প্রকাশ: সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৪০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে পরাজিত হয়েছে নৌকা। এর মধ্যে নয়টিতেই জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অভিযোগ উঠেছে, নড়াইল- ১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির আশীর্বাদপুষ্টরা নৌকাকে পরাজিত করেছেন। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে ১৩ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হারুনার রসিদ ও সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপদ ঘোষ। লিখিত অভিযোগে তাঁরা বলেন, নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করিয়েছেন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আচরণ বিধি অমান্য করে নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য এলাকায় অবস্থান করে প্রশাসনের পরোক্ষ সহযোগিতায় নৌকাকে হারিয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, কেবল ইউপি নির্বাচন নয়, কালিয়া পৌরসভা নির্বাচনেও তিনি নৌকার বিরোধীতা করেছেন। স্থানীয় এমপির এ ধরণের কার্যক্রমে ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিনদিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিএনপি-জামাতর সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হুমকি দিয়ে আসছেন। এতে করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরা জীবন শঙ্কায় দিন পার করছেন। এ অবস্থায় কালিয়া আওয়ামী লীগকে ‘ভাই লীগ’ থেকে বাঁচাতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়া কালিয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এতে করে মনোনয়ন বঞ্চিত হন এমপি অনুসারী প্রার্থীরা। অভিযোগ আছে, এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা ও নিজের বলয় নিয়ন্ত্রণে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করান স্থানীয় এমপি কবিরুল হক।
তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলেন, নিজের পছন্দের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এমপি মুক্তি বিশ্বাস। তিনি সরাসরি নৌকার বিরোধিতা করে স্থানীয় প্রশাসনকে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাধ্য করায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের ভরাভুবি হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিজয় নিশ্চিত করে এমপি ঘরে ফিরলেও প্রকারান্তে বঙ্গবন্ধুর নৌকাকে পরাজিত হতে হয়।
কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের স্থানীয় এমপি ইউপি নির্বাচনে সকল বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাঁড় করিয়েছেন। নির্বাচন পর্যন্ত তিনি এলাকায় অবস্থান করেছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ কর্মীদের হুমকি দিয়ে বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করিয়েছেন। তিনি বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন, যার কারণে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে এমপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নিকট আবেদন জানিয়েছি।
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন খান নিলু বলেন,কবিরুল হক মুক্তি বারবার দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা নিশ্চিত হয়েছি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশকে অমান্য করে নৌকার প্রার্থীকে হারাতে সংসদ সদেস্য হয়ে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তার পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। ১২ টি ইউনিয়নের ১০টিতে নৌকা পরাজয়ের কারণ আমাদেরই দলের সংসদ। কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের চিঠি পেয়েছি আজ। নৌকা বিরোধী এই এমপি’র বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির একাধিক নাম্বারে কল ও এসএমএস করেও তাকে পাওয়া যায়নি।