প্রকাশ: রোববার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:১২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ রাজনৈতিক শিষ্টাচার বক্তব্য প্রদান করেন নাহিদ রেইন্সের টক শো তে।
তবে অনুষ্ঠান শেষে ভিডিওটি ডিলিট করে দিয়ে নিজ ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে দর্শকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নাহিদ রেইন্স। সেই সঙ্গে বিষয়টির জন্য পরবর্তীতে প্রতিমন্ত্রীকে তার বক্তব্যের জন্য দুঃখিত বলে একটি ভিডিও বার্তা প্রদানের অনুরোধও জানান এই সঞ্চালক। কিন্তু সেটি প্রেরণ করেননি সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী। যখন ৬ ডিসেম্বর থেকে সকল গণমাধ্যম, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের মূল আলোচনার কেন্দ্রে তখন জামায়াত শিবির পরিচালিত বাঁশেরকেল্লা পেজ থেকে বারবার প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু কেনো? তবে কী নাহিদ রেইন্সের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা রয়েছে?
২০১৯ সালের শেষ ভাগ এবং ২০২০ সালে শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সক্রিয় নাহিদ রেইন্স। এর দুই বছর আগ থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব অবস্থান নেয় কনক সারোয়ার এবং ইলিয়াস হোসেন। কনকন সারোয়ার ও ইলিয়াস হোসেন যখন সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে আওয়ামী লীগ পরিচালিত সরকারের সমালোচনা করে তখন তাকে অনেকেই সাধুবাদ জানায়। কিন্তু নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া এই দুই সাংবাদিক যখন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সম্প্রচার করতে শুরু করে তখন দেশের অভ্যন্তরের টকশো গুলোতে তাদের নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। এ সময় অনেক আলোচকই আশাবাদ ব্যক্ত করেন দেশের পক্ষ হয়ে তরুণরা এর জবাব দেবে। কনক সারোয়ার এবং ইলিয়াস হোসেনের মতই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস বিকৃতির নতুন এক এজেন্ডা নিয়ে যখন অনলাইনে 'নেত্র নিউজ' নিয়ে কাজ শুরু করেন ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান ও তাসনিম খলিল, তখন থেকেই দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান নেয় বেশ কিছু তরুণ। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন নাহিদ রেইন্স।
নাহিদ রেইন্স সাংবাদিক নয় এবং তিনি কখনও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান থেকে নিজের বক্তব্যকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেননি, বরং বরাবরই তিনি বলে এসেছেন, 'আমি বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলি।' অর্থাৎ বাংলাদেশ ও রাষ্ট্র বিরোধী যেকোন বক্তব্যকে প্রতিহত করার জন্য 'স্ট্যান্ড অ্যালন' শো করেন বলে দাবি খোদ নাহিদ রেইন্সের। সম্প্রতি সময়ে তাসনিম খলিলদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের তীব্র প্রতিবাদ করেন নাহিদ রেইন্স যার প্রেক্ষিতে তাসনিম খলিলও তার বিরুদ্ধে একাধিকবার কথা বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অন্যদিকে কনক সারোয়ারের বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিপক্ষে বা সাংবাদিকতার শিষ্টাচার না মেনে পক্ষপাত দুষ্ট হয়ে ইলিয়াস হোসেনের প্রচারণা নিয়েও তীব্র প্রতিবাদ জানান নাহিদ। ফলে একজন তরুণ হিসেবে বরাবরই জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের তোপের মুখে ছিলেন তিনি।
সর্বশেষ সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের সঙ্গে একটি অনলাইন আলোচনায় যুক্ত হন নাহিদ রেইন্স যা নিয়ে সমালোচনার জন্ম। নাহিদ রেইন্স ব্যক্তিগতভাবেও ভিডিও প্রকাশ করে একাধিকবার ক্ষমা চেয়েছেন এবং ডা. মুরাদের বক্তব্যের জন্য তাকেও দুঃখিত বলার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু ডা. মুরাদ তা করেননি। শেষ পর্যন্ত ডা. মুরাদকে তার পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে এবং সামনে দল থেকেও বহিষ্কার হতে যাচ্ছেন তিনি, বিষয়টি বেশ অনুমেয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশের মানুষ যখন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত তখন জামায়াত-শিবির পরিচালিত বাঁশেরকেল্লা ফেসবুক পেজ ডা. মুরাদের বদলে বেশি প্রচারণা করছে নাহিদকে নিয়ে। তাসনিম খলিল থেকে শুরু করে প্রত্যেকের আক্রমণের কেন্দ্রে নাহিদ। তথ্যমন্ত্রী বক্তব্যের থেকেই এই অনলাইন শো আয়োজনের জন্য বেশি দোষ প্রদান করা হচ্ছে নাহিদকে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, নাহিদ রেইন্সকে প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করেই এই আলোচনাকে উজ্জীবিত করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নাহিদ রেইন্স বলেন, আমি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে কথা বলি। আর আমার মত সাধারণ একজন মানুষের সামনে যখন তথ্যমন্ত্রী থাকে, তখন হঠাৎ করে তাকি থামিয়ে দেয়ার মত মানসিক অবস্থা আমার মত হয়ত অনেকেরই তৈরি হবে না। কিন্তু অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার পর আমি আবারো তার বক্তব্যগুলো শুনি এবং ভিডিওটি ডিলিট করে দেই। তাকে একাধিকবার অনুরোধ করেছিলাম দর্শকদের উদ্দেশ্যে 'এমন বক্তব্যের জন্য দুঃখিত' জানিয়ে একটি বার্তা দিতে। কিন্তু তিনি কোনভাবেই রাজি হননি। এরপর আমিই সরাসরি দর্শকদের কাছে এসে দুঃখ প্রকাশ করি। এখন আমার বিরুদ্ধে যেই অপপ্রচার চলছে তার মূল কারণ দেশের পক্ষে আমার অবস্থান। দীর্ঘদিন যাবত দেশের হয়ে লড়াই করার ফলে বাংলাদেশ বিরোধীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা উসুলের চেষ্টা করা হচ্ছে আমার ক্ষতি করার মাধ্যমে।
ভোরের পাতা/কে