ করা আছে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত।
কর্ণফুলী টানেল :এছাড়া চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প দুটির মোট নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। সড়ক ও সেতু বিভাগ কর্ণফুলীর মোহনায় (বঙ্গোপসাগর ও নদীর মিলনস্থল) ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণ করছে। কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীর তথা আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা টানেলের মাধ্যমে মূল নগরের সঙ্গে যুক্ত হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম চালু হল ই-পাসপোর্ট। ৪০০ মেগাওয়াট থেকে ২৩ হাজার মেঘাওয়াটে উন্নীত হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। স্বাধীনতার পর সারা দেশে পাকা সড়ক ছিল তিন হাজার ৬১০ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ২১ হাজার ৫৯৬ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। ২২ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে শিক্ষার হার। ১৯৭১ সালে ১০ হাজার ৪৯০ জন মানুষের জন্য একজন রেজিস্টার চিকিৎসক ছিল। বর্তমানে দুই হাজার ৫৮১ জনে একজন চিকিৎসক। যদিও চিকিৎসার এই অর্জন যথেষ্ট নয়। কিন্তু রয়েছে বিশাল সম্ভাবনার হাতছানি। এগিয়ে গেছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব সূচকে। বাংলাদেশের এ উন্নয়ন দেখতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, শুধু বলার জন্য নয়, দারিদ্র্য বিমোচনে সত্যিই আজ বিশ্বে রোল মডেল।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ দেশের সার্বিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাংলাদেশকে এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতি দেশের অগ্রগতির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নিম্নআয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার বেড়েছে। ১৯৮০ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের কাছাকাছি।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ে দেশ হতে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার মানুষের দেশের জন্য কাজ করছে। আজ বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্য বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নে অপল্পনীয়ভাবে দেশ এগিয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি ভালোভাবেই এগোচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঠিক জায়গায় রয়েছে। ২০২৫ সালের আগেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে। অর্থনীতির সব সূচকেই এগোবে বাংলাদেশ।