প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৩৭ পিএম আপডেট: ০৯.১২.২০২১ ৪:১৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করার আগে নিজেদের ‘অসসতা’ দূর করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ব্যবস্থা নিতে বলেছেন রাষ্ট্রপ্রতি মো. আবদুল হামিদ।
‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার অডিটোরিয়ামে এক আলোচনাসভা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তা হলেই সমাজে এই দুর্নীতি হ্রাস পাবে। তিনি দুদকের সকল পর্যায়ের কর্মীদের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা প্রদর্শন করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মানুষের চাহিদার সীমা থাকে কিন্তু লোভ সীমাহীন। দুর্নীতি এমন একটি বিষয় প্রাচীনকাল থেকে যা সমাজে প্রচলিত। পৃথিবীর কোনো দেশ এর প্রভাব থেকে সম্পর্ণ মুক্ত নয়। সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বোপরি প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কোনো মানুষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে জন্মগ্রহন করে না; পারিবারিক, সামাজিক ও আশেপাশের পরিবেশই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ঘর থেকেই শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি হ্রাস পাবে। দুদকের মামলা দায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে মামলায় সাজার হারও বেড়েছে। দুদকের হটলাইন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। ফলে জনগণ এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ ও সততা স্টোর এক অভিনব উদ্যোগ। শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে অধিকতর নীতিবান হয়ে উঠবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি সমাজে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে সহায়তা করবে। এছাড়া দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।
নিরপেক্ষতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্নীতি দমন কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দুর করতে হবে। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করবে তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না জনমনে এই ধারণা সৃষ্টি করতে হবে। আর এটা করতে পারলেই দুদকের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে। দুদক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যার ফলে কর্মীরা মামলা, অনুসন্ধান ও তদন্তে আরও দক্ষ হবে।
দুর্নীতিবাজদের কৌশল বদলেছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে হলে দুদককে আরও কৌশলী ও প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আগামী দিনগুলোতে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেজন্য দুদককে নিজেদের ঘর থেকে অভিযান শুরু করতে হবে। দুদকের ভাবমূর্তি যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়া যাবে না।
ভোরের পাতা/কে