বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আলোচনা সভা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শামীম ওসমান এমপি, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ভাস্কর রাশা, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র একে ফায়েজুল হক রাজু ও মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুর রহমান সোহেল। আলোচনা সভার শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করার পর বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভার বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি বলেন, "বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদেরকে সম্মান দেয়া আমাদের দায়িত্ব। বর্তমান সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অনেক সম্মানিত করেছেন।"
শামীম ওসমান এমপি বলেন, "বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যারাই ষড়যন্ত্র করবে তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারা যেকোন মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অনেক গর্বিত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের পিতারা মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিল। সেই পতাকা আবারও খামচে ধরতে চায় একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের দোসররা। এদেরকে রুখে দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।"
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, "বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তান মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পতাকা আইন লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর অপরাধে অনতিবিলম্বে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডসহ পাকিস্তানকে বাংলাদেশের জনগণের নিকট আনুষ্ঠানিক ভাবে ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় পাকিস্তানের সাথে সকল ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে। একাত্তরে গণহত্যার মূলহোতা জেনারেল নিয়াজির ভাতিজা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছেন। তাকে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে আসতে দিবো না।"
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "মুজিববাদ প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিটি কর্মী প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারাই ষড়যন্ত্র করবে তাদেরকে কঠোর ভাবে প্রতিহত করা হবে। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধিত করতে পেরে আমরা অনেক গর্বিত।"
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ২০১৮ সালে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। এদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যেয়ে শাহবাগে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের জন্ম হয়েছিল। গৌরব, সংগ্রাম ও অগ্রযাত্রার ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সমগ্র দেশে একযোগে উদযাপন করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আহবান, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার চলমান লড়াই-সংগ্রামের ধারা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"