জলদস্যু অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত উপকূলীয় জেলা বরগুনার পাথরঘাটায় র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সাগরে মাছধরারত জেলেরা।
পাথরঘাটায় র্যাবের ডিজির সফর কালে তারা এ দাবি করেন।
মৎস্যজীবীরা, বার বার ক্যাম্প দেওয়ার ঘোষণা দিলেও, তা এখনো দেওয়া হয়নি। জলদস্যু দমন, জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সুন্দরবন ও পাথরঘাটায় দুটি স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন, জলদস্যুদের গুলিতে নিহত জেলেদের পুনর্বাসনের দাবি করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ডিজির কাছে।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছেন র্যাবের ডিজি। তার আগে ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় পাথরঘাটায় এসেছেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বরগুনা জেলার প্রায় শতভাগ মানুষ মৎস্য পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাগরে মাছ শিকারের সময় একে তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে জীবন বাজি রেখে মাছ ধরেন তারা, এর মধ্যে জলদস্যুরা হামলা করে সব লুটে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অনেক জেলেকে নির্মম নির্যাতন করে গুলি করে, পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পাথরঘাটায় র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প হলে এবং সুন্দরবনসহ বঙ্গোপসাগরে নিয়মিত টহল দিলে জলদস্যুরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
ট্রলার মালিক আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, একটা সময় ছিল, পাথরঘাটার একটি গ্রামের প্রতি ঘরে জলদস্যু ছিল, এক সময় এক গ্রাম থেকে সাতজন জলদস্যু বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এতে জলদস্যুতা নির্মূল হলেও জলদস্যুদের লিডাররা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ওইসব লিডারদের চিহ্নিত করলে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, সাগর, সুন্দরবনের সম্পদ টিকিয়ে রাখতে হলে এবং জেলেদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুন্দরবন ও পাথরঘাটায় দুটি ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। এর আগে জলদস্যুদের হাতে নিহত জেলেদের স্বজনদের স্থায়ী পুনর্বাসন করার জন্য র্যাবের কাছে দাবি জানাবেন তারা।
এদিকে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা এবং দস্যুতা নির্মূল করতে এ অঞ্চলের স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে মতবিনিময় করবে বাহিনীটি।
র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। এবার বরগুনা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে দস্যুতা বন্ধে অভিযান শুরু করেছে র্যাব। পাশাপাশি জলদস্যুদের আত্মসমর্পণেরও সুযোগ দেওয়া হবে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি আমরা দেখছি, সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ার পর কিছু জলদস্যু পালিয়ে এসে বরিশাল, বরগুনা, পাথরঘাটা এলাকায় দস্যুতা করছে। তাদের মাধ্যমে কেউ ভুক্তভোগী হলে র্যাবকে জানানো আহ্বান করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে আমরা কাজ শুরু করেছি। এর আগে সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জেলেদের অপহরণ সংক্রান্ত মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে ইলিয়াস হোসেন মৃধা নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইলিয়াস নারায়ণগঞ্জে বসে এক দস্যু নেতার মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থ সংগ্রহ করতেন।
সাগর ও সুন্দরবনকেন্দ্রিক জলদস্যু দমনে তিন বছর আগে ওই এলাকায় র্যাব বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল। সে সময় জলদস্যুদের উৎপাত অনেকখানি কমে গিয়েছিল। কিন্তু ইদানিং তাদের দৌরাত্ম ফের বৃদ্ধি পেয়েছে।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন বলেন, জলদস্যুতা তো গত কয়েক বছর ছিল না, তবে সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে। সরকার জলদস্যুদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে আমিও একমত, র্যাবের ঘাঁটি হোক। তবে যেহেতু জলদস্যুরা ভাসমান হয়ে সাগরে দস্যুতা করে ঠিক তেমনি তাদের নির্মূলের জন্য সাগরে র্যাবেরও ভাসমান ঘাঁটি থাকা উচিত। সরকারের কাছে আমিও আবেদন জানাব।