দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে লালমনিরহাট জেলায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে ৩০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় লালমনিরহাটের হাড়িভাঙ্গা দরগারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৩০০ শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
এ সময় অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ফেরদৌসী বেগম বিউটি, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামানসহ, তাকবীর হোসাইন মান্না, শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন প্রমুখ।
কম্বল পেয়ে ৭০ বছরের কামিজুন্নেছা বেগম বলেন, ‘আমি বিধুবা মানুষ, আমার কেউ নেই, একা একাই কাই, একা একাই চলি, এখন এটা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে পারুম।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার শীতার্ত মানুষের মধ্যে ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেল ৩টায় লালমনিরহাটের কে ইউ পি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শীতার্ত মানুষের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে ইউএনও আব্দুল মান্নান বলেন, সরকারের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ঠিক সেইভাবে যদি দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘব করতে বেশি দিন লাগবে না। বসুন্ধরা গ্রুপকে কালীগঞ্জ উপজেলার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দা আছমা বেগম। স্বামী গত হয়েছেন প্রায় ১০ বছর। নেই কোনো সন্তানও। বাধ্য হয়ে থাকতে হয় ননদের আশ্রয়ে। ৬৫ বছর বয়সের টানতে হয় জীবিকার ঘানি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনমতে দিন গুজরান করেন। জগতের কঠিন বাস্তবতায় খাবি খাওয়া আছমা এই শীতে শীতবস্ত্রের অভাবে দারুণ কষ্টে ছিলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের কম্বল পেয়ে আবেগে অশ্রু ঝরে আছমা বেগমের চোখে। আছমা বলেন, 'খ্যাতা নাই, বিছনা নাই, ঘর নাই। হামার কষ্টের শ্যাষ নাই। যে জার পচ্ছে, খুব কষ্ট করি থাকি। কম্বলটা দিয়া হামরা একনা আরামে নিন্দ পাইরব্যার পামো।’
আছমা বেগমের মতো অসহায় দাসিয়ারছড়ার চন্দ্রখানা গ্রামের বৃদ্ধা মর্জিনা। বলেন, ‘দুখ্যান ছেঁড়া খ্যাতা দিয়া জার যায় না। কম্বলটা পায়া হামার খুব উপকার হইল।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সহযোগিতায় সোমবার কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় সোমবার ৪০০ শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। একই দিনে রাঙামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ধরলা নদীর বিভিন্ন চরের ৪০০ অতি দরিদ্র, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে কম্বল প্রদান করা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে। দূর দূরান্ত থেকে লাঠিতে ভর দিয়ে অনেক বয়োবৃদ্ধ শীতার্ত মানুষকে ছুটে আসতে দেখা যায়।
'এই জারত কম্বল খ্যান পায়া খুব উপকার হইল বাবা। কয়দিন থাকি জারত হাত পা হিয়াল হয়া আইসে। এখন একনা শান্তিত ঘুমবার পামো। যায় হামাক কম্বল দিছে আল্লাহ তাক যুগ যুগ ধরি বাঁচে রাখুক।’
কম্বল পেয়ে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাঠক শিকড় গ্রামের সত্তরোর্ধ মোফাজ্জল হোসেন এভাবেই তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।চোখে দেখতে না পারায় স্ত্রীর সহযোগিতায় কম্বল নিতে এসেছিলেন দাদন গ্রামের আমির উদ্দিন(৮৫)। কম্বল হাতে পেয়ে তিনি বলেন, 'মোর ছইল পইল নাই বাবা। এই জারত কম্বল দিয়ে তোমরা মোর বেটার কাম করলেন।'
সোমবার দুপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সহযোগিতায় পীরগাছার কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ৩০০ শীতার্তের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
কম্বল বিতরণে অংশ নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ মো. মাহবুবার রহমান বলেন, হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার জন্য পীরগাছা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
শুভসংঘের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ শুভসংঘের মাধ্যমে করোনাকালে হতদরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। এখন শীতার্তদের মাঝে কম্বল দিচ্ছে। এতে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছে।